রাঙামাটি জেলাকে বলা হয় রূপ বৈচিত্র্যের শহর। কাপ্তাই পাহাড়ি এ জেলার একটি উপজেলা।
উপজেলাটির কয়েকটি এলাকা আছে যেগুলো বেশ দুর্গম এবং গহীন অরণ্যে ভরা। এ গহীন অরণ্যকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে জীববৈচিত্র্যের বসবাস।
উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নটি এমন একটি এলাকা, যে এলাকাটিকে বলা হয় জীববৈচিত্র্যের শহর। এ এলাকাটি প্রধানত বন্য হাতির অভয়াশ্রম হিসেবে বেশ পরিচিতি। এছাড়া বন মোরগ, অজগর, গুইসাপ, ময়না, টিয়া, হরিণ, গয়ালসহ অসংখ্য প্রাণীর বসবাস পুরো এলাকার বন জুড়ে।লোকালয়ে হাতির দলের হানা,
বর্তমানে ওই ইউনিয়নটির দুর্গম এলাকায় বন-জঙ্গল দখল করে হাজার খানেক পাহাড়ি জনগণ বসবাস করছেন। তারা নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করতে বন থেকে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ এবং পাহাড় ন্যাড়া করে জুম চাষ করছেন। যে কারণে অন্যান্য বন্য প্রাণী বন থেকে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। হাতি মূলত ছোট গাছপালা, গুল্ম, ফল, ডালপালা, গাছের বাকল এবং মূল খেয়ে থাকে। কিন্তু জনবসতি ও জুম চাষের ফলে ওই এলাকা থেকে এসব গাছপালা কেটে ফেলা হয়েছে। ফলে খাবারের অভাব দেখা দিয়েছে হাতিসহ অন্যান্য প্রাণীর। খাবারের সন্ধানে হাতি এবার ওই এলাকায় বসবাসকারী মানুষের বাড়িতে হানা দিতে শুরু করেছে। প্রতি বছর কোনো না কোনো সময় হাতির আক্রমণে মানুষ মারা যাচ্ছেন। অনেক সময় মানুষের আক্রমণে হাতি মারা যাচ্ছে।
ওই এলাকায় বসবাসকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৯ সালের মার্চ এবং এপ্রিলে ২ মাসের ব্যবধানে জুম ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে বন্য হাতির আক্রমণে ডংনালা, পশ্চিম কোদালা এবং খন্ডাকাটা এলাকার বাসিন্দা জসাই মারমা, আব্দুল মান্নান এবং দিল মোহাম্মদ মারা গেছেন। একই বছর ডংনালার রেমংপ্রু মারমা, পূর্ব কোদালা মংসুইচিং মারমা এবং খন্ডাকাটার মো. নাছির উদ্দীন বন্য হাতির আক্রমণে গুরুতর আহত হন। চলতি বছরে ডংনালার বাসিন্দা আবুমং মারমা এবং পাইথুইঅং মারমা হাতির আক্রমণে গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে শয্যাশায়ী।
ডংনালা গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য সুইসপ্রু মারমা বলেন, বন মন্ত্রণালয়ের বনবিভাগে গেজেট অনুযায়ী হাতির আক্রমণে কারো মৃত্যু হলে তার পরিবারকে এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং আহত হলে তাকে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবার যথাযথ কাগজপত্র দাখিল করে সাহায্যর জন্য আবেদন করেও দীর্ঘ এক বছরে কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি।
রাইখালী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এনামুল হক বাংলানিউজকে বলেন, আমার ইউনিয়নের ডংনালা, পূর্ব কোদালা ও খন্ডাকাটা এলাকায় প্রায়ই বন্যহাতির দল দিনে-রাতে হানা দিয়ে মানুষের জান-মালের ক্ষতি করে আসছে। বছরের পর বছর হাতির আক্রমণে মারা যাচ্ছেন অসংখ্য লোক।
এরই মধ্যে কাপ্তাই উপজেলা প্রশাসন এবং ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে নিহত এক পরিবার এবং আহত দু’জনকে টেউটিন এবং নগদ অর্থ সহায়তা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বন বিভাগের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
কাপ্তাই পাল্পউড বাগান বিভাগের সদর রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম জানান, সংরক্ষিত সরকারি বনাঞ্চলে হাতির অভয়ারণ্য করলে হাতি কখনোও লোকালয়ে আসবে না এবং হাতি মানুষের ক্ষতি করবে না।
তিনি আরও জানান, শিগগিরই বন বিভাগের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে।
রাঙামাটি অঞ্চলের বন সংরক্ষক ছানাউল্যা পাটোয়ারি বলেন, মানুষ দিন দিন হাতির আবাসস্থলে বাড়ি-ঘর নির্মাণ করে তাদের চলাচলের পথে বাধা সৃষ্টি করছে। ফলে এসব প্রাণী হিংস্র হয়ে আক্রমণ চালাচ্ছে। তাই মানুষকে সচেতন হতে হবে এবং হাতির আবাসস্থলের পাশে ঘর-বাড়ি নির্মাণ থেকে বিরত থাকতে হবে। সেই সঙ্গে হাতির জন্য প্রাকৃতিক খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে হাতি-মানুষের সংঘর্ষ দূর হয়ে যাবে।