মোঃ রেজাউল করিম মৃধা:
নাটোরের লালপুর উপজেলার ঈশ্বরদী থেকে লালপুর হয়ে বাঘা ২০ কিলোমিটার ও লালপুরের ওয়ালিয়া পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার প্রধান পাকা সড়কটি দীর্ঘদিন থেকে সংস্কার না করায় প্রায় ৪০ কিঃ মিঃ পাকা সড়কের-কার্পেটিং উঠে গিয়ে বর্তমানে চলাচলের একেবারেই অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। প্রায় ১২ বছর ধরে সড়কটির এই বেহাল দশা থাকলেও রাস্তাটি সংস্কারের জন্য কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। ফলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সড়কটি দিয়ে চলাচলকারী পথচারী ও যানবাহন চালকরা। যার ফলে প্রতিনিয়ত ঘটেই চলেছে দূর্ঘটনা আর দুর্ঘটনা । “আর কতো দূঘটনা ঘটলে রাস্তা সংস্কার করা হবে ?” এমন প্রশ্ন রেখেছেন এলাকাবাসী সহ ঐ রাস্তায় চলাচল কারী পথচারীরা । অনেকে এমনও বলেছেন, লালপুরের উন্নয়নের ব্যাপারে সরকার কি অন্ধ ? নাকি লালপুর উপজেলার দায়িত্বরত কতৃপক্ষ ও জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের আখের গোছাতে ব্যাস্ত ? তাই এ রাস্তাটির দুর্ভোগের ব্যাপারে কারোরই যেন চোখেই পড়ছে না ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকদিনের লাগাতার বৃষ্টিতে রাস্তাজুড়ে সৃষ্ট অসংখ্য ছোট-বড় গর্তগুলোতে পানি জমে কাঁদায় লুটোপুটি খাচ্ছে । এতে চরম ভাবে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়ে উঠেছে। চলাচলের বিকল্প কোন পথ না থাকায় প্রয়োজনের তাগিদে খানাখন্দ ও কাঁদা-পানি মাড়িয়েই এ সড়কটি দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনার শিকার সহ চরম ভাবে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে চলাচল কারী পথচারীদেরকে । মাঝে মধ্যেই রাস্তায় বিকল হয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে একাধিক যানবাহন গুলোকে । এলাকার বাইরে থেকে আসা লোকজনদের বলতে দেখা যাচ্ছে লালপুরে কি এমপি বা জনপ্রতিনিধি বলে কিছু নেই নাকি?
জানা গেছে, ঈশ্বরদী থেকে লালপুর হয়ে বাঘা এবং লালপুর থেকে গোপালপুর হয়ে ওয়ালিয়া পর্যন্ত ৪০ কিঃমিঃ রাস্তার মধ্যে প্রায় ৩শতাধিক বড়-বড় খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও সড়কটির বিভিন্ন স্থানে পাকা সড়কের ওপরে ইটের হ্যারিং বোম তৈরি করা আছে। অনেক পথচারী বিরক্ত হয়ে স্নোগান দিচ্ছেন “এই সরকারের উন্নয়ন, পিঁচ ভেঙ্গে হেরিংবোম”। আবার কেউ কেউ বলছেন, লালপুর বাগাতিপাড়ার দায়িত্বহীন জনপ্রতিনিধিদের অবহেলার কারণে শেখ হাসিনা সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে । উল্লেখ্য এই সড়কটি দিয়ে লালপুরের জনগণদের লালপুর হতে ঈশ্বরদী, রাজশাহী,, নাটোর, বনপাড়া এবং রাজধানী ঢাকাতে যেতে হয় । লালপুরের একমাত্র শিল্পকারখানা নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস, লালপুর উপজেলা পরিষদ, লালপুর থানা, লালপুর স্বাস্থ্য কমম্পেক্স, লালপুর ফায়ার সার্ভিস, গোপালপুর পৌরসভা, লালপুর যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও লালপুর স্টেডিয়ামে যাতায়াত করতে হয়। সরকারি-বেসরকারি, কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ প্রতিদিন এই সড়কটি দিয়ে চলাচল করে থাকে। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে সড়কটির এই বেহাল দশা। তবে মাঝে-মাঝে সড়ক ও জনপথ বিভাগের গাড়ি এসে কিছু কিছু ভাঙা স্থানে ইট-বালি ও খোয়া দিয়ে যায়। তাতে দুর্ভোগ ও দূর্ঘটনা আরো বেড়ে যায়।
অটোচালক আবুল হোসেন সহ অনেকে বলেন, রাস্তটি সংস্কার হবে বলে দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় সড়কটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে । শুকনার সময় ধুলায় গা ভরে যায় আর বৃষ্টি আসলেই যেন কাঁদাপানিতে লুটোপুটি খেতে হয় । নতুন পুরাতন নেই এই রাস্তা দিয়ে গাড়ি চললেই খানা খন্দে পড়ে নষ্ট হয়ে যায়।
মিশুক চালক রহমান বলেন, নতুন গাড়ি নিয়ে এই রাস্তায় চলতে গিয়ে এক বছরের মধ্যে কয়েকবার দূর্ঘটনার শিকার হয়েছি ।
ট্রাক চালক আনছার আলী বলেন, কি করবো বলেন, ভালো এমপি না আসা পর্যন্ত এই রাস্তা কোনদিনই ভালো হবে না । তাই পেটের দায়ে
জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে আমাদের ।
মাইক্রোচালক ইকবাল চরম আক্ষেপ করে বলেন, আপনারা আর কতো দিন ধরে লিখবেন ? দীর্ঘ দিন ধরে তো এই রাস্তা সম্পর্কে লিখেছেন, কিন্তু আর কতো? আক্ষেপ করে বলেন আমাদের কপাল ভালো ১৫ বছর ধরে আমরা খুব ভালো ভালো এমপি পেয়েছি !
নাটোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ইউনুস আলী বলেন, বড় কোনো প্রকল্প না থাকায় রাস্তাটি এই মুহুর্তে সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না । তবে নাটোর জেলা সড়ক প্রকল্পের মধ্যে রাস্তাটির প্রকল্প দেয়া আছে পাশ হয়ে আসলেই রাস্তটির পূর্ণ সংস্কার করা হবে। তবে রাস্তাটি সচল রাখার জন্য মেইনটেইন্সের আওতায় কিছু কাজ করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
এব্যাপারে নাটোর -১ ( লালপুর – বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন , প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার চিঠি দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন সাড়া পাইনি। আশা করি খুব দ্রুত এব্যাপারে একটি সমাধান পাব।