সাবরেজিস্ট্রি অফিসের ১৯ লাখ ৭৪ হাজার ৪৪০ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। অফিসের পিয়ন মো. তরিকুল ইসলাম সোনালী ব্যাংক নড়াইল শাখা থেকে ওই টাকা তুলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে সদর থানায় মামলা করেছেন সাবরেজিস্টার মো. শাহজাহান মোল্লা।
জানা গেছে, সোনালী ব্যাংক নড়াইল শাখায় সদর সাব রেজিস্ট্রি কার্যালয়ের ২৫০৭২০২০০০৮৩০ নম্বরের একটি সঞ্চয়ী হিসাব আছে। হিসাবটি সাবরেজিস্টারের স্বাক্ষরে পরিচালিত হয়। ওই হিসাব থেকে অফিসের নকল নবীশ হিসেবে কর্মরত মোঃ শহিদুল ইসলাাম সোমবার (০২ নভেম্বর) ব্যাংকের হিসাব নম্বরের বিপরীতে লেনদেন সংক্রান্ত ব্যাংক স্টেটমেন্ট পর্যালোচনাকালে দেখা যায় যে, গত অক্টোবর মাসের এক তাারিখে উক্ত হিসাবের এসএ-২৫০৭৩২৪৭১৭৩ নং চেক এর মাধ্যমে ৯,৫২,২৪০/= টাকা শহীদুল ইসলাম বাহক হইয়া এবং গত ২৯ অক্টোবর এসএ-২৫০৭৩২৪৭১৭৯ নং চেক এর মাধ্যমে ১০,২২,২০০/= টাকা জুয়েল বাহক হইয়া উত্তোলন করেছেন।
চেক দুটির স্বাক্ষর নড়াইলের সাবরেজিষ্ট্রার মো: শাহজাহান মোল্যার নিজের বলে নিশ্চিত করেছেন সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার মো: আবু সেলিম।
এদিকে ব্যাংক ম্যানেজার চেক দু’টি উত্তোলনের সময়কার ব্যাংকের সিসিটিবি ফুটেজে দেখা যায়, জৈনক ব্যক্তি যার হাফ হাতা চেক গেঞ্জি এবং নীল রংয়ের প্যান্ট পরিহিত ব্যাংকের ক্যাশকাউন্টার হইতে ১৪:৩১ মিনিটে টাকা উত্তোলন করিয়া ১টি সাদা রংয়ের ব্যাগের ভিতরে লইয়া ব্যাংক হইতে বাহিরে যাইয়া ১৪:৩২ ঘটিকায় ব্যাংকের সামনে থাকা অফিসের পিয়ন মোঃ তরিকুল ইসলাম (৪০)কে সংঙ্গে লইয়া কিছুদুর আগাইয়া জেলা পরিষদ মার্কেট সংলগ্ন চায়ের দোকানের সামনে থেকে আগত ১টি মোটর সাইকেল যোগে নড়াইল-যশোর রোডের পশ্চিম দিকে চলিয়া যায়।
এজহারের সূত্রে জানা গেছে, সেমবার বিকাল ৫টার দিকে অফিস পিয়ন মোঃ তরিকুল ইসলাম রেজিস্ট্রি অফিসের প্রধান সহকারী, সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অফিস সহকারীর উপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সিসিটিবি ফুটেজ প্রদর্শন করলে অফিস পিয়ন তরিকুল ইসলাম স্বীকার করে সে গত ০১ নভেম্বর এবং ২৯ নভেম্বর অফিস হইতে চেক এর পাতা লইয়া উক্ত ব্যাংক হতে আমি ব্যাংকের বাহিরে থাকিয়া অন্য লোক মারফত টাকা উত্তোলন করেছে। এ সময় অফিস তরিকুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার সহযোগীদের নাম প্রকাশ করেন নি।
এ বিষয় সাব-রেজিষ্ট্রার মো: শাহজান মোল্যা জানান, তরিকুল ইসলামকে ১নং আসামী শ্রেনীভূক্ত করিয়া তদন্ত স্বাপেক্ষে সংশ্লিট সংগীয় দিংকে আসামী শ্রেণিভূক্ত করার জন্য জেলা রেজিস্ট্রারের সুপারিশকৃত প্রতেিবদন নড়াইল সদর থানায় এজহারভুক্ত করার জন্য পাঠানো হয়েছে।
মামলার এজাহারে শাহজাহান মোল্লা বলেন, গত সোমবার ওই হিসাবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই হিসাব থেতে ১৯ লাখ ৭৪ হাজার ৪৪০ টাকা তুলা নেওয়া হয়েছে। তখন ব্যাংকের সিসি ফুটেজ দেখে বুঝা যায় সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয়ের পিয়ন মো. তরিকুল ইসলাম এর সাথে জড়িত। তিনি ওই টাকা তুলে নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। সোমবার বিকেলে জেলা রেজিস্টার ও অফিসের অনেকের সামনেই তরিকুল টাকা তুলে নেওয়ার কথা স্বীকার করেন।
জেলা রেজিস্টার মো. আব্দুর রহিম বলেন, ‘তরিকুল আজ মঙ্গলবার অফিস করেনি। তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে থানায় এজাহার দেওয়া হয়েছে।’ তরিকুল ইসলামের মুঠোফোনে বারবার যোগযোগ করে বন্ধ পাওয়া গেছে।
ব্যবস্থাপক মো. আবু সেলিম বলেন, ‘স্বাক্ষরও মিলিয়ে দেখা গেছে দুই চেকের স্বাক্ষরই সাবরেজিস্টারের করা। আমার কাছে তিনি স্বীকারও করেছেন যে এটি তাঁর স্বাক্ষর।’সাবরেজিস্টার মো. শাহজাহান মোল্লা এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি সুকান্ত সাহা বলেন, ‘এটি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তালিকাভুক্ত অপরাধ। তাই থানায় জিডি করে দুদকে পাঠানো হচ্ছে।’
উল্লেখ্য, যশোর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের দায়ে দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম মোড়ল মামলাটি দায়ের করেন।
তরিকুল ইসলাম জেলার কালিয়া উপজেলার গাছবাড়িয়া গ্রামের শাহাদাৎ মুন্সির ছেলে। তার স্ত্রী নাসরিন বেগম পেশায় একজন গৃহিণী এবং তার স্বামীর আয়ের ওপর নির্ভরশীল।
দুদক সূত্র জানায়, বতর্মানে নড়াইল পৌরসভার ভাদুলীডাঙ্গায় তার স্ত্রী জমি ক্রয়সূত্রে মালিক হয়ে আলিশান বাড়ি করে সেখানে বসবাস করছেন।
তরিকুল ও তার স্ত্রী নাসরিন বেগম কর্তৃক পরস্পরের সহায়তায় ১৬ লাখ ৫২ হাজার ৪৩৩ টাকার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ অর্জন করে তা দুদকে গোপন করার অপরাধে তাদের দুজনের বিরুদ্ধে মামলটি দায়ের করা হয়।
দুদকের তদন্তকালে ২০১৭ সালের ১৬ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশন, যশোরের উপ-পরিচালকের মাধ্যমে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো সম্পদ বিবরণীতে তরিকুল ইসলাম তার নিজ নামে ১০ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ দেখান।