আসন্ন নড়াইল জেলার কালিয়া পৌরসভার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জমে উঠতে শুরু করেছে পৌর নির্বাচনী আমেজ। কালিয়ার পৌর এলাকার সর্বত্র বইছে নির্বাচনী হাওয়া। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে অফিস পাড়ায় চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। ইতিমধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশির সংখ্যা ১০ জন বলে জানা গেছে।
দলীয় সুত্রে জানা যায়, দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশিদের বায়োডাটা নড়াইল জেলা আওয়ামীলীগ কমিটির কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। চলছে যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়া। দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশিরা হলেন, ফকির মুশফিকুর রহমান লিটন (বর্তমান মেয়র), বিএম ইকরামুল হক টুকু (সাবেক মেয়র), বিএম ইমদাদুল হক টুলু (সাবেক মেয়র), মো: ওয়াহিদুজ্জামান হিরা (গত নির্বাচনে নৌকার পরাজিত প্রার্থী), শাহিদুল ইসলাম শাহী (সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার ও জেলা আ’লীগের সিনিয়র সহসভাপতি), ইঞ্জিনিয়ার মো: মিজানুর রহমান (শহীদ আব্দুস সালামের পুত্র), আনুর মোহাম্মদ আনু (উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারন সম্পাদক), আশীষ ভট্রাচার্য, (উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক), তাপস কুমার বিশ্বাস (প্রচার সম্পাদক উপজেলা আ’লীগ), বাবলু ঘোষ (১নং ওয়ার্ড কমিটির নির্বাচক মন্ডলীর সদস্য)।
অপরদিকে দলীয় সুত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) একক প্রার্থী হলেন, ওয়াহিদুজ্জামান মিলু (জেলা বিএনপির সহ সভাপতি)।
১৯৭৬ সালে কালিয়া পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠা কালীন পৌর চেয়ারম্যান ছিলেন বর্তমান নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তির পিতা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শহীদ এখলাস উদ্দীন আহম্মেদ। ওনার মৃত্যুর পরে প্রথম নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসাবে বিজয়ী হন বিএম ইকরামুল হক টুকু। বিএম ইকরামুল হক টুকু পরপর তিনবার পৌর চেয়ারম্যান হিসাবে দ্বায়িত্ব পালন করেন। বর্তমান সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি পরপর দুইবার পৌর চেয়ারম্যান হিসাবে দ্বায়িত্ব পালন করেন। বিএম ইমদাদুল হক টুলু একবার পৌর মেয়র হিসাবে দ্বায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে পৌর মেয়র হিসাবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন ফকির মুশফিকুর রহমান লিটন।
উপজেলা নিবাচন অফিস সুত্রে জানা যায়, ২৯ দশমিক ২২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের কালিয়া পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে জনসংখ্যা ২৯ হাজার ২৫৫ জন। পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ১৫ হাজার ২১৬ জন। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭ হাজার ৬১৬ জন, মহিলা ভোটার ৭ হাজার ৬০০ জন। ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে কালিয়া পৌরসভা তৃতীয় শ্রেনীর পৌরসভা থেকে দ্বিতীয় শ্রেনীতে উন্নীত হয়।
২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য কালিয়া পৌর নির্বাচনে মোট ৭ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দীতা করেন। তারা হলেন, আ’লীগ সমর্থিত নৌকার প্রার্থী মো: ওয়াহিদুজ্জামান হীরা তার প্রাপ্ত ভোট ছিল-১৭৫৪, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন এস এম ওয়াহিদুজ্জামান তার প্রাপ্ত ভোট ছিল-২৬১, হ্যাঙ্গার প্রতিকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম ইকরাম রেজা তার প্রাপ্ত ভোট ছিল-৯৮৭, নারিকেল গাছ প্রতিকের স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএম ইমদাদুল হক টুলু তার প্রাপ্ত ভোট ছিল-১৩৪৯, মোবাইল ফোন প্রতিকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো: লায়েক শেখ তার প্রাপ্ত ভোট ছিল-২৬৮, জগ প্রতিকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সোহেলী পারভিন নিরী তার প্রাপ্ত ভোট ছিল-৪৯৫, চামচ প্রতিকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফকির মুশফিকুর রহমান লিটন ৩,৮১২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন।
আসন্ন কালিয়া পৌরসভার ৯ম নির্বাচনের চলছে হিসাব নিকাশের পালা। কোন প্রার্থী কেমন তার চুলচেরা বিশ্লেষনে ব্যাস্ত পৌর ভোটাররা। চায়ের দোকান গুলিতে চলছে নির্বাচনী ঝড়। এবার হিসাব নিকাশ করে তাদের ভোটাধীকার প্রয়োগ করবেন বলে মন্তব্য করেেেছন অনেক ভোটার।
১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নতুন ভোটার খাদিজা খাতুন বলেন, এবার আমি নতুন ভোটার হয়েছি। আমি অনেক বুঝে শুনে আমার ভোট প্রয়োগ করবো। ভাল প্রার্থীকে আমি ভোট প্রদান করবো। যিনি পৌর এলাকার উন্নয়ন করবেন এমন মানুষকেই আমি আমার ভোট দিবো।
৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইকরাম হোসেন বলেন, যিনি আমাদের পৌরসভার উন্নয়ন করবেন তেমন মানুষকেই আমি আমার ভোট দিবো। আমি চাই আমাদের কালিয়া পৌরসভা একটি মডেল পৌরসভায় রুপান্তিত হোক।
৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বুলু শেখ বলেন, যিনি পৌর এলাকার উন্নয়ন করবেন এমন মানুষকেই আমি আমার ভোট দিবো। আমি চাই আমাদের কালিয়া পৌরসভা একটি মডেল পৌরসভায় রুপান্তিত হোক। দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই হিসাব নিকাশে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে সাধারন ভোটাররা।
দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা অনেকেই দলীয় মনোনয়ন লাভের আশায় ঢাকায় অবস্থান করছেন। দলীয় গ্রুপিং-লবিং নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। সকলের চোখ এখন দলীয় মনোনয়নের দিকে কে হবেন আগামীতে কালিয়া পৌর মেয়র এটা দেখার আশায় রয়েছেন পৌরসভার সাধারন ভোটাররা।