শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৮ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম:
বাংলাদেশের সকল সম্প্রদায়ের সাথে আমাদের সংযোগ বাড়াতে চাই-পার্বত্য উপদেষ্টা সকল টেলিভিশন চ্যানেল ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ‘জুলাই অনির্বাণ’-শীর্ষক ভিডিওচিত্র প্রচারের উদ্যোগ আ.লীগ নিজেরাই নিজেদের পতন ডেকে এনেছে : জামায়াত আমির ব্রেক ফেল হয়ে প্ল্যাটফর্ম থেকে ২ কিঃমিঃ দূরে গিয়ে থামলো ট্রেন গণমাধ্যমের অংশীজনের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে মতবিনিময় সভা আয়োজনসহ কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব নিলেন জনাব বাহারুল আলম নতুন সিইসি নাসির উদ্দীনের পরিচয় কালিগঞ্জে আছিয়া লুতফর প্রিপারেটরি স্কুলে মা সমাবেশ অনুষ্ঠিত সলেমান মামুন ব্যারিস্টার সুমন দুই দিনের রিমান্ডে ডিএমপির ৩৮তম পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন শেখ মোঃ সাজ্জাত আলী

প্রসঙ্গ- কবি, কাব্যালোচক ও সম্পাদক ‘তৌফিক জহুর’ : খৈয়াম কাদের

  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০.১৫ এএম
  • ৩১২ বার পঠিত

সময়ের সুবিদিত এবং বহুল আলোচিত সাহিত্যের ছোট কাগজ “উদ্যান”সম্পাদক জনাব তৌফিক জহুর নব্বই দশকের কাব্যজাতক।নব্বইয়ের উত্তাল কাব্য- তরঙ্গের ফেনিল পথে তাঁর শিল্পসৃষ্টির যাত্রা শুরু এবং এখানেই নির্মিত ও প্রদীপ্ত তাঁর উত্থান গতির শক্তিময় সড়ক পথ।সেই ধীমান কবি তৌফিক জহুরের আজ জন্মদিন।হৃদয়ের গহীন থেকে উদ্গত বিশুদ্ধ ভালবাসার গন্ধস্নাত কাব্যময় অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা কবি তৌফিক জহুরকে তাঁর এই শুভ জন্মক্ষণে।কবি তুমি সৃষ্টির পথে দৃপ্ত ও দীপ্তিমান হও, কবিতার ছন্দ-দ্যোতনা ও ধ্বনি-ব্যঞ্জনার শিল্পরসে ঋদ্ধ করো তোমার মানব জনম, বাংলা কবিতার সুদীর্ঘ পথে এঁকে দাও অমোচ্য জলচিহ্ন।

আগেই বলা হয়েছে কবিতার মহামণ্ডপে কবি তৌফিক জহুরের শুভাগমন বিংশ শতাব্দীর নব্বই দশকে।তাই তাঁর কবিতা সম্পর্কে দু’কথা বলার পূর্বে বাংলাকাব্যে নব্বই দশকের ভাবচারিত্র নিয়ে কিঞ্চিত আলোকপাতের প্রয়োজন অনুভব করছি।বলে রাখছি, বাংলা কবিতায় নব্বই দশক শনাক্তি সংক্রান্ত এই ভাবচিন্তন নিতান্তই আমার নিজস্ব।সুতরাং এক্ষেত্রে কোনো অসঙ্গতি দৃষ্ট হলে সে দায় কেবলি আমার।

আমার দৃষ্টিতে নব্বই দশকের রূপবৈচিত্রঃ
ত্রিশ দশকের আধুনিকতাকামী ইউরো মোহ, চল্লিশের মহাদেশীয় দ্বৈত-সত্তার মিলন-বিরোধের রাজনৈতিক ও দার্শনিক টানাপোড়েন,পঞ্চাশের বিভক্ত বোধ ও তার বিপরীতমুখি দুই নতুন উন্মাদনা,ষাটের দ্বিখণ্ডিত ভাষা চেতনা ও পূর্ববাংলার ধুমায়িত সংক্ষোভ,সত্তরের কষ্টার্জিত স্বাধীনতায় স্বপ্নভঙ্গের যাতনাদাহ এবং আশির রাজনৈতিক স্খলন ও তদোত্থিত দ্রোহলাভা–ইত্যাকার অস্থিরতা জারিত কাব্যকর্ষণ অন্তে সমাহিত স্থিরতা নিয়ে উপনীত হয় নব্বই দশক: যদিও এ দশকও বহুবিধ বিরোধ, বিসম্বাদ ও অস্থিরতায় জর্জরিত ছিল।তাসত্ত্বেও বলা যায়,সদর্থে এ দশকেই বাংলা কবিতা দৃষ্টি ফেরায় শিল্প-নন্দনের শুদ্ধতার দিকে।বহুমাত্রিক বোধ-চেতনা ও দর্শনের অন্বয়ে তা পরিগ্রহ করে এক সুপরিসর কলেবর।দৈশিক ও জাতিকতার স্বকীয় স্বরের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যায় বৈশ্বিক প্রভা।বিষয় ও চিন্তনের অভিনবত্বের পাশাপাশি ভাষা,আঙ্গিক ও ছন্দপ্রকরণসহ নন্দনরীতিতেও পরিদৃষ্ট হয় নব অবয়ব।বাংলা কাব্যে সংঘটিত হয় যুগান্তরের বাঁক এবং তা উণ্মিলিত হয়ে যায় নবাগত সহস্রাব্দের অবারিত দিগন্তপাড়ে। দ্বিতীয় সহস্রাব্দের শেষপাদ বিংশ শতাব্দীর এই সর্বশেষ দশকটি কালখণ্ড বিচারে দুই হাজার বছরের এক নিকেষযোগ্য পরিশিষ্ট এবং এই সহস্রাব্দের শুরু থেকে শেষ অব্দি ক্ষমতা ও মসনদ মোহের অসুস্থ জ্বরে বারবার আক্রান্ত হয়েছে পৃথিবী,রক্তাক্ত হয়েছে মানবতা।শক্তিধর পশ্চিম তছনছ করেছে তৃতীয় বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তর।আরোপিত আধুনিকতার নামে নিষ্পেষিত করেছে অসংখ্য জাতি গোষ্ঠী ও সংস্কৃতিকে।ঔপনিবেশিকতার নির্মম দাপটে একদিকে অধীন দেশ ও জাতিগুলির অস্তিত্বকে যেমন বিপন্ন করেছে,আরেকদিকে স্বাধীনতা প্রদানের অবগুণ্ঠনে ঠিক তেমনি পৃথিবীর বৈধ মানচিত্রকে করেছে বিকৃত ও খণ্ডবিখণ্ড । পরিবর্তিত বিশ্বের এইসব জটিল অভিজ্ঞতা সমকালকে দাঁড় করিয়েছে নানাধাচের প্রশ্ন ও প্রত্যাশার মুখোমুখি;আর এই নতুন পরিস্থিতিই বিশ্বমানসকে জাগ্রত করেছে আধুনিকতার পূণর্মূল্যায়নে যেখানে এসে জন্ম নিয়েছে উত্তর আধুনিক জীবনবীক্ষা। অপরাপর দেশ ও জাতি-গোষ্ঠীর মতো বাংলাদেশ ভূখণ্ডের জনমণ্ডলীও সম্পৃক্ত সেই নবতর বোধবীক্ষার সাথে। পশ্চিমাদের দৃষ্টিতে প্রবল তর্কাধীন এই উত্তর আধুনিকতার মূল প্রবণতা–ব্যাক টু ব্যাসিক;যদিও সঠিকার্থে তা ব্যাক টু ভ্যালুজ ও ব্যাক টু সেন্স এ্যাণ্ড শেল্ফ।কিন্তু স্মর্তব্য মৌলে প্রত্যাবর্তনের পাশ্চাত্য দর্শন থেকে প্রাচ্য ও আফ্রিকান দর্শন আমূল ভিন্ন; কারণ বিজেতা ও বিজিতের অভিধান সমার্থক নয়।এমনকি উত্তর আধুনিকতার গুণার্থক নবায়ন ধারাটি আমাদের এই উপমহাদেশের অভ্যন্তরেও অভিন্ন নয়।এরূপ নানামুখী তর্কবিতর্কের পর উত্তর আধুনিকতাকে সনাক্ত করা যেতে পারে “বিশ্ববিচিত্রার নবমাত্রিক পাঠ” হিসেবে–যে পাঠ মানুষকে তার সত্তাসনাক্ত করণে সহায়তা করে এবং সত্তাসনাক্তির এই আন্তরিক আকুতি থেকেই নব্বই দশকের বাংলা কবিতার প্রধান স্বর হয়ে ওঠে উত্তর আধুনিক ভাবব্যঞ্জনা। আত্ম-স্বাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সাপেক্ষে বৈশ্বিকতায় প্রবেশের এই কাব্য প্রয়াস নব্বই দশকেই প্রথম নয়;বরং এর যাত্রা শুরু হয়েছে নজরুল ও জীবনানন্দ থেকে এবং পরবর্তী দশকগুলিতেও এ প্রবনতা যথেষ্ট সক্রিয় থেকেছে।অতএব নব্বইয়ি কবিতার যে শেকড় সন্ধানী দর্শন,যে অন্বয় ও স্ফূরণাকাঙ্খা তা বাংলা কাব্যের সুদীর্ঘ ধারাবাহিকতারই স্বাভাবিক পরিণতি।

এবার ফেরা যাক কবি তৌফিক জহুরের কাব্যাঙ্গনে।নব্বই দশকের একজন সক্রিয় কাব্যশিল্পি হিসেবে উল্লেখিত উত্তর আধুনিক কাব্যদর্শের অনেক বৈশিষ্ট্যই তিনি সচেতনভাবে উৎকীর্ণ করেছেন তাঁর কাব্যদেহে।মানব-মানবীর চিরায়ত দেহজ এবং মনোজ প্রেম,প্রগাঢ় ঐতিহ্য প্রীতি,স্বদেশ চেতনা,বিশ্ব-ভাবনা,জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে মানুষের স্বতন্ত্র অস্তিত্বের স্বীকৃতি,মানবতার মহান দীক্ষানিষ্ট বিশ্বমিলনের উৎকাঙ্খা–ইত্যাকার বহুবিধ প্রবনতা সতত প্রভাস্বর তাঁর কবিতার ছত্রে ছত্রে,কাব্য-ভাবনার পরতে পরতে।কবি তৌফিক জহুরের কাব্যবোধি ও মননের নিগুঢ়স্তরে সহজাতভাবে বসবাস করে এক সপ্রতিভ কাব্যমানস। ভাব ও কল্পনার আতিশয্য তাঁকে সততই প্রত্যুতপন্নমতিতায় উদ্ভাসিত করে। প্রখ্যাত ইংরেজ রোমান্টিক কবি WilliamWordsworth এর বলা “Poetry is the spontaneous overflow of powerful feelings” বাচ্য-বয়ানটি যেনো সহজাতভাবেই সাযুজ্যময় হয়ে ওঠে এই কবির কাব্যলীলা ও কাব্যালোচনার তাৎক্ষণিক শক্তিমত্তার সাথে। প্রায়শই মানবীয় প্রেমের ঘনরসায়নে চারুঋদ্ধ হয়ে ওঠে তাঁর পঙক্তিমালা।যেমন “উষ্ণতা এককাপ কফি ও তুমি” কবিতায় তিনি বলেছেন–
“জীবনের মোহে চিরটাকাল তোমার পাশে বসেই
চুমুক দিতে চাই কফির উষ্ণ পেয়ালায়।”

আবার কখনোবা কামাবেগের উষ্ণ অনুকোষে অত্যন্ত সহজ ও সরল আঁচড়ে তিনি সংবিষ্ট ক’রে দিতে পারেন সুগভীর দর্শনের রহস্যাবৃত বোধের পাঠ।উদ্ধৃতি স্বরূপ বলা যায় —
“মিথ্যার অন্ধকারগুলো সরিয়ে জ্বালিয়ে দেই প্রেমের বাতি।” বোদ্ধা ও অনুসন্ধিৎসু পাঠকবর্গের অধিকতর নিজস্ব মূল্যায়নের উদ্দেশে কবি তৌফিক জহুরের বিভিন্ন কবিতার বিশেষ বিশেষ কিছু লাইন উপস্থাপন করা হলো।
কবিতার নামঃ সীমাহীন প্রান্তর
“নতুন মাটি, লুটোপুটি খায় মাটিতে মাটিতে
আহা বীজ ফেলে জলের ছলাৎ ছলাৎ চুমুকে
রোপণ করি ভালবাসার নতুন ফসল।”

কবিতাঃ সশব্দে কারুকাজ
“মাটিতে ঘুমায় দেহ মাটিতে বিলীন
ঘুম থেকে জেগে পাবে মহামিলনের দিন।”

কবিতাঃ আধো আলো আধো ছায়া লোহার মায়া
“তসবিদানা জপছে যেন
নারীর বুক থেকে শুকিয়ে যাওয়া নদীর হাহাকার।”

কবিতাঃ আলো দাও আলো
“অন্ধকার হাতড়ে পথ চলছি অনাদিকাল থেকে
আলোর মুখ না দেখে দেখে ভুলেই গেছি আলোর রঙ।”

কবিতাঃ রাত্রি রয়েছে পাশে
“আমাকে ছেড়ে দিয়েছি আমারই প্রাণে
জীবনের অনন্ত প্রেমের মিছিলে।”

কবিতাঃ দূর ও সুন্দর
“অগ্নি জ্বলে অগ্নি জ্বলে বুকেতে আমার
পোড়াবো না তোমায়
হৃদয় জ্বলবে শুধুই আমার।”

এই ছোট্ট পোষ্টে কবি তৌফিক জহুরের কাব্য কীর্তির একটা অনুঅংশের পরিচয়ও উপস্থাপন করা সম্ভব নয়।এখানে তাঁর সৃষ্টসম্ভার সম্পর্কে অতি ক্ষীণ একটা ঈঙ্গিত দেয়া হলো মাত্র। তিনি এখনো সচল।লিখছেন দুহাত ভরে।সুতরাং সময়ের মূল্যায়ন সামনে অপেক্ষারত।আশা করি কবি তৌফিক জহুর স্বকাল পেরিয়ে কালোত্তীর্ণ শিল্পসৃষ্টির বরমাল্য অর্জনে সক্ষম হবেন।

১৫ডিসেম্বর,২০২০

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর

পুরাতন খবর

SatSunMonTueWedThuFri
      1
23242526272829
30      
  12345
20212223242526
2728293031  
       
15161718192021
2930     
       
     12
24252627282930
       
2930     
       
    123
       
    123
25262728   
       
     12
31      
   1234
262728    
       
  12345
2728     
       
   1234
       
     12
31      
1234567
891011121314
15161718192021
2930     
       
    123
11121314151617
       
  12345
20212223242526
27282930   
       
      1
2345678
23242526272829
3031     
      1
       
293031    
       
     12
10111213141516
       
  12345
       
2930     
       
    123
18192021222324
25262728293031
       
28293031   
       
      1
16171819202122
30      
   1234
       
14151617181920
282930    
       
     12
31      
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
       
© All rights reserved © MKProtidin.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com