বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে লালমনিরহাট জেলাবাসিকে দেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মজিব বর্ষে উপহারের বাস্তবায়ন হলো।
এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কারণে শুধু দেশে নয় আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে পরিচিতি লাভ করবে লালমনিরহাট।
বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে লালমনিরহাটের সদর উপজেলার টিটিসি কলেজ সংলগ্ন হাড়িভাঙা বিমান বাহিনীর ইউনিট অফিস সংলগ্ন এলাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এয়ার ভাইস মার্শাল এএইচএম ফজলুল হক সহ বিমানবাহিনীর উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।
এর আগে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী কল্যাণ ট্রাষ্টের কোম্পানী সচিব গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অবঃ) জোবায়েদের সঞ্চালনায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী কল্যাণ ট্রাষ্টের প্রধান নির্বাহী এয়ার কমোডর ফখরুদ্দিন ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের লেআউট প্লান উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মী ও প্রশাসনকে অবহিত করেন। এতে উপস্থিত ছিলেন লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফুর, পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা, অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রাশেদ প্রধান, বিমান বাহিনীর লালমনিরহাট রক্ষণা-বেক্ষণ ইউনিটের অধিনায়ক উইং কমান্ডার মোঃ খায়রুল মামুনসহ লালমনিরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাবেক সাংসদ সফুরা বেগম রুমী।
বিমান বাহিনীর প্রধান ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় একটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় যাহা বাংলাদেশের অ্যাভিয়েশন এবং অ্যারোস্পেস সম্পর্কিত প্রথম এবং একমাত্র উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দক্ষ বৈমানিক, বিমান প্রকৌশলী, বেসামরিক বিমান পরিবহন ক্ষেত্রে সকল স্তরের দক্ষ জনবল, বিমান তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষনের সকল স্তর, মহাকাশ সম্পর্কিত সকল স্তরের উচ্চ শিক্ষা এবং সর্বোপরি এসব ক্ষেত্রে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান প্রদানে এই বিশ্ববিদ্যালয় দক্ষ জনশক্তি উৎপাদনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির বিস্তৃতি এবং বিমান সংস্থা গুলোর নতুন বাণিজ্যিক বিমান চাহিদা এবং সরবরাহের অভূতপূর্ব বৃদ্ধিতে সামগ্রিক বিমান শিল্পে দক্ষ জনবলের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। অ্যারোস্পেস শিল্পটি অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত যা বিশেষায়িত দক্ষ শ্রম দাবি করে। তিনি আরো বলেন, বৈমানিক, বিমান প্রকৌশলী ও মহাকাশ বিজ্ঞান শিক্ষা, প্রযুক্তি নির্ভর ও ব্যয়বহুল একটি শিক্ষা। এদেশের যুব সমাজ অত্যন্ত মেধাসম্পন্ন ও তীক্ষ্ম। এদেশের যুবসমাজকে পরিকল্পিত উপায়ে ব্যয় সংকুলানের মাধ্যমে এই ধরনের বিশেষায়িত শিক্ষা প্রদান করার প্রয়াসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন। এটা একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত।এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস গবেষণায় সরকারের আন্তরিকতা রয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন এবং তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছেন। বিমান বাহিনীর প্রধান বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি বিশেষায়িত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, যা বাংলাদেশের আকাশ ও মহাকাশ বিজ্ঞান প্রকৌশল সম্পর্কিত প্রথম ও একমাত্র উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে লালমনিরহাটে বৈমানিক, বিমান প্রকৌশল ও মহাকাশ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষার তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এজন্য অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে আর্ন্তজাতিক বহুজাতিক কোম্পানী, হাইর্যাংকিং বিশ্ববিদ্যালয়, স্বনামধন্য অ্যাভিয়েশন কোম্পানী ও বিবিধ অ্যাভিয়েশন অথরিটির সাথে সহযোগিতার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিকমান অর্জন করার প্রচেষ্টা ও প্রত্যয়ে ইউরোপীয় বহুজাতিক কোম্পানী এয়ারবাসের সাথে সহযোগিতার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।এ ছাড়াও কভেন্ট্রি বিশ্ববিদ্যালয়, সারে বিশ্ববিদ্যালয় এবং জার্মান অ্যারোস্পেস সেন্টার সহ ইউরোপের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে শিক্ষা ও গবেষণায় সহযোগিতার মাধ্যমে আর্ন্তজাতিক মান অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়টি ইন্ডাষ্ট্রির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে একটি নজির স্থাপন করেছে। এর ফলে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতি অর্জনে সক্ষম হবে বলে আমরা মনে করি।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এয়ার ভাইস মার্শাল এএইচএম ফজলুল হক বলেন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী কল্যাণ ট্রাষ্টের মাধ্যমে আপাতত আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ কাজ শুরু করা হলো। আর কোনো জল্পনা-কল্পনা বাকি থাকল না।লালমনিরহাটে ৬৪৮ একর জমির মধ্যে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ডিপিপি একনেক সভায় পাস হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্তরের আদলেই নির্মাণ কাজ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কেননা, দেশি-বিদেশী শিক্ষার্থী, গবেষক ও শিক্ষকগণ এখানে আসবেন, পড়বেন এবং গবেষণা করবেন। এজন্য আমরা আর্ন্তজাতিক মান বজায় রেখেই সবকিছু করার চেষ্টা করছি। এজন্য তিনি স্থানীয় সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
এদিকে,২০২১ শিক্ষাবর্ষে লালমনিরহাটে পাঁচটি বিভাগের ভর্তি কার্যক্রম করার কথা জানা গেছে। এসব বিষয় হলো- বিএসসি ইন এএমই অ্যারোস্পেস, বিএসসি ইন এএমই অ্যাভিওনিক্স, বিএসসি ইন এমই, বিএসসি ইন ইইই এবং বিএসসি ইন সিএসই।