সাংবাদিকরা আগের চেয়ে শক্ত অবস্থানে থাকায় ভোটের দিন নির্যাতনের মাত্রা কমে আসছে। শনিবার দেশের ৬০ টি পৌরসভার নির্বাচনে হাতেগোনা ক’জন সাংবাদিক নির্যাতন ও লাঞ্ছিত হয়েছেন। ক্যামেরা ভাংচুরের পরিমানও নি:সন্দেহে কম। সরকারও চায় হ্রাস পাক সাংবাদিক নির্যাতন। তাইতো আগের যেকোন সময়ের চেয়ে সাংবাদিকরা পেশাগত মর্যাদা এবং ঐক্যরক্ষায় আন্তরিক। সাংবাদিকদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাই প্রতিরোধের জন্য সাংবাদিকরাও প্রস্তুত। তিনটাকার কলমই যখন তাদের প্রধান অস্ত্র। তবে ওই অস্ত্রই কেবল এখন সাংবাদিকদের শেষ ভরসা।
আসুন; আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি। যেখানে সাংবাদিকের সাথে সাংবাদিকের সম্পর্ক ইস্পাত কঠিন ঐক্যবদ্ধ। যেখানে একজন আহত সাংবাদিক আপনারই ভাই। আপনারই রক্তের বন্ধন। আপনারই পরিবারের কেউ। এই মানসিকতা তৈরী করুন। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি আপনার এই মানসিকতা দেশে সাংবাদিক নির্যাতনের মাত্রা কমে আসবেই।
আপনিও ঐক্যবদ্ধ থাকুন। পেশাগত ঐক্যবদ্ধ। পেশার মর্যাদা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ। ব্যক্তিস্বার্থে নয় বরং জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ। এই ঐক্যবদ্ধতাই এনে দিতে পারে সাংবাদিকদের জন্য আগামির সুন্দর-সুখী, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। যেখানে থাকবেনা সাংবাদিক নির্যাতন। তাহলেই গড়ে উঠবে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনারবাংলা। যেখানে মনখুলে, নিশ্চিন্তে কলম চলবে একজন সাংবাদিকের…
অতীতের সকল গ্লানি আমরা ভুলে যেতে চাই। সাংবাদিকদের রক্তের দায়ে আমরা কিনে নিতে চাই আমাদের অধিকার। স্বাধীনতার ৫০ বছর চলছে। কী পেয়েছে সাংবাদিকরা? আমরা হিসেব কসতে জানি। সবতো আর অশিক্ষিত-কুশিক্ষিত নয়। আজকাল মেধাবীরাও এ পেশায় জড়িয়ে গেছে। কী পেতে চায় সাংবাদিকরা? রাষ্ট্রের কাছ থেকে সকল পেশাজীবিরা বেতন-ভাতা তুলে নিচ্ছেন। সাংবাদিকরা সরকারের কাছে বেতন-ভাতা চায়নি -চাইবেওনা। তারা চায় নিরাপত্তা, পেশার মর্যাদা এবং রাষ্ট্রীয় অধিকার। যা কেবল রাষ্ট্রীয় সংবিধানের পাতায় মুদ্রিত।
আপনি জানেনতো- দেশে একমাত্র সাংবাদিকরা সরকারের কাছ থেকে কোন সহায়তা নিচ্ছেন না। আমরা ভুলে যেতে চাই সকল না পাওয়ার বেদনাও। আসুন; ঐক্যবদ্ধ হই। ক্ষতবিক্ষত রাষ্ট্রকে আবারো কলমের কালিতে সুস্থ্য করে তুলি।
আপনি-সাংবাদিক শপথ নিন, আমরা রাষ্ট্রের অতন্দ্র প্রহরী। বিনিময় ছাড়া আমরা চতুর্থ স্তম্ভের অংশীদার। এই স্তম্ভটি শক্তপোক্ত করে ধরে রাখারও দায়িত্ব বাংলাদেশের প্রতিটি সাংবাদিকের। আর অবহেলা নয়, রাষ্ট্র কারো নয়, রাষ্ট্র সকলের। আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনাকে লালন করে গড়ে তুলি সাংবাদিক নির্যাতনমুক্ত একটি অহিংস স্বদেশ।
শপথ নিতে অভ্যাস করুন, অসত্য, গুজব কিংবা রাষ্ট্রবিরোধী কোন সংবাদ প্রকাশ করবোনা। সত্যকে সত্য আর মিথ্যাকে মিথ্যা, কালোকে কালো আর দূর্ণীতির সাথে কোন আপোষ নেই। এরপর কোনোক্রমে আপনি আক্রমনের শিকার হলে দায়ভার নেবে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম। মহান রাব্বুল আলামিনকে হাজির নাজির রেখে নিশ্চিত করে আপনিও শপথ নিন। শপথ নিন সাংবাদিক নির্যাতনকারীর সাথে কোন আপোষ করবেন না।
হ্যাঁ, আপনি যদি সাংবাদিক নির্যাতনকারী কিংবা মামলা দিয়ে হয়রাণীকারীর সাথে আপোষ করেন তবে আপনিই পরিনত হবেন রাক্ষুসে সাংবাদিকে। তারপরও কি আপনি পেশার সাথে বেঈমানী করবেন? নিশ্চয়ই না; তবেই আপনি সফল। শপথ নিন কোন সাংবাদিক নির্যাতনকারীর সাথে আপোষ নেই। আপনি রাক্ষুসে সাংবাদিক নন। মুখে বলুন আমি হলুদ সাংবাদিক নই। আমি অপ-সাংবাদিক নই। আমি একজন প্রকৃত সাংবাদিক। একজন সাংবাদিকের বিপদে এখন আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়ে ওঠে এবং প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। তবে হ্যাঁ একজন সাংবাদিকের বিপদে যদি আপনার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়ে ওঠে তবেই আপনি একজন সাংবাদিক।
লেখক: আহমেদ আবু জাফর, প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম, কেন্দ্রীয় কমিটি ০১৭১২৩০৬৫০১ জানুয়ারী ৩১, ২০২১ খ্রী.।