এসব ভূমিদস্যু ও ফসলি জমি নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। আর এসব অসাধু মৎস্য ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগ দিলেও হচ্ছে না কোনো প্রতিকার। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষা করে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জমির প্রকৃতি পরিবর্তন ও মাটি পরিবহন করছে বিভিন্ন ভাটায়।
এ বিষয়ে জাফর মাস্টারের সাথে কথা বলা হলে তিনি বলেন, আমি সকল প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কাজ করছি আপনি যা পারেন করেন।
কৃষিজমির প্রকৃতি পরিবর্তন করে পুকুর খননের হিড়িক পড়েছে এতে যেমন আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে অপরদিকে চাষিরা পরছে হুমকির মুখে। সরেজমিনে বিভিন্ন স্থানে এর সত্যতা মিলেছে। উপজেলার সিবজাইট পশ্চিম বাগমারার প্রানকেন্দ্র হাটগাঙ্গোপাড়া,আউচপাড়া,শুভডাঙ্গা, গোবিন্দপাড়া ইউনিয়ন এলাকায় জমির প্রকৃতি পরিবর্তনের দৃশ্য দেখা গেছে। কৃষিজমির প্রকৃতি পরিবর্তন করে এখন জলাশয় করা হয়েছে। জলাশয়ের চারপাশে রয়েছে উঁচু পাড়। এ ছাড়া এসব এলাকার কৃষিজমিতে খননযন্ত্র বসিয়ে এখনো পুকুর খনন করা হচ্ছে। অথচ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ রয়েছে, জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না। নীতিমালা জারির পর থেকে কৃষিজমির প্রকৃতি পরিবর্তন করে এসকল এলাকায় প্রায় ২০টি পুকুর খনন করা হয়েছে এবং আরও ৬টি পুকুর খননকাজ অবাধে চলমান রয়েছে।
এসকল এলাকার অবৈধ পুকুর খননে চলমান কাজগুলো হল, আউচপাড়া ইউনিয়নে বেলঘরিয়া সোনাদীঘি বাজার সংলগ্ন ১টি এবং একই ইউনিয়নের মঙ্গলপুর সমাসপুর গ্রামের মাঝখানে ১টি এবং ঐ ইউনিয়নের মুগাইপাড়ার পার্শ্বে বগপাড়া মোড়ের নিচে ১টি ও খুদাপুর গ্রামে আরো ১টি । গোবিন্দপাড়া ইউনিয়নের সালজুর রুহিয়া মাহামতপুর গ্রামে চেয়ারম্যান শ্রী বিজন কুমার এর ভাটার পার্শ্বে ১টি, শুভডাঙ্গা ইউনিয়নে মচমইল বাজারের হাটগাঙ্গোপাড়া রাস্তা সংলগ্ন ১টি। গত বছরের ১১ জুন ভূমি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব এ টি এম আজাহারুল ইসলামের স্বাক্ষর করা নীতিমালা-সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, কৃষিজমি যতটুকু সম্ভব রক্ষা করতে হবে, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া জমির প্রকৃতিগত কোনো পরিবর্তন আনা যাবে না। এই চিঠির অনুলিপি গত বছরের (২২ শে জুলাই) রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের দপ্তরে পৌঁছায়।
একই সময়ে জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে ওই নীতিমালা বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়ে বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) চিঠির একটি অনুলিপিও পাঠানো হয়েছে বলে উভয় দপ্তরের দায়িত্বশীল দুজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। ইউএনও কে গত ডিসেম্বর ও চলতি মাসে দেওয়া ওই সব এলাকার শতাধিক কৃষক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের লিখিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কৃষিজমির প্রকৃতি পরিবর্তন করছেন। অভিযোগে তাঁরা বলেছেন, প্রথমে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা স্থানীয় কিছু লোকজনের কাছ থেকে কৃষিজমি তিন বা ১০ বছরের জন্য ইজারা নিয়ে সেখানে পুকুর খনন শুরু করেন। পরে কৌশলে ওই পুকুরের আশপাশের অন্য জমির মালিককেও তাঁদের জমি ইজারা দিতে বাধ্য করেন। এসকল এলাকার নাম প্রকাশে অনিশ্চুক অনেক কৃষক অভিযোগ করে বলেন, তাঁদের জমি প্রথমে দেননি। ইজারা নেওয়া আশপাশের জমিতে ড্রেজার দিয়ে খনন শুরু করা হয়। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে তাঁদের জমিও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পুকুর খননের জন্য দিতে হয়।
উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের সালমারা বিলে পানি নিস্কাশনের নাম করে জাহাঙ্গীর আলম নামে একজন প্রভাবশালী ভেকু মেশিন দিয়ে পুকুর খনন করছে। ঐ পুকুরের পার্শ্বেই একটি ড্রামচিমনি ভাটার মালিক শফিক পুকুর খননে সার্বিক সহযোগিতায় আছেন বলে এলাকাবাসি জানান। সেখানে প্রায় ২০টি ট্রাক্টর দিয়ে বিভিন্ন ইটভাটায় মাটি বিক্রি করে প্রভাবশালীরা ক্ষমতা দেখিয়ে রাস্তায় ধুলামাটি ফেলে জনগন,মিডিয়া,প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে নিজ স্বার্থে ব্যাস্ত এসকল ইটভাটার মালিকারা। ঐ রাস্তায় চলাচলে পথচারিরা বলেন, ঘন কুয়াশায় ঢাঁকা এসব ধুলামাটির মধ্য দিয়েই আমাদের নিত্যদিনের যাতায়াত। শীঘ্রই এর সুব্যবস্থার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা ও পথচারিরা।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: শরীফ আহম্মেদ জানান, মন্ত্রনালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী অবৈধ পুকুর খননে জমির শ্রেনি পরিবর্তনের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে, কোন অবৈধভাবে পুকুর খনন করা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।