তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সব দ্বন্দ্ব আর অনৈক্য ঝেড়ে ফেলে একজোট হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে- সেই তথ্য জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেই নির্বাচনেও মানুষ যেন নৌকা মার্কায় ভোট দেয়, তার জন্য জনগণের কাছে আপনাদের আবেদন করতে হবে। সে আবেদন আপনারা করবেন, সেটা আমরা চাই।’আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে শনিবার দলের ধারাবাহিক বিশেষ বর্ধিত সভায় বক্তব্য রাখছিলেন ক্ষমতাসীন দলের প্রধান। গণভবনে এই সভায় ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা এবং রংপুর বিভাগের ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং ইউনিয়ন পরিষদে দলের জনপ্রতিনিধিরা যোগ দেন।এর আগে গত ২৩ জুন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতা এবং জনপ্রতিনিধিদের এবং ৩০ জুলাই চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে সভা করেন দলীয় সভাপতি।প্রতিটি সভাতেই আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নেতা-কর্মীদের করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা। দেন দলীয় কোন্দল মেটানোর নির্দেশ। বলেন, ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে যেকোনো মূল্যে। সেই সঙ্গে সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচিগুলো তুলে ধরে সেগুলো মানুষের মাঝে বারবার তুলে ধরার তাগাদা দেন তিনি।‘দ্বন্দ্ব ভুলে যেতে হবে’ইউনিয়নের নেতাদের শেখ হাসিনা বলেন, ‘সামনে নির্বাচন অনেক কঠিন হবে, এটা আপনাদের মনে রাখতে হবে।’‘সেই সাথে সাথে আমাদের সংগঠনকে গড়ে তুলতে হবে। যে দ্বন্দ্ব, সেই দ্বন্দ্ব ভুলে যেতে হবে।’কোনো আসন যেন দ্বন্দ্ব বা অবহেলার কারণে হারাতে না হয়, তার ওপরও জোর দেন প্রধানমন্ত্রী।‘দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে একটা ধারণা হয়ে যায়, সবগুলো তো জিতব, এই একটা না জিতলে আর কী হবে? ২০০১ এ কিন্তু এই চিন্তা ছিল। এবার যেন এর পুনরাবৃত্তি না হয়।’‘মনে রাখতে হবে একটা সিট হারানো মানে ক্ষমতা দখল আমরা করতে পারব না। এই কথাটা মনে রেখে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করতে হবে। উন্নয়নের কথাগুলো জনগণকে বলতে হবে এবং দলকে সুসংগঠিত করতে হবে।’আওয়ামী লীগের সাথে সাথে অন্যান্য সহযোগী সংগঠনকেও শক্তিশালী করার তাগাদা দেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। বলেন, ‘মহিলা আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ-প্রত্যেকটা সংগঠন যেন সুসংগঠিত হয় এবং নিয়ম মেনে চলে, ডিসিপ্লিন মেনে চলে। সেই বিষয়টাতে লক্ষ্য রাখতে হবে।’এই নির্বাচনে জিততে না পারলে দেশের ক্ষতি হবে বলেও সতর্ক করে দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। বলেন, ‘এই নির্বাচনে আমরা যদি জয়ী না হই তাহলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আমরা শুরু করেছি, সেই বিচার বন্ধ হয়ে যাবে। মানুষের ওপর আবার আক্রমণ আসবে। আবার বাংলাদেশকে তারা আতঙ্কিত করবে।’যাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে, তার পক্ষেই কাজ করার নির্দেশও দেয়া হয় বর্ধিত সভায়।শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে সবাইকে প্রস্তুত হতে হবে। যেহেতু আমরা জোট করেছিলাম অবশ্যই জোট বজায় রাখতে হবে। সবাই যেন আমাদের বিরুদ্ধে চলে না যায়, তার জন্য।’‘কিন্তু সাথে সাথে যাদেরকে আমরা নমিনেশন দেব, অবশ্যই নমিনেশনদেয়ার সময় তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে দেই। কিন্তু তার পরেও আমি সার্ভে করি। ইতিমধ্যে তিন দফা সার্ভে আমার হয়ে গেছে। সেই সার্ভের ওপর ভিত্তিতে যাকে নমিনেশন দেব, যাকেই নৌকা মার্কা দেব, তার পক্ষেই একযোগে কাজ করতে হবে যেন নৌকা না হারেপ্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের শক্তিই হচ্ছে জনগণ। জনগণকে নিয়েই আমরা রাজনীতি করি, জনগণের কল্যাণের জন্যই আমরা রাজনীতি করি। এই কথাটা সাধারণ মানুষের কাছে আপনাদের তুলে ধরতে হবে। বলতে হবে, আমরা আপনাদের কাছে ভোট চাই, আপনাদের কল্যাণে কাজ করতে চাই। আপনাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চাই।’‘আমরা যে উন্নয়নগুলো করেছি, মানুষকে বারবার না বললে মানুষ সেটা মনে রাখে না। তাই জনগণের কাছে আপনাদেরকে যেতে হবে এবং এই কথাগুলো বারবার মানুষকে বলতে হবে। যে আমরা এই কাজগুলো করেছি, ভবিষ্যতে আরও করব।’ জনগণের কল্যাণে কাজ করে যেতেও নেতাদের নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ প্রধান। বলেন, ‘আওয়ামী লীগ করা মানে শুধু নিজের ভাগ্য গড়া না। এটা বিএনপি-জামায়াতের কাজ। দুর্নীতি, লুটপাট, হত্যা করা, এটাই তো তাদের কাজ? নইলে কেউ এতিমের টাকা চুরি করে খেতে পারে?’ যাকে নমিনেশন দেব, যাকেই নৌকা মার্কা দেব, তার পক্ষেই একযোগে কাজ করতে হবে।