ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের মহানায়ক মাস্টারদা সূর্যসেনের অন্যতম সহযোগী প্রথম বিপ্লবী বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের আত্মাহুতি দিবস আজ। ১৯৩২ সালের এই দিনে চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর ইউরোপিয়ান ক্লাবে অভিযান শেষে ফেরার পথে আহত প্রীতিলতা পুলিশের হাতে আটক এড়াতে পটাশিয়াম সাইনাইট খেয়ে আত্মাহুতি দেন। ১৯১১ সালের ৫ মে চট্টগ্রামের ধলঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন প্রীতিলতা। তার বাবার নাম জগবন্ধু ওয়াদ্দেদার। তিনি চট্টগ্রাম মিউনিসিপাল অফিস কর্মকর্তা ছিলেন এবং মায়ের নাম প্রতিভা ওয়াদ্দেদার। ছয় ভাই বোনের মধ্যে প্রীতিলতা ছিলেন দ্বিতীয়। ১৯১৮ সালে প্রীতিলতার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন শুরু হয়। চট্টগ্রামের ডা. খাস্তগীর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয়। প্রীতিলতা অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। ফলে তৃতীয় শ্রেণী থেকে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয়েছিল। প্রীতিলতা ডা. খাস্তগীর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে ১৯২৭ সালে লেটার মার্কসহ ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। এরপর উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে লেখাপড়ার জন্য ইডেন মহিলা কলেজে ভর্তি হন।সেখানে পড়ার সময় থেকেই বিপ্লবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন এ বীরকন্যা। ১৯২৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মিলিত মেধা তালিকায় পঞ্চম স্থান এবং মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে আইএ পাস করেন প্রীতিলতা। এরপর প্রীতিলতা কলকাতার বেথুন কলেজে স্নাতক শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৩২ সালে তিনি দর্শনে স্নাতক পাস করেন। এ কলেজে পড়ার সময় বিপ্লবী দলে মেয়ে সদস্য ও ছাত্রীদের নিয়ে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। আর ১৯৩২ সালে চট্টগ্রামে ফিরে গিয়ে নন্দনকানন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন। স্বদেশী আন্দোলনের ক্ষেত্রে প্রীতিলতাই প্রথম নারী বিপ্লবী সদস্য। প্রীতিলতা যখন বিপ্লবী দলের সদস্য হতে চান তখন মাস্টারদা সূর্যসেন পলাতক ছিলেন। তবে প্রীতিলতার প্রবল আগ্রহে ও বহু চেষ্টার পর ১৯৩২ সালের মে মাসে মাস্টারদার সঙ্গে দেখা হয়। বিপ্লবী সূর্যসেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রীতিলতার নেতৃত্বের দলটিকে বোমা তৈরির খোল আনার দায়িত্ব দেয়া হয়। মাস্টারদার নির্দেশ পেয়ে ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে সামরিক পোশাকে প্রীতিলতা মৃত্যুভয়হীন কিছু তরুণকে সঙ্গে নিয়ে পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাবে ইংরেজদের ওপর আক্রমণ করে। বহু ইংরেজকে হতাহত করে সফল অপারেশনের পর গুলিবিদ্ধ হয় প্রীতিলতা নিজে। পরে ইংরেজদের হাতে ধরা পড়ার আশঙ্কা পকেটে থাকা পটাশিয়াম সাইনাইড খেয়ে আত্মাহুতি দেন এ বীরকন্যা। তাঁর প্রতি বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলী ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।