উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে:
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটের দিন যতই এগিয়ে আসছে ইউনিয়নগুলোতে উত্তেজনা ততই ছড়াচ্ছে। প্রার্থীরা একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন। ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ইতিমধ্যে ভোটারদের নিরাপত্তা দিতে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ থেকে জেলা প্রশাসকদের এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সূত্র থেকে জানাগেছে, নড়াইলের লোহাগড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান সিকদার নজরুল ইসলামের নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা ভাংচুর করার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামীলীগের মনোনিত প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, গত ১৯ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান সিকদার নজরুল ইসলাম তার কর্মীসমর্থকদের নিয়ে কালনা বাজারে নিজের কার্যালয়ে মিটিং করছিলেন। এ সময় ৩০/৪০জনের একটি দল লাঠিশোঠা নিয়ে নৌকার পক্ষে স্লোগান দিতে দিতে বিনা উস্কানিতে তাদের উপর চড়াও হয়ে আনারস প্রতিকের কার্যালয়ে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। ২০/২৫ মিনিটব্যাপি তান্ডব কালে তারা নজরুলের কার্যালয়ের যাবতীয় আসবাব গুড়িয়ে দেয়াসহ অন্তত ১০টি মটর সাইকেলের ক্ষতি সাধন করে, ছিন্নভিন্ন করে ব্যানার পোষ্টার। হামলাকারিদের লাঠিশোঠার এলোপাথাড়ি আঘাতে এ সময় কমপক্ষে ৫ জন আহত হলে তাদের লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়। খবরপেয়ে ডিবি ও লোহাগড়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছানোর আগেই দুর্বৃত্তরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এদিকে গত ১৮ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে নলদী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসেন বিশ্বাস ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল কামাল পাখির সমর্থকদের মধ্যে মিঠাপুর বাজারে এ সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এতে আহতদের নড়াইল সদর হাসপাতাল ও স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছেন, নৌকা ও নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের ভোটের মাঠের আধিপত্য নিয়ে বিরোধ সংঘর্ষে রুপ নেয়। মিঠাপুর বাজারে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দুইপক্ষ সংঘর্ষে জড়ালে উভয়পক্ষে অন্তত ৮জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে ৩নজনকে নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের স্থানীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ঘটনার সময় নৌকার প্রতিপক্ষ আনারস প্রতীকের কয়েকটি নির্বাচনী কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। অপরদিকে শালনগর ইউনিয়নের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের সদস্য প্রার্থী মো. হামিদ ফকিরের (৪৫) ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলার শিকার হামিদ শালনগর ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী। তিনি নওখোলা গ্রামের বাসিন্দা। তাঁকে গুরুতর অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত ১৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সাতটার দিকে উপজেলার শালনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আগামী ২৬ ডিসেম্বর এ ইউপির নির্বাচন। হামিদ ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য। হামলায় তাঁর বাম হাতের কবজি ও কনুই থেকে ভেঙে গেছে। হাতে, পায়ে ও পিঠে আঘাত করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজন জানান, শালনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে খোকন শেখের চায়ের দোকানে হামিদ ফকিরসহ কয়েকজন বসে চা খাচ্ছিলেন। তখন নৌকা প্রতিকের সমর্থকরা ২৫-৩০ জন রড ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামিদ ফকিরের ওপর অতর্কিত হামলা করে। পরে তাকে উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। লোহাগড়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, আমাদের কাছে বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রার্থীরা অভিযোগ করছেন, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে বলা হয়েছে। শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহনের লক্ষে আমরা জেলা প্রশাসন, উপজেলা জেলা প্রশাসন ও আইন শৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনী যৌথভাবে কাজ করছি। আশা করছি শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহন সম্পন্ন হবে। লোহাগড়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আবু হেনা মিলন বলেন, কয়েকটি ইউনিয়নে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছে বিষয়টি জানার পরই পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ সুপার ও ২জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সার্বক্ষনিক বিষয়টি পর্যবেক্ষন করছেন এবং নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন। থানার পুলিশের সাথে ডিবি পুলিশও কাজ করছে। উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহনের জন্য আমরা কাজ করছি।