আরিফুলঃ সাতক্ষীরার সীমান্ত এলাকার চোরাচালানি চক্রের মূলহোতারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাদের কাছে মাদক, অস্ত্র, হুন্ডিসহ সবধরনের চোরাকারবার বৈধ ব্যাবসায় পরিণত হয়েছে। চুপিসারে রমরমা অবৈধ চোরাকারবার চালিয়ে আসছেন তারা।
বেপরোয়া ভাবে মাদক, অস্ত্র ও হুন্ডির চোরা কারবার চালিয়ে আসছে সাতক্ষীরা সদরের আলিপুর ইউনিয়নের মাহমুদপুর দক্ষিণ পাড়ার মৃত সাহেব আলীর ছেলে মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান খোকন ওরফে দা-খোকন ও তার চোরাকারবারের পাটনার গাংনীয়া বলফিল্ড এলাকার কাওসার কারিগর এর ছেলে সাদ্দাম।
খোঁজনিয়ে জানাজায় ভোমরা স্থলবন্দরে বসে ভারত থেকে বৈধপথে আসা পাথর ও অন্যান্য পণ্যের আড়ালে মাদক, অস্ত্রের বড়বড় চালান দেশব্যাপী পাচার করেন দা-খোকন ও সাদ্দাম। সাদ্দামের নিজস্ব ১১ টি পণ্যবাহী ট্রাকে বৈধ ভাবে আমদানি করা পাথর ও অন্যান্য পণ্যের আড়ালে অবৈধ মালামালের চালান নির্বিঘ্নে পৌঁছে দেয় নির্দিষ্ট গন্তব্যে।
ভারতের বসিরহাট এর ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী চোরাকারবারি পিন্টু সরকার ও আরো কয়েক জন ভারতীয় চোরাচালানীর সাথে মুস্তাফিজুর রহমান খোকন ওরফে দা-খোকন ও সাদ্দাম দীর্ঘদিন ধরে এই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে আসছে। ভারত থেকে আমদানিকৃত বৈধ পণ্যের আড়ালে মাদক, অস্ত্রসহ বিভিন্ন অবৈধ নিষিদ্ধ পণ্য পাঠায় পিন্টু সরকার ও অন্যান্যরা। এছাড়াও দা-খোকন ও সাদ্দাম টাকা, রুপি ও ডলারের অবৈধ কারবার চালিয়ে আসছে বহুদিন ধরে।
নির্ভর যোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ২০০৯ সালের ১৯ জুলাই রাতে সাতক্ষীরার মাহমুদপুরে তার নিজ মৎস্য ঘের হতে দুটি রিভলবার,একটি দেশীয় তৈরি পিস্তল ও ১৪ রাউন্ড গুলিসহ র্যাবের হাতে আটক হন মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান খোকন ওরফে দা-খোকন।
এঘটনায় পরদিন ২০ জুলাই খুলনা র্যাব-৬ এার ১নং কোম্পানির এসআই মোঃ জাফর ইকবাল বাদীহয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি অস্ত্র মামলা দায়ের করেন যার নং- ৪৭/৩৪১।
২০০৪ সালে করলা কর্পোরেশন বাংলাদেশ লিমিটেড এর ভোমর স্থলবন্দরের পরিচালকের কাছথেকে মাহমুদপুর গাংনীয়া ব্রীজ এলাকায় ১০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ওই ছিনতাইয়ের ঘটনার অন্যতম আসামি দা-খোকন বহুদিন জেল খাটেন।
১৯৮৯ সালে যশোর বাসটার্মিনালে অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে দা-খোকন। সেসময়েও বহুদিন যশোর কারাগারে জেল খাটেন তিনি।
এছাড়াও মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান খোকন ওরফে দা-খোকন এর নামে একাধিক অস্ত্র, মাদক, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী হামলার মামলা রয়েছে।
অপরদিকে দা-খোকনের পাটনার সাদ্দাম বছর কয়েক আগে ভোমরা স্থলবন্দর এলাকায় এক ব্যাবসায়ীর অফিসে চা-বয় এর কাজ করতেন। পড়াশোনা না জানলেও খুব অল্প সময়ের মধ্যে মাদক, অস্ত্র ও স্বর্ণের চোরাকারবার করে আজ সে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। গড়েছেন আলিশান বাড়ি, আলিপুর এর বাদামতলা বাজারে বিশাল মার্কেট, কিনেছেন বিঘা পর বিঘা জমি।
গাংনীয়া বলফিল্ড এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, ফেনসিডিল ব্যাবসায়ী কাওসার কারিগর এর ছেলে সাদ্দাম অল্প বয়সে চোরাকারবার করে গত ৮-১০ বছরের মধ্যে জিরো থেকে কোটি কোটি টাকার সম্পাদের মালিক বনেগেছেন। অগাধ অবৈধ অর্থ সম্পদের মালিক হওয়ায় এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ থেকে পুলিশ প্রশাসনের কাউকে পরোয়া করেনা সাদ্দাম।
তারা অভিযোগ করে আরো বলেন, গত কয়েক বছর আগেও সাদ্দামের কোনো অর্থ সম্পদ ছিলো না। দুদক তদন্তে করলে বেরিয়ে আসবে সাদ্দামের চোরাকারবারের সব অবৈধ অর্থ সম্পদের হিসাব।
এছাড়া ভোমরা স্থলবন্দর বৈধ পণ্যের আড়ালে অবৈধ পণ্যের চোরাকারবার চালিয়ে আসছে ফুলতলার মিলন, শীর্ষ চোরাকারবারি ভোমরা লক্ষীদাঁড়ী এলাকার সবুর, পানি ডাক্তার, ভাড়ুখালি সুতিঘাটা এলাকার সেলিম ওরফে কানা সেলিম।
এছাড়াও মাদকের রমরমা ব্যাবসা করছে বাদামতলা গাংনীয়ার রশিদ কারিগর এর ছেলে আজিজুল ইসলাম পলতা। মাহমুদপুর এলাকার আব্দর রাজ্জাকের ছেলে মাদক সম্রাট সাইদুল। এই সাইদুলের নামে রয়েছে দশ’টিরও বেশি মাদকের মামলা। গয়েশপুর এলাকার ফারুক, ভোমরা কানপাড়ার ফকির গাজীর ছেলে শহিদুল, ভোমরা বাবুর বাগান এলাকার চাঁদবাবু, শ্রীরামপুর এলাকার মাদক সম্রাট শফি ও বকুল। কুলিয়া পুস্পকাটি ইট ভাটায় ইউপি সদস্যের সহযোগিতায় ফেনসিডিলের ও গাঁজার রমরমা ব্যবসা করছে বহেরার সালাম। এরা সবাই চিহ্নিত মাদক চোরাকারবারি। এদের নামে রয়েছে একাধিক মামলা।
সাতক্ষীরা সীমান্তের এসব চোরাকারবারিরা মামলা হামলা থেকে বাঁচতে টাকার বিনিময়ে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও পুলিশসহ আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার সাথে সুসম্পর্ক রেখে কৌশলে তাদের অবৈধ কারবার চালিয়ে আসছে বহুদিন ধরে। সাধারণ মানুষ এসব অবৈধ কারবারের বিরুদ্ধে কথা বললে তাদের মিথ্যা মামলাদিয়ে ও বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করে প্রভাবশালী চোরাকারবারিরা। তারা প্রভাব খাটিয়ে তাদের অবৈধ কারবার চালিয়ে আসছে দাপটের সাথে।————