১২ ডিসেম্বর ২০১২, নাভারের বুরাদায় ক্রস কান্ট্রি রেস (আন্তর্জাতিক দৌড় প্রতিযোগিতায়) সকলের চোখ কেনিয়ান দূর পাল্লার দৌড়বিদ আবেল কিপ্রোপ মুতাই (Abel Kiprop Mutai) এর দিকে। মাত্র কদিন আগেই লন্ডন অলিম্পিকে ৩০০০ মিটার দৌড়ে ব্রোঞ্জ পদক জিতেছেন মুতাই। রেসে সবার থেকে অনেকটা এগিয়ে থাকা আবেল মুতাই ফিনিশ লাইনে পৌছার ঠিক কয়েক মিটার আগেই হঠাৎ দৌড় থামিয়ে দিলো। তার ধারনা সে সবার আগে ফিনিশ লাইনে পৌছে গেছে, সে-ই বিজয়ী…
আবেলের ঠিক পিছনেই ছিল স্প্যানিশ দৌড়বিদ ইভান ফার্নান্দেজ। আবেল মুতাই এর দৌড় শেষ হয়নি দেখে সে চিৎকার করে তাকে বলতে লাগলো “Oye, no has cruzado la línea de meta. Sigue corriendo ” ইভানের স্প্যানিশ ভাষা বিন্দুবিসর্গ বুঝতে না পেরে আবেল মুতাই ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল…
বিষয়টা অনুধাবন করে পিছন থেকে আবেল কে ধাক্কা দিয়ে দিয়ে ফিনিশ লাইন পার করে দিলো ইভান ফার্নান্দেজ। ফলে আবেল মুতাই-ই দৌড়ে বিজয়ী হলো।
প্রতিযোগিতা শেষে এক সাংবাদিক ইভানকে জিজ্ঞাসা করল, “তুমি এমনটা কেন করলে?”
ইভান বলল, “আমার স্বপ্ন হল একদিন আমাদের একটি যৌথ অধিকারের সমাজ থাকবে।”
সাংবাদিক, “তাতো বুঝলাম, কিন্তুু ঐ কেনিয়ান কে কেন জিতিয়ে দিলে?
ইভান উত্তর দিলো, “আমি তো তাকে জিতিয়ে দেইনি ! সে-ই তো জিতেই যাচ্ছিল।”
সাংবাদিক; “তুমি নিজেও তো জিততে পারতে, ঠিক তার পরেই ছিলে তুমি”
প্রশ্নকারীদের দিকে তাকিয়ে ইভানের সপ্রতিভ উত্তর, “দেখো, সত্যিই আমি জিততে পারতাম। কিন্তুু এমন জেতার মুল্যটা কী! কী মর্যাদা পেতাম আমি ? বড়জোর একটি মেডেল!! তা দিয়ে কী করতাম আমি? আর এ রকম ভাবে জেতার পরে আমার মা-ই বা আমাকে কী ভাবতেন!”
আসলে নৈতিক মূল্যবোধ (Values) একটা পারিবারিক সংস্কৃতি, যা এক জেনারেশন থেকে পরের জেনারেশনে প্রবাহমান। ইভান তাঁর মায়ের কাছ থেকে নৈতিক মূল্যবোধের যে শিক্ষাটা পেয়েছে, তাহলো – অন্যের ভুল দূর্বলতা কিংবা অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে অথবা অন্যকে ঠকিয়ে হয়তো সাময়িক ভাবে জয়ী হওয়া যায়। কিন্তু সেই জয়ে নেই কোন মর্যাদা, নেই যোগ্যতর হবার তৃপ্তি। এক সময় সেই জয়-ই হেরে যায় বিবেকের কাছে, হয়ে উঠে তাড়নার…
প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় আমাদের উত্তরসূরি ‘দের কী ধরণের মুল্যবোধ শিক্ষা দিচ্ছি? ভালমন্দ বিবেচনায় না নিয়ে যেনতেন ভাবে জয়ি হয়ে শুধু নিজের স্বার্থটাকেই প্রাধান্য দেয়ার শিক্ষা নয়তো??
লেখকঃ বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির আইন প্রশিক্ষক হাসান হাফিজুর রহমান।