মোঃশফিকুল ইসলাম।।
শীতের শুরু থেকেই শেরপুরের নকলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার রাস্তার মোড়ে-মোড়ে খোলা আকাশের নিচে বা ভ্যান গাড়ির উপরে পিঠার দোকান বসে। সরষে বা ধনে পাতা বাটা অথবা শুঁটকির ভর্তা মাখিয়ে চিতই পিঠা মুখে দিলে ঝালের দাপটে কান গরম হয়ে যায়, শীত যেন দৌঁড়ে পালায়। পিঠাপ্রেমি মানুষ পিঠার স্বাদ গ্রহণ করতে ফুটপাতের এসব পিঠার দোকানে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা ভিড় করেন। আবার গ্রামের অনেকে পিঠার দোকানের চুলার পাশে বসে গরম পিঠা খাওয়াকে রুটিনে পরিণত করেছেন। কেউ কেউ পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য পিঠা কিনে বাসা-বাড়িতে নিয়ে সবাই একসাথে বসে আনন্দ করে খান। তবে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী ও ছোট পরিবহণ শ্রমিকসহ অভিজাত শ্রেণির লোকজনের কাছে অত্যন্ত প্রিয় খাবার শীতের বিভিন্ন পিঠা। এই শীতে ফুটপাতের পিঠার দোকানিরা যেন ভদ্রঘরের অভিজাত গৃহবধূসহ সব পেশাশ্রেণির পরিবারের নারীদের পিঠা তৈরির কষ্ট থেকে মুক্তি দিয়েছে। পিঠা বিক্রির দোকানগুলো সাধারণত প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত এবং বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বসে। এ সব ভাসমান পিঠার দোকানিদের মধ্যে অধিকাংশরাই নিম্ন আয়ের বা দরিদ্র পরিবারের। সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে বা ভাত কাপড় যোগাতে তারা রাস্তার পাশে পিঠা তৈরি করে বিক্রি করেন।
উপজেলার ৬নং পাঠাকাটা ইউনিয়নের বালিগন্জ বাজারের পিঠা বিক্রেতা মোছাঃ মিনারা বেগম এমন একজন পিঠা বিক্রেতা। তিনি জানান, অন্তত ০৫ বছর ধরে তিনি পিঠা বিক্রি করেন। পিঠা বিক্রির আয়েই চলে তার সংসারের চাকা। মোছাঃ মিনারা বেগম জানান চালের গুঁড়া দিয়ে জলীয় বাষ্পের আঁচে তৈরি করি ভাঁপা পিঠা। আর মিষ্টি করার জন্য দেয়া হয় গুড় বা চিনি। স্বাদ বৃদ্ধির জন্য নারকেলের কিছু শাঁস ছিটিয়ে দেয়া হয়। চিতই পিঠা খেতে সুস্বাদু করতে আলাদা বাটিতে সরিষার ভর্তা, শুটকি ভর্তা, ধনেপাতা ভর্তা দেয়া হয়। তিনি প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০টি পিঠা বিক্রি করেন। এই আয়েই চলে তার সংসারের সব খরচ। মোছাঃ মিনারা বেগম বলেন, আমার মতো উপজেলার শতাধিক দরিদ্র পরিবার পিঠা বিক্রি করেই তাদের সংসারের যাতীয় খরচসহ ছেলেমেয়ের পড়ালেখার খরচ বহন করেন। পিঠা খেতে আসা স্থানীয় তৌহিদ জানান, তিনি সপ্তাহে অন্তত ০৪ থেকে ০৫ দিন ভাসমান এ সব দোকানে বিভিন্ন পিঠা খেতে আসেন। হাতের নাগালে ও অপেক্ষাকৃত কম দামে পিঠা পেয়ে তার মতো অনেকে খুশি। শফিক বলেন, আমি নিজে পিঠা খেয়ে পরিবারের অন্যদের জন্য নিয়ে যাই। বন্ধুদের সঙ্গে বালিগন্জ বাজারে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে পিঠা খেতে আসা তাসনিম ৬নং পাঠাকাটা ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি মোঃ মনোয়ার হোসেন বলেন, শীতের প্রায় প্রতি সন্ধ্যায় সরিষার ভর্তা বা শুঁটকি ভর্তা বা ধনেপাতা ভর্তা দিয়ে চিতই পিঠা খাওয়া কিযে স্বাদ তা বলে শেষ করার মতো নয়। মুখরোচক বিভিন্ন ভর্তা দিয়ে চিতই পিঠা খাওয়ার কথা মনে হলেই সবার জিভে জল আসার কথা। আর এমন স্বাদের কারণেই তারা শীতকালের প্রায় প্রতিদিন পিঠা খেতে বাজারে আসেন।