মারুফ সরকার,স্টাফ রির্পোটার: র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন র্যাব-৩ গত ২২ মার্চ ২০২৩ ইং পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার ইন্দ্রকুল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর দুই শিক্ষার্থী মোঃ মারুফ হোসেনে বাপ্পী এবং মোঃ নাফিজ মোস্তফা আনছারী একই স্কুলে পড়ুয়া কয়েকজন উশৃঙ্খল শিক্ষার্থীর হাতে ছুরিকাঘাতে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার হয়। উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের পরিবার বাদী হয়ে বাউফল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-১৮ তারিখ ২৪ মার্চ ২০২৩। উক্ত হত্যাকান্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ফলশ্রতিতে র্যাব-৩ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র্যাব-৩ সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল নরসিংদী জেলার রায়পুরা ও রাজধানীর পল্লবী এলাকা হতে উক্ত চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের প্রধান আসামি মোঃ রায়হান কাজী রিমন (১৫) ও তার অন্যতম সহযোগী মোঃ হাসিবুল ইসলাম হৃদয় (১৫),কে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা বর্ণিত হত্যাকান্ডের সাথে তাদের জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।
দুপুরে কাওরানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গনমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন,গত ২২ মার্চ ২০২৩ তারিখ বুধবার ক্লাসের বিরতির সময় নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সৈকত এবং দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মারুফের মধ্যে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এরই মধ্যে নবম শ্রেণীর পড়ুয়া আরেক শিক্ষার্থী রায়হান এগিয়ে এসে সৈকতের পক্ষ নিয়ে মারুফ ও তার সহপাঠী নাফিজ, সিয়ামসহ বেশ কয়েকজনের সাথে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হয় এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। আশেপাশের আরও কিছু শিক্ষার্থী এগিয়ে এলে উক্ত স্থানে নবম এবং দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। কিন্তু তৎক্ষণাত ক্লাস শুরু হওয়ার সময় হয়ে যাওয়ায় তারা যার যার ক্লাসে চলে যায়।
দুপুরে টিফিন বিরতিতে পুনরায় তাদের দেখা হলে রায়হান দশম শ্রেনী পড়ুয়া মারুফসহ অন্যান্যদের পরবর্তীতে দেখে নিবে বলে হুমকি প্রদান করে। উল্লেখ্য যে, ১৯ মার্চ ২০২৩ তারিখ সকালে মারুফের বন্ধু সিয়াম এবং রায়হানের মধ্যে তর্কবিতর্কের ঘটনা ঘটে। তাদের মধ্যে পূর্ব শত্রুতার থাকায় একটি রেষারেষির পরিস্থিতি বিরাজমান ছিল।
রায়হানসহ আরো বেশ কয়েকজন বিদ্যালয় সংলগ্ন পাংগাশিয়া ব্রিজের কাছাকাছি গিয়ে মারুফ, নাফিজ, সিয়ামসহ অন্যান্যদের ব্রিজের উপর গতিরোধ করে। মারুফ, সিয়াম, নাফিজসহ অন্যান্যরা উক্ত ব্রিজের কাছাকাছি গেলে রায়হানের নেতৃত্বে ব্রিজের উপর আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা সাইদুর সৈকত, হাসিব হৃদয়, নাঈম হোসেন, সিফাত এবং মশিউর মিলে মারুফ, নাফিজসহ অন্যান্যদেরকে মারধর শুরু করে। এরপর রায়হান ছুরি নিয়ে এলোপাতাড়ি সিয়াম, মারুফ ও নাফিজকে ছুরিকাঘাত করতে থাকে।
রায়হানের ছুরিকাঘাতের ফলে তারা মারাত্মকভাবে আহত হয়। ঘটনাস্থলে তিন শিক্ষার্থীকে রক্তাক্ত অবস্থায় রেখে হত্যাকারীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে সিয়াম, নাফিজ ও মারুফকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মারুফ ও নাফিজকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। সেখানে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মারুফ এবং নাফিজকে মৃত ঘোষণা করে।
এসব ঘটনার জের ধরে স্কুল ছুটির পর রায়হানের নেতৃত্বে এই নৃশংস হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হয়। উল্লেখ্য যে, গ্রেফতারকৃত রায়হান নিয়মিত ফ্রি-ফায়ার এবং পাবজি গেম্স এ আসক্ত ছিল। এসব গেমস্ এ মারামারি দেখে এ ধরনের নৃশংস কাজে উৎসাহিত হয়েছে বলে জানায়।
গ্রেফতারকৃত রায়হান রিমন এবং গ্রেফতারকৃত হাসিবুল
হৃদয় স্থানীয় স্কুলটির নবম শ্রেণীর ছাত্র। তারা তাদের সমমনা কিছু উশৃঙ্খল সহপাঠীদের নিয়ে পাংগাশিয়া এলাকায় প্রভাব বিস্তারের জন্য সবসময় তাদের সাথে ছুরি, চাকু ইত্যাদি বহন করত এবং মারামারিসহ অন্যান্য অপরাধমূলক বিভিন্ন ঘটনায় লিপ্ত থাকত।এছাড়াও, গ্রেফতারকৃত হাসিবুল এলাকায় বিভিন্ন সময়ে মারামারিরসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে গ্রেফতারকৃত রায়হানের যাবতীয় অপকর্মের অন্যতম সহযোগী হিসেবে থাকত।গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।