সেই বানরটার কথা মনে আছে? আরে সেই বানর যে তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে প্রথম মিনিটে ৪ ফুট উপরে উঠতো পরের মিনিটে ৩ ফুট নিচে নেমে আসতো। তৈলাক্ত বাঁশটি ২০ ফুট লম্বা হলে এর মাথায় চড়তে বানরটির কত সময় লাগবে?
এই বানরের ভয়ে বহুবার পেট কামড়েছে, হালকা জ্বরও হয়েছে, আবিস্কার করতে হয়েছে স্কুলে না যাওয়ার নতুন নতুন অজুহাত। কে সেই ভদ্রলোক যে এতদামী তেল বাঁশে মেখে রাখতো
? আর সেই বাঁনরটাই বা কোন জঙ্গলের যে তৈলাক্ত বাঁশ পেয়েই তাতে উঠা শুরু করে দিলো? কতই বুক ধড়ফড় করেছে সেই বাঁশ আর বাঁনরের ভয়ে, এতদিনে তাঁকে খুঁজে পেলাম…
অনেক গবেষণায় জানা গেছে, দেশে সবচেয়ে বেশী পানি অপচয় করেছেন তিনি। উনি কোনও চৌবাচ্চা কোনদিনই ভর্তি হতে দিতেন না, এক নল দিয়ে পানি ঢুকলেও উনি চৌবাচ্চা ফুটো করে রাখতেন ফলে অনেক পানি বেরিয়ে পড়ে যেতো..!!!
শুধু কি পানির অপচয় ? ভদ্রলোক কোনদিকেই আর কোনোকিছু আস্ত রাখেননি…কাউকে এক মুহুর্ত শান্তিতে থাকতে দেননি কোনোদিন…
চৌবাচ্চা ফুটো করেছেন, ল্যাম্পপোস্ট ভেঙে রেখেছেন, সাইকেলে করে সোজা স্কুলে যেতে দেননি। সামান্য স্কুল যেতে অর্ধেক রাস্তা নৌকো, ১/৩ ভাগ রিক্সা আর ২ কিমি পায়ে হাঁটতে বাধ্য করেছেন! তারপরেও যে স্কুলে গেছি এই তো অনেক !
বাবা ছেলেতে বসে একটু শান্তিতে কথা পর্যন্ত বলতে দেননি। ৫ বছর বাদে কার বয়েস কার তিনগুন হবে এ নিয়ে ভাবিয়ে মেরেছেন।
বেশী শ্রমিককে একসঙ্গে পুরো কাজ শেষ করার সুযোগ পর্যন্ত দেন নি। কয়েকদিন কাজ করার পর কিছু শ্রমিককে কাজ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে তার কারণে। অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে হয়েছে অল্প শ্রমিক দিয়ে। বেচারাদের বাড়তি খাটতে হয়েছে! এরপরেও হিসাব চেয়েছেন বাকী কাজ কতদিনে শেষ হবে?
তিনি দুটো ট্রেনকে উল্টো অভিমুখে দৌড় করিয়ে প্ল্যাটফরমের দৈর্ঘ্য জানতে চেয়েছেন। আবার ডেঞ্জারাস ভাবে দুটো ট্রেনকে একই দিকে ছুটিয়েছেন। আল্লাহ বাঁচিয়েছেন, যদি একটা কিছু ঘটে যেতো!!
চা খাওয়ার আগে আসাম আর সিলেট মিশিয়ে একাকার করে চায়ের বারোটা বাজিয়েছেন।
চলন্ত ট্রেনে ট্রেনে বিপজ্জনক রেস করিয়েছেন, শান্ত নদীতে নৌকো চলতে দেখলেই উনার সহ্য হয়নি, উল্টোদিকে স্রোত বইয়ে দিয়েছেন…
আর অবলা পশুপাখিদের ওপর যা করেছেন তা দেখে ডাকাতের চোখেও পানি চলে আসে। বেচারা একটা কাক, সাতেও নেই পাঁচেও নেই উড়ে যাচ্ছিল তাকে জোর করে একবার এ ট্রেনের ছাদ একবার ও ট্রেনের ছাদ বসিয়েছেন, অকারণে একটা নির্দোষ বাঁদরকে সারাদিন তেল মাখা বাঁশে ওঠানামা করিয়েছেন।
এমনকি অবলা গরুকে পর্যন্ত ছাড়েননি, কিপ্টের মতো ছোটো দড়ি দিয়ে বেঁধে গরুটাকে ঘাস তো খেতেই দেননি আবার যেটুকু খেয়েছে তারও পঁইপঁই করে হিসাব নিয়েছেন।
এতকিছুর পরেও রাগ হবে না ? কয়েকপাতার পাটিগণিত বই, তার পাতায় পাতায় সিনেমার মতো টেনশন…!!
সব অন্যায় অত্যাচার কষ্ট রাগ অভিমান ভুলে গেলাম, যথন জানলাম, এত কষ্টের উদভাবক একজন বাঙ্গালী। সব রাগ পানি হয়ে গেলো, পাটি গণিতের এই ভিলেনকে নিয়ে শিঘ্রোই লিখবো..
লেখকঃ বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির আইন প্রশিক্ষক হাসান হাফিজুর রহমান।