গণমাধ্যম যে জ্যোতিষ বিদ্যা রপ্ত করার মাধ্যম নয়, সংবাদপত্র কখনো যদি লাইগ্যা যায় টাইপের লটারিও নয়-আশা করি গাজীপুরের নির্বাচন থেকে অনেকেই সে শিক্ষা নিয়ে নিবেন। ভোট গণনার শুরু থেকে প্রতিটি ধাপেই জায়েদা খাতুন প্রাপ্ত ভোটে নৌকা থেকে বেশ এগিয়ে ছিলেন। রাত ১০ টার দিকে কয়েক দফার ফলাফলে তার এগিয়ে থাকা ভোটের ব্যবধান সাত হাজার থেকে দশ হাজার পর্যন্তও ছিল। তা সত্তেও কোন্ বিবেচনায় দুটি জাতীয় দৈনিকে আজমতকে নগরপিতা বানিয়ে “আগাম ফলাফলযুক্ত“ লীড নিউজ প্রকাশ করলেন? ভোট চুরি কিংবা ডাকাতির মাধ্যমেও যদি আগাম কথাটি মিলে যেতো তাহলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াতো তা কি কেউ ভেবে দেখেছেন? নির্ঘাত পত্রিকা দুটির সম্পাদকসহ কলাকুশলীরা অনেকেই পীর বাবার আস্তানা বানিয়ে বেশুমার ফায়দা হাসিলের পথে নেমে পড়তেন।
একজন এডভোকেট আজমত উল্লাহর জন্য, একটি রাজনৈতিক দলের জন্য অতিমাত্রায় আবেগ দেখাতে গিয়ে সাংবাদিকতাকে কবর দিতে একটুও বাধলো না? নিজেরই কষ্টে শ্রমে গড়ে তোলা সন্তানতুল্য পত্রিকাকে আস্থাহীনতার নর্দমায় ডুবিয়ে দিতে একবারও মনটা কাঁদলো না?
আসলে তাদের পেশাদারিত্বের বালাই নেই, বেনিয়া হিসেবে পত্রিকাকে আদা, পেয়াজ, লবন গণ্য করে কেবল ব্যবসা করেন তারা। পত্রিকা দিয়ে বাণিজ্য না হলে তা ছেড়ে লবনের ব্যবসা ধরতে তারা কালবিলম্বও করবেন না। এসব পত্রিকা পর পর দুদিন হাতে নিলেই বুঝবেন, কি যে তারা লেখে? কি যে বলতে চান? সবকিছুই ধোয়ায় অন্ধকার। আর সব মিলিয়ে পত্রিকাকে নানা ভাবে ব্যবহারের অপকর্ম দেখলে ঘৃণায় শরীর রি রি করবে বৈ কি।
নিজেরা দলীয় কর্মি সমর্থক সেজে অন্ধ সমর্থন করুন, ভাই ভাই বলে মুখে ফেনা তুলুন তাতে কেউ বাধা দিবে না। কিন্তু কর্মি হিসেবে গুরুত্ব বাড়াতে নিজের কব্জায় থাকা পত্রিকাকে দালালি কাজে ব্যবহার করলে নেতা মন্ত্রীও তা ভালো চোখে দেখে না। মুখে মুখে আপনাকে ডাকাডাকি করলেও ভেতরে কেবলই ব্যক্তিত্বহীন চাটুকার, দালাল ভাবে-খুব পরখ করে কথাটা মিলিয়ে দেখবেন। সুতরাং নিজে দালাল সাজলে সাজুন কিন্তু আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকা পত্রিকাকে প্রকৃতই গণমাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করুন। একদিন এ পত্রিকাই আপনার সকল ব্যর্থতার ডোবা জলে সফলতার পতাকা উড়িয়ে দিবে….
লেখকঃ সাংবাদিক জগতের নক্ষত্র সাইদুর রহমান রিমন