প্রতিনিয়ত কোথাও না কোথাও চিকিৎসকদের দ্বারা সাংবাদিকরা হামলা, লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রায়শই এ ধরনের হামলা,লাঞ্ছিত কিংবা মামলার আসামীও হচ্ছেন। চিকিৎসকরাও পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোথাও রোগির মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত হয়ে থাকেন।
এসব সৃষ্ট পরিস্থিতিতে স্বজনদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সংবাদ সংগ্রহে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে থাকেন। আর সেখানেই বিপত্তি। কেনইবা এই বিপত্তি বিবেকবান মানুষদের তা কিন্তু খতিয়ে দেখা উচিত। কেননা, দেশে সকল স্তরে যখন হাইব্রিডের উৎপাদন বাড়ছে তখন কেন চিকিৎসা পেশায় থাকবেনা?আনাড়ি আর হাইব্রিডদের কারণে অপচিকিৎসা হচ্ছে, কোথাও ওই ধরনের চিকিৎসা নিতে গিয়ে রোগী মারা যাচ্ছে। তবে সংবাদকর্মীরা সংবাদ সংগ্রহের গিয়ে কেনো মা’র খাবেন,আহত কিংবা লাঞ্ছিত হবেন? প্রশ্নটির সমাধান জরুরী।
তবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগির মৃত্যুর এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গেলে ক্যামেরা দেখেই উত্তেজিত হয়ে ওঠেন চিকিৎসকরা। এমনকি সাংবাদিকদের সাথে সৃষ্ট ঘটনায় কোনরুপ বিবৃতি না দিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে মারধর, ক্যামেরা ভাঙচুর, হামলা কিংবা উল্টো মামলা,হয়রানীসহ নিজেদের দোষ এড়াতে ধর্মঘটের ডাক দিয়েও থাকেন। যা একটি স্বাধীন দেশের জন্য অশুচি। যা রীতিমত চিকিৎসা পেশার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলার মত। এহেন পরিস্থিতি থেকে উত্তরনের উপায় খুঁজে বের করা উচিত।
এমনই একটি ঘটনা রবিবার ১২ নভেম্বর কুমিল্লা শহরে ঘটেছে। জানাগেলো, নগরীর একটি হসপিটালে ২ মাস বয়সী শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ, উত্তপ্ত পরিস্থিতির সংবাদ সংগ্রহের গেলে সংবাদকর্মীর উপর হামলা শুরু করেন চিকিৎসকরা।
আচ্ছা, প্রিয় পাঠক ও সুশীল সমাজ কিংবা রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ অথবা চিকিৎসক আপনারাই বলুন, চিকিৎসকরা তাদের দায়িত্বে রেখে শিশুটিকে মেরে ফেললেন(!) আর সংবাদকর্মীরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গেলেন সেখানে হামলার ঘটনাটি ঘটলো কেনো?? এটি কি বিচার্য বিষয় হতে পারেনা? আইনতো কেউ হাতে তুলে নিতে পারেন না। এটাতো স্বাধীন একটি দেশ। যার যা মন চাইবে তা করার কি আদৌ সুুযোগ আছে?
এবার শুনুন আসলে কি ঘটনা সেখানে ঘটেছিল :
কুমিল্লায় ভুল চিকিৎসায় ২মাস বয়সী শিশু হোসাইনের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় হলি কেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক এম কাইয়ুমের বিরুদ্ধে এই অপচিকিৎসার অভিযোগ ওঠে। ঐ হাসপাতালটির এনআইসিইউতে এ ঘটনা ঘটে। এ সংবাদের তথ্য খুঁজতে গেলে সংবাদকর্মীদের উপর হামলা করে। এতে ডিবিসি চ্যানেলের ক্যামেরা ভেঙ্গে ফেলেন ওই হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোরশেদুল আলম। এতে আহত হন ডিবিসির ক্যামেরাপার্সন বিল্পব। তিনি কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নিহত শিশুটির নাম হোসাইন। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার গলিয়ারা দক্ষিণ ইউনিয়নের বাড়াইপুর গ্রামে বাড়ি। জানা যায়, গত ১৪ দিন আগে জ্বর-কাশির সমস্যা নিয়ে হলি কেয়ার হাসপাতালের নিয়ে আসেন বাচ্চার বাবা সোলেমান। পরে ওই শিশুকে ডা: এম এ কাইয়ুম চিকিৎসা দেন। সেখানে তার দেয়া চিকিৎসাপত্র অনুযায়ী ওষুধ প্রয়োগ করেন হলি কেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
একপর্যায়ে ওই শিশুর নিমনিয়া হয়েছে বলে ১০ দিন ধরে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে স্বজনরা বাচ্চা কেমন আছে জানতে চাইলে ডাক্তার কাইয়ুম বলে রুগী আগের চেয়ে ভালো আছে। পরে হঠাৎ ১৩ দিনের মাথায় বলে বাচ্চার অবস্থা করুন ঢাকায় নিতে হবে। পরে আরেক ডাক্তার শিমুল বাচ্চাকে একটি ইকো করতে বললে দ্রুত কে আলী শিশু হসপিটালে ইকো করে আনলে ডাক্তার শিমুল বলেন শিশুরতো হার্টে সমস্যা আপনারা এত দিন নিমুনিয়ার চিকিৎসা কেন করেছেন পরে ডাক্তার বলেছে দ্রুত ঢাকায় নিন। পরে স্বজনরা ঢাকায় একটি হসপিটাল দেখে বাচ্চাকে নিয়ে যাবে এমন সময় শিশুটি মারা যায়।
নিহতের বাবা সোলেমান অভিযোগ করে বলেন, ডা. কাইয়ুম আমার বাচ্চাকে ভূল চিকিৎসায় মেরে ফেলছে। গত ১৪ দিন আগে আমার বাচ্চার নিউমনিয়া হয়েছে বলে এনআইসিইউতে ভর্তি করি। অথচ ১৩ দিনের মাথায় আরেক ডাক্তার শিমুল জানতে পারলেন যে বাচ্চার নিউমনিয়া হয় নাই, বাচ্চার হার্টে সমস্যা। পরে দ্রুত ঢাকায় নেব এমন সময় আরেক ডাক্তার বলছে তোমার বাচ্চা মারা গেছে। চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভূল চিকিৎসা করেছে জানিয়ে বিচার দাবি করেন।
চিকিৎসকরা এখন বাস ড্রাইভারের ভুমিকায় চলে গেছেন। যেমনটা কথায় কথায় বাস ধর্মঘট ডেকে যাত্রী সাধারণের ক্ষতি করে থাকেন। তেমনি ডাক্তাররা নিজেদের দোষ এড়াতে বিনা কারণে সাংবাদিকের ওপর হামলা-নির্যাতন এমনকি ধর্মঘটের ডাক দেন। এহেন পরিস্থিতি থেকে উত্তরন দরকার। প্রয়োজন চিকিৎসকদের সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং দ্বিপাক্ষিক সমন্বয়। আমরা বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের পক্ষ থেকে চিকিৎসক নেতবৃন্দের সাথে প্রয়োজনে দ্বিপাক্ষিক সমন্বয় বৈঠক করতে চাই। চিকিৎসক দ্বারা আর কোন সংবাদকর্মী নির্যাতন হোক তা আমরা চাইনা। আসুন, সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমরা সুন্দর সমাজ বিনির্মানে সকলেই আন্তরিক হই।
লেখক: আহমেদ আবু জাফর, চেয়ারম্যান, ট্রাস্টি বোর্ড ও সভাপতি, বিএমএসএফ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি, ১৩ নভেম্বর ২০২৩ খ্রি:। ০১৭১২৩০৬৫০১ jaforsbds@gmail.com.