ঢাকা, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪:
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বিএনপি নির্বাচনের পর কোমর ভেঙে পড়ে গিয়েছিল, আমরা চাই তারা হতাশা কাটিয়ে কোমর সোজা করে দাঁড়াক।’
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীতে বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে গ্রন্থমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে সাংবাদিক গবেষক মুহা: মীযানুর রহমানের ‘বদলে যাওয়া বাংলাদেশ’ এবং কবি রেবেকা শিল্পীর চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ ‘বিমূর্ত’র মোড়ক উন্মোচন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
গ্রন্থ দু’টির প্রকাশক অনার্য প্রকাশনীর চেয়ারম্যান সফিক রহমান, নদী নিরাপত্তার সংগঠন নোঙর সভাপতি সুমন শামস, ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি এইচ এম মেহেদী হাসান ও অভ্যাগত অতিথিবর্গ এ সময় মোড়ক উন্মোচন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
হাছান বলেন, ‘আমরা আশা করি, বিএনপি হতাশা কাটানোর জন্য লিফলেট বিতরণ ও নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচির মধ্যেই থাকবে, পেট্রোলবোমা নিয়ে মানুষের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়বে না।’
এর আগে গ্রন্থমোড়ক উন্মোচনকালে ড. হাছান বলেন, একুশের বইমেলা প্রাণের মেলা, বাঙালির মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। তরুণ-তরুণী, শিশু-কিশোর, যুবা, প্রৌঢ়, বৃদ্ধ সবাই মেলায় আসেন একটু নি:শ্বাস ফেলা, বইয়ের পাতা উল্টানো, বই কেনার জন্য। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটি মানবিক সমাজকল্যাণ রাষ্ট্র গড়া এবং সেই লক্ষ্যে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
আজকের দেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ বর্ণনা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান বলেন, ১৫ বছরের আগের বাংলাদেশের সাথে আজকের অনেক পার্থক্য। আবার আজকের সাথে আগামী ১০ বছর পরের বাংলাদেশেরও অনেক পার্থক্য হবে। পদ্মা সেতু, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মেট্রোরেলে ভ্রমণ, নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল এ সব অভাবনীয় উন্নতির মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলেছি আমরা।
বক্তৃতা শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোড়ক উন্মোচিত বই দু’টির প্রকাশক অনার্য প্রকাশনীর স্টল পরিদর্শন করেন ও বইমেলা ঘুরে দেখেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তুরস্ক এবং ইতালির রাষ্ট্রদূতদের সাক্ষাত
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেন (Ramis Şen) এবং ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও এলেসান্দ্রো (Antonio Alessandro) পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন।
তুরস্কের রাষ্ট্রদূত আগামী ১-৩ মার্চ আনতালিয়া ডিপ্লোম্যাসি ফোরামের আসন্ন তৃতীয় সম্মেলনের ওপর আলোকপাত করেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছানের কার্যকর অংশগ্রহণের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। চলতি সনে বাংলাদেশের সাথে তুরস্কের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন নিয়ে আলোচনা করেন তারা।
ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজায় যুদ্ধ, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি তুরস্কে বাংলাদেশিদের বৈধ অভিবাসন বৃদ্ধি, অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধ, দু’দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণের বিষয় বৈঠকে স্থান পায়।
ইতালির রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ককে বিশেষ বলে অভিহিত করে বলেন, প্রায় ২ লাখ বাংলাদেশি অভিবাসী সেখানে রয়েছেন যারা দু’দেশের অর্থনীতিতেই ইতিবাচক ভূমিকা রেখে চলেছে। বৈধ উপায়ে আরো বাংলাদেশি সেখানে নেওয়ার বিষয়েও আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি। বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী চামড়াজাত পণ্য, অটোমোবাইল, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ইতালির সহযোগিতা কামনা করেন।
মন্ত্রী এবং রাষ্ট্রদূত উভয়েই ইতালিতে ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিপাক্ষিক সফর ও ২০২৩ সালে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সম্মেলনের সাইডলাইনে ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের কথা স্মরণ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রস্তাবে রাষ্ট্রদূত যৌথ চেম্বার অভ কমার্স প্রতিষ্ঠার বিষয়ে গুরুত্ব দেন।
দেশে-বিদেশে শত ব্যস্ততার মাঝেও ঢাবিতে ক্লাস নিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
গত জানুয়ারিতে নবগঠিত মন্ত্রিসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরে আজই প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ৭ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের মাঝে “ক্লাইমেট চেঞ্জ” বিষয়ক কোর্সের উপরে ক্লাস নিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে দুই ঘন্টা ব্যাপী তিনি শিক্ষার্থীদের মাঝে উক্ত কোর্সের ওপরে লেকচার প্রদান করেন। ২০১৮ সাল থেকেই ড. হাছান মাহমুদ ঢাবির সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগে খণ্ডকালীন অধ্যাপনা করে আসছেন। তিনি বিভাগের ৭ম এবং ৮ম সেমিস্টারের “গ্লোবাল ক্লাইমেট চেঞ্জ” ও “ইভ্যুলেশন এন্ড আর্থ বায়োস্ফিয়ার” এ দু’টি কোর্সে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেন।
সরকারি ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডের ব্যস্ততা, সপ্তাহান্তে নির্বাচনী এলাকায় গমন, বিদেশ সফর ইত্যাদি ব্যস্ততার মাঝেও নিয়মিত ঢাবির সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগে খণ্ডকালীন অধ্যাপনা করেন আওয়ামী লীগের এ যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরে এ দিন প্রথম সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগে ক্লাস নিতে গেলে বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ড. হাছানকে অভিনন্দন জানান।
রাজনৈতিক ভাবে প্রচন্ড ব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও ড. হাছান মাহমুদ নিয়মিত খন্ডকালীন অধ্যাপনার সাথে যুক্ত। এর আগে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে ও তার আগে পরিবেশ বিজ্ঞান ও বাংলাদেশ স্টাডিস বিষয়ে ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি এবং নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন।
শিক্ষাজীবনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) থেকে রসায়ন বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন ড. হাছান মাহমুদ। এরপর বেলজিয়ামের ব্রিজ ইউনিভার্সিটি অব ব্রাসেলস থেকে হিউম্যান ইকোলজি এবং ইউনিভার্সিটি অব লিবহা দু ব্রাসেলস থেকে আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
৩টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর শেষে পরিবেশ রসায়ন বিষয়ে বেলজিয়ামের লিম্বুর্গ ইউনিভার্সিটি সেন্ট্রাম থেকে পিএইচডি করেন ড. হাছান মাহমুদ।