আজ ০২ মার্চ ২০২৪ খ্রিঃ, ১৮ ফাল্গুন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, শনিবার সকাল ১১:৩০ ঘটিকায় কেএমপি’র সদর দপ্তরস্থ সম্মেলন কক্ষে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এএন্ডও) জনাব সরদার রকিবুল ইসলাম, বিপিএম-সেবা মহোদয় খুলনা সদর থানা পুলিশ কর্তৃক চাকুরী ও বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎকারী ও অবৈধ কাজে লিপ্ত ভুয়া এনএসআই কর্মকর্তা গ্রেফতার সংক্রান্তে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের সাথে প্রেস ব্রিফিং করেন।
কেএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এএন্ডও) মহোদয় মিডিয়া বিফ্রিংয়ে বলেন, “খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ অপরাধ দমন, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ এবং নগরবাসীর সেবায় সর্বদা তৎপর। আমরা বিগত কয়েক মাস থেকেই অস্ত্রধারী, সন্ত্রাসী, নাশকতাকারী, জঙ্গী, মাদক ব্যবসায়ী, সাজাপ্রাপ্ত পরোয়ানাভুক্ত আসামী, হত্যাকান্ডে জড়িত আসামী ও ভূমিদস্যুসহ সমাজে প্রভাব প্রতিপত্তিশালী যারা নাশকতা সৃষ্টি করতে পারে তাদের গ্রেফতারের জন্য সাঁড়াশী অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রেখেছি। গত আগস্ট ২০২৩ খ্রি: থেকে ইতোমধ্যেই আমরা ২৩ টি আগ্নেয়াস্ত্র , ২২ টি ম্যগজিন, ১৫৪ রাউন্ড গুলি, ২৯ টি চোরাই মোটরসাইকেল, সাড়ে ০৪ লক্ষ জাল টাকা, সন্ত্রাসী ও নাশকতা কর্মকান্ডে ব্যবহৃত ০৩ টি ককটেল, ৪০০ গ্রাম গান পাউডার, ৪৫০ গ্রাম মমছাল, ৯০০ গ্রাম পটাশ, চাপাতি, রাম দা, ছোরা, চাইনিজ কুড়াল উদ্ধারসহ স্বল্প সময়ে ক্লু-লেস হত্যা মমলার মূল রহস্য উদঘাটনসহ আসামী গ্রেফতার, চোরাই স্বর্ণালঙ্কার ও বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য এবং ০৫ জন জঙ্গী, বিপুল পরিমাণ উগ্রবাদী বই, পোস্টার, লিফলেট ও ডিভাইসসহ আসামী গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি।”
তিনি আরো বলেন, “এরই ধারাবাহিকতায় অত্র মামলার বাদী দূর্বা দাশের এজাহারের ভিত্তিতে আসামী বিপ্লব বড়াল(৩২), পিতা-দিরেন বড়াল, মাতা-শিখা রানী, সাং-বিল ছোনাওঠা, থানা-কাঠালিয়া, জেলা-ঝালকাঠি সহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন আসামীর বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়। তৎপরে গত ০১ মার্চ ২০২৪ খ্রিঃ ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া থানার বিল ছোনাওঠা এলাকা হতে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
এছাড়াও, আসামী বিপ্লব বড়াল(৩২), পিতা-দিরেন বড়াল, মাতা-শিখা রানী, সাং-বিল ছোনাওঠা, থানা-কাঠালিয়া, জেলা-ঝালকাঠি একজন প্রতারক এবং সে নিজেকে এনএসআই/ডিজিএফআই/পুলিশ কর্মকর্তা/বিসিএস কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন মেয়েদের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তাদের সাথে অনৈতিক কাজ করে অনৈতিক ছবি ও ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে। উক্ত কুরুচিপূর্ণ ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া ভয় দেখিয়ে অবৈধ শারিরীক সম্পর্ক স্থাপনসহ তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ ও নগদ অর্থ আত্মসাত করাই তার মূল পেশা। আসামী বিপ্লব বড়াল ব্যক্তি জীবনে অবিবাহিত। তার কোন রাজনৈতিক পরিচয় নাই। আসামীর পিতা একজন দিনমজুর এবং তার পরিবার একটি কুঁড়েঘরে বসবাস করে। আসামী বিপ্লব বড়াল ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়া থানাধীন বিল ছোনাওঠা এলাকায় তার নিজ গ্রামে বড় হয়েছে। আসামী বিপ্লব বড়ালের বিরুদ্ধে ০২ টি মামলা রয়েছে এবং তার বড় ভাই মনা বড়াল একজন পেশাদার ডাকাত তার বিরুদ্ধে কাঁঠালিয়া থানাসহ বিভিন্ন থানায় ০৪ টি মামলা রয়েছে। তারা দুই ভাই আন্তঃ জেলা ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য।
উল্লেখ্য যে, অনুমান ছয় মাস পূর্বে আসামী বিপ্লব বড়ালের সাথে বাদীর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হয়। একপর্যায়ে আসামী বিপ্লব বড়ালের সাথে বাদীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আসামী বিপ্লব বড়াল মামলার সাক্ষী সহ বাদীর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিকট বাদীকে বিবাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাদীর সাথে খুলনা শহরের বিভিন্ন স্থানে দেখা করে। পরবর্তীতে আসামী বিপ্লব বড়ালকে বিবাহের কথা বললে বাদীকে সহ বাদীর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে জীবনের তরে শেষ করে ফেলবে। সে আরো বলে টাকা এবং স্বর্ণালংকার চাইলে বাদীকে মিথ্যা মামলায় ফাসাইয়া দিব। এক পর্যায়ে বাদী বিভিন্ন স্থানে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন যে, আসামী জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা(এনএসআই) এর কোন কর্মকর্তা নয়, সে একজন প্রতারক। এনএসআই এর ভূয়া কার্ড প্রদর্শন করে বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গদের নিকট হতে বিভিন্ন সময় সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চাকুরি দেওয়ার কথা বলে সু-কৌশলে অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন আসামীর সহযোগিতায় অর্থ আত্মসাত করেছে মর্মে জানা যায়।
আসামী নিজেকে জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (এনএসআই) এর কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়াসহ এনআইএস এর কার্ড প্রদর্শন করে বর্তমানে খুলনায় কর্মরত আছে বলে জানায়। পরবর্তীতে আসামী বাদীকে বিবাহের প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় সময় ব্যক্তিগত প্রয়োজনে বাদীর নিকট আর্থিক সাহায্য চায়। তারই প্ররোচনায় গত ২০/১০/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ দুপুর অনুমান ১২.০০ ঘটিকার সময় খুলনা সদর থানাধীন হেলাতলা স্বর্ণপট্টি বাংলাদেশ বেকারী নামক দোকানের সামনে পাঁকা রাস্তার উপর হতে আসামী বিপ্লব বড়াল অজ্ঞাতনামা আসামীদের সহযোগিতায় নিজেকে সরকারি বড় কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বাদী দূর্বা দাশের সাথে অপরাধ মূলক বিশ্বাসভঙ্গ করে বাদীর নিকট হতে নগদ ১,০০,০০০/-(এক লক্ষ) টাকা, ০৫(পাঁচ) ভরি স্বর্ণালংকার, যার মূল্য অনুমান ৫,০০,০০০/-(পাঁচ লক্ষ) টাকা সহ মোট ৬,০০,০০০/-(ছয় লক্ষ) টাকা, জনৈক জয়ন্ত ফকির এর সাথে অপরাধ মূলক বিশ্বাসভঙ্গ করে বাদীর নিকট হতে নগদ ৭,৪১,০০০/-(সাত লক্ষ একচল্লিশ হাজার) টাকা এবং দেবাশীষ রায় এর সাথে অপরাধ মূলক বিশ্বাসভঙ্গ করে বাদীর নিকট হতে নগদ ৫০,০০০/-(পঞ্চাশ হাজার) টাকা, সর্বমোট ১৩,৯১,০০০/-(তের লক্ষ একানব্বই হাজার) টাকা আত্মসাৎ করেছে। ধৃত আসামী বিপ্লব বড়ালকে যথানিয়মে রিমান্ডের আবেদনসহ বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। অত্র মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন আছে এবং অন্যান্য আসামী গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।’’
উক্ত মিডিয়া বিফ্রিংয়ে কেএমপি’র ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (সদর) অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত জনাব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন; ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) জনাব মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম; সহকারী পুলিশ কমিশনার (খুলনা জোন) জনাব জনাব গোপীনাথ কানজিলাল; সহকারী পুলিশ কমিশনার (স্টাফ অফিসার টু পিসি) জনাব ইমদাদুল হক; খুলনা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জনাব নিমাই চন্দ্র কুন্ডু-সহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ এবং পুলিশ অফিসারবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।