খুব দু:খজনক এক ঘটনা। মনটা এমনিতেই বিষন্ন তারপর একজন কৃতি নারী ফুটবলারের মৃত্যু সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে! বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে সন্তান প্রসবের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যান সাফজয়ী নারী ফুটবলার রাজিয়া খাতুন। ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৮ সাফজয়ী দলের সদস্য বুধবার রাতে ছেলে সন্তান প্রসবের প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে আক্রান্ত হন। সাতক্ষীরার এই আলোকিত নারীর এদেশের প্রত্যন্তের নারীদের আলোকমুখ হয়ে নতুন আশার প্রতীক ছিলেন। তিনিই আজ মাত্র ২৫ বছর বয়সে মৃত্যুতে হার মেনে পরাজিত যোদ্ধা হলেন মূল্যবান জীবনের দরে।
অপার বিস্ময়কর প্রযুক্তিনির্ভর বর্তমান চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার এ সময়ে একজন নারীর সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে অকাল মৃত্যু মানা যাচ্ছে না। সরকারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার নানান স্তরভিক্তিক সেবাকেন্দ্র আছে। প্রত্যন্তে থেকে জেলা সদর হাসপাতালে না নিলেও বাড়ির পাশে কমিউনিটি ক্লিনিকেও তো নিরাপদ প্রসবের ব্যবস্থা আছে। আছে রেফারেল সিস্টেম! একজন জাতীয় সম্পদ এক আলোকিত নারী রাজিয়াকে কেন সময় মত হাসপাতালে, বাড়ির পাশে কিংবা খানিক দূরের দক্ষ হাতে প্রাতিষ্ঠানিক সেবা কেন্দ্রে সন্তান প্রসব করানো গেল না?
তবে যে শুনি একেবারে প্রত্যন্তে নাকি গর্ভবর্তী নারীদের নানান অ্যাপসে নাম রেজিস্ট্রনের মাধ্যমে নজরে রাখা হয়। তাদের গর্বকালীন সেবার বিষযটি নিশ্চিত করা হয়? দেশ-বিদেশে খেলার সুযোগ পাওয়া আপাত দৃষ্টে সৌভাগ্যবান রাজিয়ার ক্ষেত্রে কি এমন ঘটলো? সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে কোন জটিলতায় তাঁর মৃত্যু হলো তা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানাচ্ছি।
মধ্যযুগের অন্ধকার সময়ে প্রসবকালীণ সময়ে মায়েদের মৃত্যু হয়েছে। আজ প্রসবকালীণ জটিলতা মায়ের মৃত্যু মানে অবহেলা, অবহেলা এবং অবহেলা! এর সাথে রাজিয়ার পরিবার, স্বজন, সমাজের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা জড়িত। সর্বপরি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা হয়ে রাষ্ট্রেরও দায় আছে! কেননা ২০৩০ সালের মধ্যে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মা ও শিশু দুটি মৃত্যুর হার অধের্কে নামিয়ে আনতে অঙ্গীকার করেছে। সেই অঙাগীকার পুরণে নানান পর্য়ায়ে কাজ হচ্ছে বলে জানি। তবে কেন রাজিয়ারা হাসপাতালে যান না। রাজিয়াদের মৃত্যু হয় রক্তক্ষরণে?
প্রশ্ন হলো : রাজিয়ার গর্ভাবস্থায় কমপক্ষে চার বার (মা-গর্ভের সন্তানের) গর্ভকালীণ চেকআপ করা হয়েছিল কি? সময়মত প্রসবের জন্য হাসপাতালে কেন নেওয়া হলো না ? স্থানীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কেন জানলো না সাফ ফুটবল জয়ী রাজিয়া মা হবেন? তাঁর সেবার ঘাটতি কেন কি কারণে হলো সেটা স্বামী স্বজন, শ্বাশুড়ি, স্থানীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কেন এই নারীকে গভর্কালীণ সেবা দিতে তাদের ট্রাকিংয়ে রাখতে পারলেন না সেই জবাব দেবেন কি? এই কয়েকটি প্রশ্নের আলোকে একজন গর্ভবর্তী মায়ের জটিলতা হবে কি না বা মায়ের সুস্থতা ও সুস্থ সন্তান জন্মের পূর্বশর্ত। এসব জানা ও জানানো কাজে সংশ্লিষ্ঠরা কি করছে এজবাব কে দেবেন?
একয়েকটি প্রশ্নের জবাবের মধ্যেই নির্ভন করছে এসডিজির লক্ষ্য পূরণের বাস্তবতা। সাফ ফুটবল জয়ী রাজিয়ার মৃত্যুই হোক সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মা মৃত্যুর শেষ উদাহরণ। রাজিয়া মৃত্যুর ঘটনা খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্ট জেলা সিভিল সার্জনের দৃষ্টি আকর্ষন করছি। এ মায়ের মৃত্যুর ঘটনা বিশ্লেষণের মাধ্যেমে এদেশের ভবিষ্যৎ মাযেদের সুরক্ষায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা: সামন্ত লাল সেনেরর প্রতি আহ্বান-রাজিয়ার অকাল মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখে কোথায় ছিদ্র যে ছিদ্র দিয়ে সাফল্যের সোনালী সঞ্চয় ঝরে যাচ্ছে? সেই গ্যাপ পূরণে ব্যবস্থা নেবেন প্লিজ।