পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মশিউর রহমান এনডিসি বলেছেন, ১৮ কোটি মানুষের অনেকেই এখনো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস জানে না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে হত্যার পর প্রায় একুশ বছর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা বিশ্বাস করতেন না সেই মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে অপপ্রচার ও অসত্য তথ্য পরিবেশন করে জাতিকে বিভ্রান্ত করে রেখেছিল। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসাম্প্রদায়িক চেতনাবোধ, কর্ম, আদর্শ, দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশ সম্পর্কে সঠিক তথ্য সকলেরই জানা উচিত।
আজ রাজধানীর বেইলী রোডে শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স ভবনের সভাকক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় দিবস-২০২৪ উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মশিউর রহমান এনডিসি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের আগে পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্যনীতির কথা উল্লেখ করে সচিব মশিউর রহমান বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানিদের সাথে এদেশের বিশাল বৈষম্য চিরতরে দুরীভূত করতেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা, দলগত দায়বদ্ধতা, সামাজিক দায়বদ্ধতা, রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতাসহ সকল ধরনের দায়বদ্ধতা আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতি রয়েছে। সে দায়বদ্ধতাকে স্বীকার করা, স্মরণ করা এবং সে অনুযায়ী আমাদের প্রত্যেকের দায় দায়িত্ব পালন করার জন্যই এ ধরনের আলোচনা সভা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতা ও হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি কোনো মনগড়া উপাধি নয়। এর সুনির্দিষ্ট পটভূমি আছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সাড়ে ৩ বছরের শাসনামলে বঙ্গবন্ধুকে একজন বড় মাপের প্র্রশাসকের আখ্যা দিয়ে পার্বত্য সচিব মশিউর রহমান এনডিসি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সাড়ে ৩ বছরের শাসনামল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন বড় মাপের প্রশাসক। তিনি বলেন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশের বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ট্রেন লাইন, ব্রীজ ও অন্যান্য অবকাঠামো দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার ও উন্নয়ন করা ছিল সত্যিকারের এক অসাধ্য কাজ। পশ্চিম পাকিস্তানিরা এদেশের কোষাগারের টাকা পয়সা, সম্পদ সব আগুনে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দিয়েছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অত্যন্ত দক্ষতা ও সততার সাথে সকল বিষয়গুলোতে সফলতা দেখিয়েছিলেন। সচিব মশিউর রহমান এনডিসি আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দুরদর্শিতা কাজের মধ্যে ছিল ভারতের সকল সৈন্য অতি দ্রুত ফেরত পাঠানো। দেশ স্বাধীনের এক বছরের মধ্যে একটি স্বার্থক সংবিধান রচনা করা যেখানে পশ্চিম পাকিস্তানিরা দুই যুগের মধ্যেও সুষ্ঠু একটি সংবিধান প্রণয়ন করতে পারেনি। সচিব বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশের সকল অফিস, আদালত, দপ্তর সবকিছু এই সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সম্পন্ন করেছিলেন। বাংলাদেশ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা বোর্ড, ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নের রূপরেখা বঙ্গবন্ধু তৈরি করে গিয়েছিলেন। সচিব বলেন, শুধু তাই নয়, যেখানে ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৯৮ ডলার, সেখানে সাড়ে তিন বছরে মানুষের মাথা পিছু আয় ৩ গুণ বাড়িয়ে তা ২৭৮ ডলারে উন্নীত করেছিলেন। যা বিশ্বের ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সচিব মশিউর রহমান এনডিসি বলেন, বর্তমানে সকল ক্ষেত্রে সূচকের দিক থেকে বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে।
সচিব মশিউর রহমান এনডিসি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনায় সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিচক্ষণ মানুষ। তিনি বলেন, দেশকে ভালবেসে দেশের উন্নয়ন কাজ করলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত হবে। মানুষের মুক্তির জন্য যে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন- তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০৪১ সালের উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কর্মপরিকল্পনা আমরা বাস্তবায়ন করবো। ২১০০ সালের ডেল্টা পরিকল্পনা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন তা বাস্তবায়নে পরবর্তী প্রজন্মকে এখন থেকেই প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান সচিব।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ৭ কোটি বাঙালিকে ধাপে ধাপে স্বাধীনতা আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ভাষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ৭ কোটি বাঙালিকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। অতিরিক্ত সচিব আমিনুল ইসলাম বলেন, অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে উন্নয়ন কাজে আমাদের ঝাপিয়ে পড়তে হবে। ২০৪১ সালের রূপকল্প বিনির্মাণে শিশুদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গিকার গ্রহণের জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
অতিরিক্ত সচিব প্রদীপ কুমার মহোত্তম এনডিসি বলেন, শিশুরা প্রকৃত অর্থে এখনও বঞ্চিত হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ কাজে তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। শিশুরা বলাৎকারের শিকার হচ্ছে। তিনি বলেন, এগুলো হলো আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। এসব থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। শিশুদের প্রতি সদাচরণ, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তব রূপ দিতে শিশু বান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, পরিবার থেকেই এর চর্চা করতে হবে।
যুগ্মসচিব সজল কান্তি বনিক তার বক্তব্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে একজন অসীম দয়ার হৃদয়গ্রাহী মহান পুরুষ হিসেবে আখ্যা দেন।
আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, উপসচিব কাজী চাহেল তস্তরী, উপসচিব মোংগল চন্দ্র পাল, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা নিয়াজ মোর্শেদ মিঠু, কম্পিউটার অপারেটর মো. মুরাদ হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মামুন বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন। আলোচনা সভার সঞ্চালনায় ছিলেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ডাঃ মোঃ গোলাম কবির।
পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্য ও সকল মুসলিম উম্মাহর রুহের মাগফিরাত কামনা করে এবং দেশের সুখ ও সমৃদ্ধি চেয়ে বিশেষ মোনাজাত ও দোয়া পাঠ করা হয়। দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন বেইলী রোডের মিনিস্টার্স এ্যাপার্টমেন্ট জামে মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মো. আঃ করিম।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. হুজুর আলী, উপসচিব মালেকা পারভীন, উপসচিব আবু রাফা মোহাম্মদ আরিফ, উপসচিব জেসমিন আক্তার, উপসচিব মো. শরীফুল ইসলাম, উপসচিব মো. আলাউদ্দিন চৌধুরী, সিনিয়র সহকারী সচিব মুন্না রানী বিশ্বাস, সিনিয়র সহকারী সচিব তাসলীমা বেগম, সহকারী সচিব মো. সফিকুর রহমান, হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. সহিদুল ইসলাম, সহকারী প্রোগ্রামার ওয়াহিদ পলাশ, সহকারী মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার হাবিবুল্লাহ নাহিদসহ মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারিগণ উপস্থিত ছিলেন।