বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় পাট পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। আমাদের উদ্যেক্তারা পাট পণ্য রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক হস্তশিল্প মেলায় আমাদের পাট পণ্য প্রদর্শিত হচ্ছে এবং প্রচুর ক্রয় আদেশ পাওয়া যাচ্ছে। আগামী দিনগুলোতে পাট পণ্যের বিশ্ব বাজার আমাদের দখলে থাকবে ইনশাআল্লাহ।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী বলেন, গত পরশু জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপনের প্রাক্কালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ভ্যানিটি ব্যাগ সাথে নিয়েছেন তা পাটের তৈরি। সেদিন তিনি যে শাড়ি পড়েছেন তা পাটের তৈরি। গত সপ্তাহে জাতীয় চা দিবসের অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন পাটের কলি থেকে ‘জুট টি’ তৈরি করতে হবে। কাজেই তিনি পাট ও পাট জাত পণ্যকে কতটা গুরুত্ব দেন তা বোঝা যায়। তিনি পোশাক শিল্পকেও এভাবে উৎসাহ দিয়েছিলেন যেটি এখন আমাদের প্রধান রপ্তানি খাত।
পাট জাগ দেয়া সমস্যার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, পাট জাগ দেয়ার জন্য অনেক এলাকায় পানি ও পুকুর সহজপ্রাপ্য নয়। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি ছোট একটা জায়গায় পাট জাগ দেয়া যায় কিনা বা ক্যামিক্যাল ব্যবহার করে সহজে পাট ব্যবহার উপযোগী করা যায় কিনা।
পাট চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে তিনি উঠান বৈঠক আয়োজন করতে এবং তাতে জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ করার আহবান জানান।
মন্ত্রী বলেন, পাটের বীজ আমদানি নির্ভরতা কমাতে হবে। সার, কীটনাশক ও ভালো বীজের জোগান দিতে হবে। ধান, চাল, গমের জন্য পাটের ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। তিনি পাট বীজ উৎপাদন বৃদ্ধির আহবান জানিয়ে বলেন, ফরিদপুর অঞ্চল যেহেতু পাট উৎপাদনে সমৃদ্ধ সেহেতু পাটবীজ উৎপাদনেও এখানকার পাট চাষীদের অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। এজন্য আপনাদের সকল প্রকার সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
তিনি আজ ফরিদপুরে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি অডিটোরিয়ামে পাট চাষী, মিল মালিক, ব্যবসায়ী এবং পাটখাত সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সাথে মত বিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় পাট অধিদপ্তর এ মত বিনিময় সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী এবং ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ আব্দুর রহমান সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
সম্মানিত অতিথি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুর রহমান বলেন, পাট একটি চ্যালেঞ্জিং সেক্টর। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এই পাট শিল্পকে সমৃদ্ধ করার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, পাট শিল্পকে বহুমুখী উৎপাদনের আওতায় আনতে হবে। পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়লে সরবরাহ করার প্রবনতা বাড়বে। আর চাহিদা বাড়ানোর জন্য পাটের বহুমুখী ব্যবহারের দিকে জোর দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, চাষীরা তখনই পাট চাষের উৎসাহ পাবে যখন তারা ভালো বীজ পাবে, সঠিকভাবে পাট জাগ দিতে পারবে এবং তাদের উৎপাদিত পাটের নিরাপদ বাজারজাত করতে পারবে ও ন্যায্য দাম পাবে। তিনি পানি ছাড়াই পাটের আঁশ ছাড়ানোর কোনো পদ্ধতি উদ্ভাবন করা যায় কিনা তা ভেবে দেখার আহবান জানান। এছাড়া পাট জাগ দেয়ার বিষয়ে পানি সংকট দূর করার জন্য তিনি আন্তঃ মন্ত্রণালয় সভা করে সমস্যা সমাধানের পরামর্শ প্রদান করেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে পাট চাষী, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা বলেন, পাট গাছের জন্য কার্যকর কীটনাশক দরকার। পাট জাগ দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পানির ব্যবস্থা করতে হবে। পলিথিনের বিকল্প সহজলভ্য করতে হবে। পাটের বস্তা, ব্যাগ ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে। পাট চাষীদের প্রণোদনা দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর চৌধুরী লাবু, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ঝর্না হাসান, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আব্দুর রউফ, পাট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জিনাত আরা, ফরিদপুর জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম, ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মোঃ ইশতিয়াক আরিফ প্রমুখ। এছাড়াও চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর প্রতিনিধি ও বিভিন্ন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, জুট মিল মালিক প্রতিনিধি, পাট চাষীবৃন্দ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
পরে মন্ত্রী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গনে আয়োজিত
বহুমুখী পাট পণ্য মেলার উদ্বোধন করেন।