হাফিজুর রহমান শিমুলঃ পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে জেলার আলোচিত দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। শনিবার (৩০ নভেম্বর) ভোর সাড়ে তিনটার দিকে সাতক্ষীরা শহরের কামাননগরের বাইপাস সড়ক সংলগ্ন শরিফুল ইসলামের মুদি দোকানের সামনে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাটি ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ দু’টি দেশী পিস্তল, চার রাউণ্ড গুলি, দু’টি ধারাল চাকু ও একটি মোটর সাইকেল উদ্ধার করেছে।
নিহতরা হলেন, সাতক্ষীরা সদরের মুনজিতপুর গ্রামের মঈনুল ইসলামের পুত্র মাহামুদুর রহমান দীপ (২৪) ও কালিগঞ্জ উপজেলার উজিরপুর গ্রামের মুদি ব্যবসায়ি আব্দুস সবুর সরদারের পুত্র সাইফুল ইসলাম (৩০)। সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মো. মিজানুর রহমান জানান, গত ৩১ অক্টোবর বিকেলে কালিগঞ্জের কাঁটাখালি নামকস্থানে বিকাশ এজেন্টের কাছ থেকে ২৬ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় বৃহস্পতিবার(২৮ নভেম্বর) গ্রেফতারের পর শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) গভীর রাতে দীপ ও সাইফুলকে নিয়ে শহরের কাছে কামালনগরের বাইপাস সড়কের ধারে অন্য সহযোগীদের আটক করতে তাদের নিয়ে আসা হলে ধৃতদের সহযোগী সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে । পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে নেওয়ার পথে নিহত হয় দ্বীপ ও সাইফুল। তিনি জানান কালিগঞ্জ থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ যৌথভাবে দ্বীপ ও সাইফুলকে শহরের বাইপাস সড়ক ধারে কামালনগরে সন্ত্রাসীদের ডেরায় নিয়ে আসে। তাদের বিরুদ্ধে স্ব স্ব থানায় চাঁদাবাজি ও ছিনতাইসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।
পুলিশ পরিদর্শক আরও জানান এ সময় দুটি দেশি পিস্তল, চার রাউন্ড গুলি, একটি মোটর সাইকেল ও দুটি চাকু উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
তবে একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, মুন্সিপাড়া এলাকায় বসবাসকারি সোহাগ(বাড়ি বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জের বাঁশঘাটা গ্রামে, শ্বশুর বাড়ি সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খলিশখালি গ্রামে) মুনজিতপুরে এক আওয়ামী লীগ নেতার ছত্রছায়ায় থাকাকালিন ২০১৭ সালের আগষ্ট মাসে নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা যান। এ হত্যার সঙ্গে সাইফুল ও দীপ জড়িত ছিল।
তবে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাদিকুর রহমান সাদিক সন্ত্রাসীদের পক্ষে তার ফেইসবুকে এক স্টাটাস দিয়ে বলেছেন, ‘ভাই তোদেরকে এইভাবে হারায়ে ফেলব তা বুঝতে পারিনি। পারলে মাফ করে দিস। দুয়া করি আল্লাহ তোদের বেহেশত বাসি করুন।
এদিকে নিহত সাইফুল ইসলামের মা ফতেমা খাতুন জানান, তার ছেলে দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ সাতক্ষীরা শহরের মুনজিতপুরে থাকতো। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাদিকুর রহমান সাদিকের হয়ে বিভিন্ন কাজ করতো সাইফুল ও দীপ। খোড়া বাক্কারের ভাগ্নি চৈতিকে বিয়ে করে সে। বৃহষ্পতিবার রাতে পুলিশ তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে টাকা উদ্ধারের নামে গুলি করে হত্যা করেছে।
মইনুল ইসলাম জানান, তার ছেলে দীপকে বৃহষ্পতিবার রাতে পুলিশ পরিচয়ে বাড়ি থেকে তুৃলে নিয়ে যায়। পরদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রশাসনের দুয়ারে দুয়ারে সন্ধান করতে গেলেও কেই তাকে আটকের সত্যতা স্বীকার করেনি। শনিবার ভোরে দীপ বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে বলে খবর পান তিনি।
উল্লেখ্য যে, কালিগঞ্জে বিকাশ এজেন্টের টাকা ছিনতাইকে ঘিরে বৃহষ্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত পুলিশ মুনজিতপুরের আজিজ, দীপ ও একই এলাকায় বসবাসরত সাইফুল, কালিগঞ্জের বসন্তপুর গ্রামের আব্দুল নুর বিশ্বাসের পুত্র উপজেলা তাঁতীলীগের সভাপতি ময়নুল বিশ্বাস (৩০), একই এলাকার রফিুকল ইসলামের পুত্র ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম এহসান কিরণ (২২), একই এলাকার আফসার আলীর পুত্র ছাত্রলীগ সদস্য আশিকুর রহমান (২৩) ও আজিজ আহমেদের পুত্র উপজেলা তাঁতী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুর রহমান(৩২)।