উজ্জ্বল রায়, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ঠাকুর রামকৃষ্ণ যাকে মা বলে ডাকতেন, যাকে জল না খাইয়ে নিজে কিছু মুখে তুলতেন না সেই মা ভবতারিণীর মূর্তি তৈরি করেছিল কাটোয়ার দাঁইহাটের নবীন ভাস্কর। উজ্জ্বল রায় নিজস্ব প্রতিনিধি জানান, ১৮৫৫ সালে রানী রাসমণির ইচ্ছায় দাঁইহাটের বিখ্যাত ভাস্কর নবীন মা ভবতারিণীর মূর্তি তৈরি করেছিলেন। মাসাধিকাল ধরে কলকাতায় গিয়ে হবিষান্ন খেয়ে আচার মেনে মা ভবতারিণীর মূর্তি্র কাজ নবীন ভাস্কর যখন শেষ করেছিলেন তখন দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের গর্ভগৃহের মাপে মা এর মূর্তি বেমানান হচ্ছিল। রানী রাসমণি ফের নবীন ভাস্করকে মা ভবতারিণীর মূর্তি তৈরির বরাত দেন তবে এবার আগের মূর্তির থেকে বড় করতে বলেন। নবীন ভাস্কর মা ভবতারিণীর একাধিক মূর্তি তৈরি করেছিলেন। নবীনচন্দ্র ভাস্কর কালীপ্রতিমা নির্মাণ করেন সর্বমোট ৩টি। প্রথম মূর্তিটি বড়। রানী রাসমণির পছন্দ না হওয়ায়, নবীন ভাস্কর সেই মূর্তি হেদো (হেদুয়া)-র গুহদের বিক্রি করেন। বর্তমানে তিনি গোয়াবাগান (হেদুয়া পার্ক সংলগ্ন এলাকা) তে গুহবাড়ীর “নিস্তারিণী কালী” নামে পূজিতা হচ্ছেন। দ্বিতীয় মূর্তিটি একটু বেশীই ছোটো করে নির্মাণ করেন। সেটিও রানী রাসমণির পছন্দ না হওয়ায়, বরাহনগরের মিত্র পরিবার সেই বিগ্রহ কিনে নেন। বর্তমানে তিনি “ব্রহ্মময়ী কালী” নামে বরাহনগরে পূজিতা হচ্ছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই “ব্রহ্মময়ী কালী” কেই ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব “মাসীমা” বলে ডাকতেন, কারণ, দক্ষিণেশ্বর “ভবতারিণী কালী” বিগ্রহের মুখের আদল এবং “ব্রহ্মময়ী কালী”-র মুখের আদল হুবহু এক। শুধু উচ্চতারই যা হেরফের। এবারে সর্বশেষ, তৃতীয় মূর্তিটি না বড়, না ছোটো এমন ভাবে নির্মাণ করে নবীন ভাস্কর রানী রাসমণিকে দেখালে সেটিই তাঁর পছন্দ হয়, এবং বর্তমানে তিনিই “ভবতারিণী কালী” নামে জগদ্বিখ্যাত। উপরে যে তিনটি পৃথক কালী প্রতিমার নামোল্লেখ করলাম, দেখতে পারেন তিনটি প্রতিমার উচ্চতায় যা শুধু হেরফের, মুখের আদল অলৌকিক ভাবে এক। এছাড়াও দক্ষিণেশ্বরের মা ভবতারিণী মূর্তির আরেকটি হুবহু নকল নবীন ভাস্কর এর সৃষ্টি আছে বীরভূমের সিউড়ির বড়ো কালীবাড়ি মন্দির।