কুড়িগ্রাম, এপ্রিল ২৩: মানুষের সুরক্ষায় হাসিমুখে জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন গর্বিত পুলিশ সদস্যগণ; হচ্ছেন আক্রান্ত ও স্থাপন করছেন অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
বিশ্ব জুড়েই সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশও এই বাস্তবতা থেকে দূরে নয়। আমাদের দুই লক্ষাধিক সদস্যের একটি বড় অংশ সরাসরি মাঠে থেকে করোনার বিস্তাররোধে কাজ করছেন। তাদেরকে যথাসম্ভব সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে। এখনও অনেক চাহিদা রয়েছে। চাহিদা পূরণে কাজ করছি আমরা। অবশ্য, আমাদের দেশপ্রেমিক সদস্যগণ নিজেদের পূর্ণাঙ্গ সুরক্ষার জন্য কখনই অপেক্ষা করে বসে থাকেননি। বসে থাকছেন না। সাধারণ মানুষের সুরক্ষার জন্য তারা সম্ভবপর সব কিছু করছেন। যে কোনো সমাবেশ ও লোকসমাগমে আইনি ব্যবস্থা, অপরাধ দমন, আসামী গ্রেফতার ও তাকে আদালতে প্রেরণ, মানুষের বেঁচে থাকার জন্য আবশ্যিক খাদ্য ওষুধ ও অন্যান্য জরুরী সেবার সাথে যুক্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে নিরাপত্তা দেয়া, দ্রব্য সামগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রন, মজুতদারি ও কালো বাজারি রোধ, সরকারি ত্রান ও টিসিবি’র পণ্য বিতরণে অনিয়মের ক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, সামাজিক দূরত্ব বাস্তবায়ন, খোলা স্থানে বাজার স্থানান্তর, নিভৃতে সাধারণ মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজস্ব উদ্যোগে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া, কৃষি ও অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে বিভিন্ন স্থানে ধান কাটার শ্রমিক প্রেরণ, অসুস্থ সাধারণ রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দেয়া ও চিকিৎসা পেতে সহায়তা করা, প্রিয়জন পরিত্যক্ত ও পথের পাশে পড়ে থাকা মৃতব্যক্তির পাশে যখন আর কেউ নেই তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ও যথাযথ সন্মানের সাথে তাঁর সৎকার করা – এমন হাজারো ইনোভেটিভ কাজ করছে বাংলাদেশ পুলিশের দেশপ্রেমিক সদস্যগণ। ইতোমধ্যেই পুলিশের এই বীর সদস্যগণ সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সাধারণ মানুষের কাছে অনুকরনীয় হয়ে উঠেছেন। পুলিশের এই ত্যাগে অনুপ্রানিত হয়ে অনেকেই এগিয়ে আসছেন মানুষের সেবায়। পুলিশ তাদেরকেও সহায়তা করছে মানবিক কাজে।
এ সকল কাজ করতে গিয়ে পুলিশের সদস্যগণকে সাধারণ মানুষের সুরক্ষার জন্য জেনে শুনেই জীবনের ঝুঁকি নিতে হয়েছে এবং হচ্ছে। যেহেতু করোনা বিস্তার রোধে পুলিশকে প্রতিটি কাজেই মানুষের খুব কাছে যেতে হয়, মিশতে হয় মানুষের সাথে, তাই নিজের অজান্তেই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন পুলিশের কোনো কোনো সদস্য। এভাবে, ২৩ এপ্রিল ২০২০ খ্রিঃ সকাল পর্যন্ত সারাদেশে আক্রান্ত হয়েছেন কনস্টেবল হতে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ মোট ২১৮ জন সদস্য। কোয়ারেনটাইনে রয়েছেন ৬৫২ জন। আক্রান্ত এই পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পর্যাপ্ত আয়োজন রাখা হয়েছে। বীর এই সেনানীদের সুস্থ করে তুলতে পুলিশের হাসপাতাল গুলোতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইন্সপেক্টর জেনারেল ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার) ব্যক্তিগতভাবে খোঁজ খবর নিচ্ছেন এবং দিচ্ছেন প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা। নিয়মিত আক্রান্ত সদস্যদের পরিবারের খোঁজখবর নেয়ার জন্যও দেয়া হয়েছে নির্দেশনা। পাশাপাশি, দায়িত্বরত আর সবাইকে সুস্থ রাখার জন্যও নেয়া হচ্ছে সম্ভবপর সকল উদ্যোগ।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে এই পুলিশই যেমন ছুঁড়েছিল একাত্তরের প্রথম প্রতিরোধী বুলেটটি, যেমন বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে অকাতরে জীবন দিয়েছিল পুলিশের হাজারো সদস্য, তেমনি দুর্যোগে ও দুঃসময়ে সব সময়েই বাংলাদেশ পুলিশ রয়েছে সাধারণ মানুষের পাশে।