১৮৩০ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রতিটি আন্দোলনে ছাত্র সংগঠন গুলোর অবদান সবচেয়ে বেশি। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন, স্বদেশী আন্দোলন, শ্রমিক আন্দোলন, ইসলামিয়া কলেজ ও মুসলিম ছাত্র আন্দোলন, হলওয়েল মনুমেন্ট অপসারণ আন্দোলন, লাহোর প্রস্তাব, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও প্রগতিশীল ছাত্র আন্দোলন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও ছাত্রসমাজ, ৫২ ভাষা আন্দোলন, ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং ৮০’র দশক জুড়ে স্বৈরশাসন উৎখাত ও পরবর্তীকালের প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক আন্দোলন উল্লেখ্যযোগ্য। সাম্রাজ্যবাদ, স্বৈরাচার এবং সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠার গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে আপোষহীনভাবে এগিয়ে নিয়েছেন এই ছাত্রসমাজ।
অত্যান্ত দুঃখের বিষয়, আমাদের বর্তমান ছাত্র সমাজকে দেখলে মনে হয় তাদের মূল নীতি সরকার দলীয় বা বিরোধী দলীয় মূলকথা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অধিকাংশ ছাত্রসমাজ ব্যবহারিত হচ্ছে। অথচ ছাত্র সংগঠনগুলোর মূল নীতি হওয়া উচিত শিক্ষার উন্নয়ন ও দেশের উন্নয়নে যে কোন সরকারের মুখোমুখি হয়ে ছাত্র সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখা। আজকের ছাত্রসমাজ আগামী দিনের দেশের কান্ডারী। তাই স্বশিক্ষিত হয়ে দেশের জন্য, মানুষের জন্য অতীতের মতো তাদের এগিয়ে যাওয়া উচিত। একমাত্র ছাত্রসমাজই পারে অন্যায়ের বিরুদ্ধে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে রুখে দাড়াতে।
প্রতিটি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সেখানে প্রতিটি ক্ষেত্রে রাজনৈতিক আধিপত্যে ছাত্র-ছাত্র রক্তা-রক্তি, হানা-হানি লেগেই আছে। এটা কোন দেশের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনে না। বরং একটি দেশকে ধ্বংস করতে এই ছাত্র সমাজের একে অন্যের মধ্যে শত্রুতাভাবাপন্ন আচরণই যথেষ্ট। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের ফলে পড়ালেখায় তেমন সময় দিতে পারে না। ফলে তারা ধীরে ধীরে শিক্ষা থেকে দুরে সরে যাচ্ছে। তারা মানবিক ও স্বশিক্ষার আলো থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে শিক্ষার চেয়ে ক্ষমতার লোভ কাজ করতে থাকে অনেক বেশি। এই অবস্থা থেকে বাহির হতে না পারলে ছাত্র সমাজ ধ্বংস হতে খুব বেশি সময় লাগবে বলে আমার মনে হয় না।
আজ ২০১৮ সালে চাকুরির ক্ষেত্রে যে অসম কোটা ব্যবস্থা চালু আছে তার সংস্কার আন্দোলনও সফল হবে। যদি ছাত্র সমাজ একাত্বতা প্রকাশ করে সরকারকে বোঝাতে সক্ষম হয় তারা জয়ী হবেই। সরকার প্রধান এর মৌখিক ঘোষণা গেজেট আকারে প্রকাশ করে ছাত্র আন্দোলনকে সফল করতে সরকার যদি একাত্বতা ঘোষণা না করেন সরকারই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। কারণ তখন ছাত্র সমাজ তার বিপক্ষে অবস্থান নিবেন। আজ অবধি সঠিক পথে কোন ছাত্র আন্দোলন ব্যর্থ হয় নাই। বিপ্লবী ছাত্র সমাজের জয় হোক।
হাসানূর রহমান সুমন
সিনিয়র সহকারি সম্পাদক, সাপ্তাহিক হিতবানী