টেকনাফের বহিস্কৃত ওসি পদীপের রোষানলে পড়ে নির্যাতন ও মামলার শিকার সাহসী সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফার অবশেষে ঠাঁই মিলেছে হাসপাতালে। কক্সবাজার হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মামলা চালাতে শেষ সম্বল টেকনাফের ঘরসহ জমি বিক্রি করে এখন সহায় সম্বলহীন একজন মানুষ ফরিদুল মোস্তফা।
কারাগার থেকে বেরিয়ে কোথাও ওঠার জায়গা না থাকায় বৃহস্পতিবার রাতেই তিনি স্বপরিবারে হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছেন। একদিকে শারীরিক অসুস্থতা অন্যদিকে মাথাগোঁজার ঠাঁই না থাকায় হাসপাতালই তার শেষ ঠিকানা। ৫তলার ৫০৩ নম্বর কেবিনে তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন।
জেল থেকে শুন্য হাতে বেরিয়ে তিনটা শিশু সন্তান-স্ত্রী নিয়ে ফরিদ মোস্তফার চোখে মুখে এখন যেন হতাশার ছাপ। কী করবে কেমনে পথ চলবে এ নিয়ে যেন হতাশার কমতি নেই।
শুক্রবার ২৮ আগস্ট জুম্মা নামাজ শেষে ফরিদ মোস্তফা ফোন করেন বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের সাধারন সম্পাদক ও সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সমন্বয়কারী আহমেদ আবু জাফরের কাছে। এ সময় ফরিদ মোস্তফা বিএমএসএফ ও সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির নেতৃবৃন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, মহান আল্লাহ কাউকে না কাউকে দিয়ে উপকার করান। ভালো কাজ সকলকে দিয়ে হয়না। আমার জন্য আপনারা যা করেছেন তা কালের স্বাক্ষী হয়ে থাকবে। আমি কতটা অসুস্থ তা ভাষায় বোঝাতে পারবোনা। শারীরিক মানষিক চতুর্মূখী অসুস্থ আছি।
পুলিশ আমাকে দেয়াল ভাঙ্গা হাতুড়ি দিয়ে মাথায় অাঘাত করেছিল। পানির বদলে প্রসাব দেয়া হয়েছিল। চোখে মরিচের গুড়া দেয়া হয়েছিল। রাতে মেরিন ড্রাইভে গাড়িতে বেঁধে ঝুলানো হয়েছিল। তিন দিনের সে কী নির্যাতন তা বোঝাতে পারবোনা।
কারাগারে চিকিৎসা হয়নি এখনো সারা শরীরে ব্যথা। এটা আমার দ্বিতীয় জীবন। আমি বেঁচে থাকলে কারো সাথে আর বিরোধ নয় তবে সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি সকল প্রাণীর কল্যানে আমি কাজ করে যাবো। আসমান জমিনের মালিক আল্লাহ।
আমি গতকাল কারাগার থেকে বেরিয়ে কোথায় যাবো কোন স্থান খুঁজে পাইনি। তাই চিকিৎসার সুবাধে হাসপাতালে আছি। পুলিশ আমাকে যেভাবে দাগী বানিয়েছে তাতে মনে হয় কক্সবাজারে আমাকে কেউ ঘর ভাড়াও দেবেনা। অামি এখন গৃহহীন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন কেউ গৃহহীন থাকবেনা। আমিও অপেক্ষায় রইলাম। আমার ব্যাপারে যেন সুদৃষ্টি দেন। যাতে আমার মামলা এবং শারীরিক চিকিৎসায় সরকার হস্তক্ষেপ করেন।
উল্লেখ্য, টেকনাফ থানায় দায়ের করা ৬টি মামলায় সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফাকে বৃহস্পতিবার আদালত জামিন দিলে দীর্ঘ ১১ মাস ৫দিন পর কারামুক্ত হ’ন। মামলাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল অস্ত্র, মাদক ও চাঁদাবাজি।
দুই দশক ধরে মোস্তফা আমাদের সময়, আমাদের অর্থনীতিসহ নিজের সম্পাদনায় প্রকাশিক কক্সবাজার বাণী সম্পাদনা করতো।
সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা টেকনাফের তৎকালীন ওসি প্রদীপের বিরুদ্বে মাদক নির্মূলের আড়ালে বিচারবহির্ভূত হত্যা, মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে বিভিন্ন সময় সংবাদ পরিবেশ করেছিলেন। যার কারনে ওসি প্রদীপ সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফাকে ঢাকা থেকে ধরে এনে মাদক ও চাঁদাবাজির ৬ টি মিথ্যা মামলায় জড়িত করে ও শারীরিক নির্যাতন করে ।
এদিকে গত ১১ আগষ্ট ফরিদুল মোস্তফার ঘটনার আদ্যপান্ত তদন্তে সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির একটি টিম কক্সবাজারে যান। সেখানে ফরিদ মোস্তফার পরিবার, সাংবাদিক , রাজনৈতিক, আইনজীবি ও সুশীল সমাজ নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করেন। সেখানে প্রাপ্ত ঘটনার একটি প্রতিবেদন শীঘ্রই সরকারের নিকট জমা দেয়া হবে বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের কক্সবাজার জেলা সভাপতি মিজানুর রশীদ মিজান জানিয়েছেন সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফার পক্ষে সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির আইনজীবিরা আইনী লড়াই শেষে জামিনে মুক্ত করেছেন। বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা পাশে আছি এবং থাকবে।
সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির কক্সবাজার জেলা কমিটির সভাপতি মাইনুল হাসান পলাশ বলেন সাংবাদিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি।
ফরিদুল মোস্তফার ওপর বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপের নির্যাতনের ঘটনা সরকারকে পূণ:তদন্ত করে ন্যায় বিচারের দাবি করেন বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম ও সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির কেন্দ্রিয় সাধারণ সম্পাদক আহমেদ আবু জাফর। তিনি ফরিদুল মোস্তফার উন্নত চিকিৎসার ব্যয়ভার সরকারকে বহন করারও আহবান করেন।