ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) কর্মসূচি পালনের সময় আন্দোলনকারীদের ওপর কয়েক দফায় হামলা চালিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
রোববার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত কয়েক দফায় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শনিবারই নিজ নিজ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর রোববার তাদের উপস্থিতিতেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের মহড়া চলছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে কয়েকজন শিক্ষার্থী ব্যানার নিয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর নেতৃত্বে শতাধিক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী সেখানে উপস্থিত হয়ে আন্দোলনকারীদের ব্যানার কেড়ে নিয়ে ধাওয়া দেয়। এতে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় আন্দোলনকারীরা। এসময় গ্রন্থাগার চত্বরে কয়েকজনকে লাঠিপেটা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
সকালের হামলার প্রতিবাদে বেলা সোয়া ১১টার দিকে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে অবস্থান নিয়ে গণমাধ্যমের সামনে আন্দোলন নিয়ে কথা বলছিলেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় তাদের ওপর আবার লাঠি, বাঁশ নিয়ে হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে আন্দোলকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক চত্বর, পরিবহন মার্কেটের আমবাগান, চতুর্থ বিজ্ঞান ভবন, শহীদুল্লাহ্ কলা ভবনের সামনে তাদের অনেককে মারধর করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন রাবি শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক মোর্শেদুল আলম বলেন, ‘পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমরা গ্রন্থাগারের সামনে মানববন্ধনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তখন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার নেতৃত্বে আমাদের ওপর হামলা করা হয়। হামলায় কয়েকজন আন্দোলনকারী আহত হয়েছেন।’
ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘কয়েকজন ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছিল। তাদেরকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘ক্যাম্পাসকে স্থিতিশীল রাখতে আন্দোলনকারী এবং ছাত্রলীগ উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি। নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’
এর আগে শনিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কোটা সংস্কারের নামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বিশৃঙ্খলা’ সৃষ্টিকারীদের প্রতিহত করার ঘোষণা দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু শনিবার রাতে ফেসবুকে লেখেন, ‘আগামীকাল (রোববার) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস-পরীক্ষা চলবে। কোটা আন্দোলনের নামে যদি কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করে, তাহলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ তা কঠোর হস্তে প্রতিহত করবে।’