আজ রানা প্লাজা ধসের আট বছর পূর্ণ হচ্ছে।২০১৩ সালের এই দিনে আট তলা ভবন ধসে নিহত হন ১ হাজার ১৩৮ জন। আহত হন আরো ২ হাজার ৪৩৮জন। দিবসটি উপলক্ষে এবারও নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন নিহতের স্বজন, আহত শ্রমিকসহ অনেকেই।
বিশ্বব্যাপী আলোচিত এ দুর্ঘটনার পর থেকে প্রতিবছর মোমবাতি জ্বালিয়ে স্মরণ করেন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন, উদ্ধারকর্মী ও হতাহত শ্রমিকদের স্বজনরা। ধসে পড়া ওই ভবনের সামনে মোমবাতি জ্বালিয়ে এবং অস্থায়ী বেদিতে ফুল দিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। নেওয়া হয় অন্য কর্মসূচিও।
তবে এবার শ্রদ্ধা নিবেদনে ব্যতিক্রম আয়োজন করেছে শ্রমিক সংগঠন গার্মেন্টস শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ। সংগঠনের নেতাদের উদ্যোগে রানা প্লাজায় ১ হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক নিহতের ঘটনায় ১ হাজার ১৩৮টি গোলাপ ফুল দিয়ে একটি পুষ্পাঞ্জলি তৈরি করা হয়। আজ (২৪ এপ্রিল) শনিবার সকাল ০৮:৩০ ঘটিকার সময় রানা প্লাজার নিহত শ্রমিকদের অস্থায়ী বেদিতে অর্পণ করা হয় সেই পুষ্পাঞ্জলি।
কর্মসূচি উপলক্ষে সকাল থেকে রানা প্লাজার সামনে আসতে শুরু করে নিহত শ্রমিকদের স্বজন, আহত শ্রমিকরা,শ্রমিক সংগঠনগুলো ও প্রশাসন। এ সময় নিহত ও নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনদের বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে রানা প্লাজা এলাকা। হারিয়ে যাওয়া পরিবারের সদস্যকে স্মরণ করে কাঁদতে দেখা যায় অনেক স্বজনকে। ওই দুর্ঘটনায় অনেক আহত ও পঙ্গু শ্রমিকও জড়ো হন। সহকর্মীদের শ্রদ্ধা জানাতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁরাও।
গার্মেন্টস শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের সাভার-আশুলিয়া-ধামরাই এলাকার আহ্বায়ক মোঃরফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন এবং ২ হাজার ৪৩৮ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে ১ হাজার ১৩৮টি গোলাপ ফুল দিয়ে একটি পুষ্পাঞ্জলি তৈরি করে নিহত শ্রমিকদের শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। এ ছাড়া তাদের আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া করা হয়েছে।
এর আগে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন রানা প্লাজা ধসের আট বছর পূর্ণ হওয়ার আগমুহূর্তে আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, রানা প্লাজা ধসের আট বছর পূর্ণ হচ্ছে। অথচ ওই ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের এখনো শাস্তি হয়নি। আহতদের সুচিকিৎসা হয়নি। নিহত-আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পরিবারগুলোকে সেভাবে সাহায্য করা হয়নি, তাদের পুনর্বাসন করা হয়নি। দিনটিকে শোক দিবস ঘোষণা করে গার্মেন্ট কারখানাগুলো ছুটি ঘোষণা করার দাবি থাকলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। এমনকি একটি স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভও নির্মাণ করা হয়নি’।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখ্তার বলেন, ‘যে শ্রমিকের শ্রমে-ঘামে চলে উৎপাদনের চাকা, প্রবৃদ্ধি ঘটে অর্থনীতির, সেই শ্রমিকের অবদানকে অস্বীকার করার আয়োজন চলছে। রানা প্লাজার ঘটনাকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। রানা প্লাজা ধসের আট বছর হয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত সোহেল রানাসহ দোষী সরকারি কর্মকর্তা ও ওই ভবনের পাঁচ গার্মেন্টের মালিকদের শাস্তি নিশ্চিত করা হয়নি। রানা প্লাজার জায়গা দখলের চেষ্টা হচ্ছে। এই খালি জায়গার সামনে দোকানপাট বসিয়ে ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, যাতে সবাই ভুলে যায় এখানে কী নির্মমতা ঘটেছিল’।
ঢাকা জেলা প্রশাসক অফিসের হিসাব অনুযায়ী, রানা প্লাজার ধংসস্তূপ থেকে এক হাজার ১১৭ জনকে মৃত উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো ১৯ জন মারা যান। সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা এক হাজার ১৩৬ জন। সর্বশেষ (২০১৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি) পাবনার জেলার বেড়ায় উপজেলার রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিক আবদুস সোবহান মারা যান। বেসরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা আরো বেশি।
ভবন ধসের ওই ঘটনায় আহত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণ দিতে ২০১৪ সালের ১৩ মার্চ আদালতের নির্দেশে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার ব্যক্তিগত সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়।