এখন শুধু সফলতা আর ব্যর্থতার দিন গুনি; এরমধ্যেই কখন যে জন্মদিনটা পেরিয়ে যায় তা বেশিরভাগ বছরই টের পাই না। কোনো কোনো বছর সহকর্মি, বন্ধুজনদের কেউ জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর মাধ্যমে আমাকে সজাগ করে দেন-এবার সে কাজটি করলেন মিরপুরের বন্ধু তুহিন ভাই। রাত ১২টা ১ মিনিটেই আমার ফোনটি বেজে উঠলো-তুহিন ভাই’র ফোন। নতুনবার্তার সম্পাদক তিনি। তুহিন ভাই যে, আমারই জন্মদিন উইশ করবেন তা ঘূর্ণাক্ষরে টের পেলেও ফোনটি এড়িয়ে যেতাম। অগত্যা বাধ্য হয়ে তার প্রতি জানাচ্ছি অনেক ভালবাসা, অনেক শুভেচ্ছা !!
শৈশব থেকেই জন্মদিন আমার কাছে আলাদা কোনো বিশেষত্ব পায়নি বটে-তবে অন্যান্য বিশেষ দিনের মতোই কোনো না কোনো অঙ্গিকার গ্রহণের দিন হিসেবে ধার্য হয়েছে। ২৬ মার্চের স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখে আমি চোখ বন্ধ করে আপনা আপনি অঙ্গিকার করি-বন্দিদশা কিংবা পরাধীনতায় আটকে থাকা মানুষজনের জন্য কিছু না কিছু রিপোর্ট করবো। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে নিজে নিজেই শপথ করি-এবার মানুষকে সফলতার গল্প শোনাবো, এগিয়ে যাওয়ার সাহস সৃষ্টিমূলক প্রতিবেদন তৈরি করবো।
গত ৯ ডিসেম্বর ছিল আমার একমাত্র মেয়ে উর্মির জন্ম দিন- সেদিন অঙ্গিকার করেছি দেশের অনিশ্চিত জীবন নিয়ে বেড়ে ওঠা ছিন্নমূল শিশুদের কষ্টকান্না তুলে ধরবো দারুণ মমত্বে। তাদের নিশ্চিত আশ্রয়, সম্ভাবনার সঙ্গে বেড়ে ওঠার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে লিখে যাবো প্রতিনিয়ত। কিন্তু আমার জন্ম দিনটিতে কী শপথ নিতে পারি..??? কী হতে পারে আমার অঙ্গিকার? সমাজ-রাষ্ট্রের সর্বস্তরে দায়বদ্ধতা নিশ্চিতকরণে দায়িত্ব অব্যাহত রাখবো।
আসলেই সমাজ, সংগঠন, রাষ্ট্রের নানা পর্যায়ে নিঃস্বার্থবান কিছু ব্যক্তি থাকেন যারা নিজেদের অংশ গ্রহণের মধ্য দিয়েও সব মানুষের মঙ্গল কামনা করেন, সুস্থ্য সুন্দরের জন্য লড়াই করেন। তেমনই একজন হচ্ছেন দূর জনপদের প্রতিষ্ঠিত একটি আলিয়া মডেল মাদ্রাসার প্রিন্সিপ্যাল এম. এ. মান্নান। অতিসম্প্রতি ফেসবুকে আমার পুরস্কার গ্রহণের ছবিটি স্পষ্টভাবে প্রকাশ হওয়ায় আঁতকে উঠেন তিনি। রাত সাড়ে তিনটার দিকে ম্যাসেঞ্জারে এম. এ. মান্নান যে ম্যাসেজটি পাঠিয়েছেন তা হুবুহু তুলে ধরছি: “আপনি তো প্রায় সময়ই ভুঁয়া, বাতিল বা অন্যায়কারীদৈর বিরুদ্ধেই লিখে থাকেন। অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে শারীরিকভাবে যে মুড বা ভাবের উদ্রেক হয়, ছবিতে যেন সেই মুডটাই ফুটে ওঠেছিল। তাই তো আতঙ্কিত হয়ে উঠেছি। ভাইজান, চেনা নাই, জানা নাই, আপনি রক্তেরও কেউ নন। শুধু লেখা দিয়ে আমার ও আমার বন্ধুদের কাছে এমনকি আমার পরিবারের সদস্যদের কাছে আপনি যে কতটা প্রিয়, আত্মার আত্মীয় তা বোঝাতে পারবো না। আল্লাহর নামে শপথ করে বলতে পারি ভাই-প্রতি রাতে তাহাজ্জুতের নামাজান্তে সরাসরি আপনার নামটি উল্লেখ করে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি- হে আল্লাহ আমাদের হায়াত থেকে দিন, মাস, বছর কেটে নিয়ে হলেও প্রতিবাদী এ কলম যোদ্ধা রিমন ভাইকে নেক হায়াত দান করুন, সকল বিপদ থেকে তাকে অলৌকিকভাবে আপনি হেফাজত করুন। আমিন।“
এমন স্বার্থাহীন শুভাকাঙ্খীদের অকৃত্তিম ভালবাসা আমার পাথেয়, তাদের আশীর্বাদেই আমার বেঁচে থাকা। আমি তাদের স্মরণ করি গভীর কৃতজ্ঞতায়। আরো যেসব মানুষ সাহস যোগান, গভীর রাতে ছোট্ট ম্যাসেজ দিয়ে জানিয়ে দেন, ভাই চালিয়ে যান-পাশেই আছি। আর যারা আমার নিরাপত্তা ব্যূহ গড়ে তোলেন তাদের প্রতি অন্ধ ভালবাসাই থাকছে আমার।
লেখকঃ সাঈদুর রহমান রিমন,বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার ইনভেস্টিগেশন সেল এর ইনচার্জ।