এ পেয়ারা বাগানে প্রায় ২৩ হাজার একর জমির উপর এ পেয়ারার রাজ্য। বাংলার আপেল খ্যাত পেয়ারার ভর মৌসুম শুরু হয়েছে বর্তমানে।এশিয়ার বিখ্যাত এ পেয়ারাকে স্থানীয় ভাষায় গৈয়া কিংবা সবরী বলা হয়। তবে জাতীয়ভাবে এটি পেয়ারা নামে পরিচিত। আর পুষ্টিমানের দিক থেকে একটি পেয়ারা ৪ টি আপেলের সমতুল্য বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছে। তাই পেয়ারাকে ভালবেসে ‘বাংলার আপেল’ আবার কেউ ‘গরিবের আপেল’ হিসাবে গণ্য করে।
এখানে প্রতিবছর পেয়ারার মৌসুমে বিপুল পরিমানে সুস্বাদু পেয়ারা ফল উৎপাদন হয়ে থাকে। বাংলার আপেল নামে খ্যাত এ পেয়ারা এখানে প্রচুর উৎপাদন হলেও সংরক্ষণের অভাবে চাষীদের লোকসানের মুখে পড়তে হয় প্রতিবছরই। কারন পেয়ারা দ্রুত পেকে যায়। তাই দ্রুত বিক্রি না করতে পারলে চাষিদেরও পড়তে হয় লোকসানের মুখে।এ বছর পেয়ারায় দেখা দিয়েছে এনথ্রাকনোস নামক এক ধরনের ভাইরাস। যা স্থানীয়ভাবে ছিটপড়া রোগ বলে সনাক্ত করা হয়। সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগ থাকলে মৌসুমী এ ফল পেয়ারা বছর জুড়ে ভোক্তাদের চাহিদা মিটিয়ে চাষীরাও আর্থিকভাবে লাভবান হতো। কিন্তু দীর্ঘদিনেও উদ্যোক্তার অভাবে হিমাগারসহ প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে না উঠায় এবংউৎপাদন খরচ দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষীরা পেয়ারা চাষাবাদে আগ্রহ হারাচ্ছে। আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্রের অর্ধেক এই আড়াই মাস জমে উঠে পেয়ারা বেচা-কেনা।পেয়ারা চাষ ও ব্যবসাকে কেন্দ্র করে এসব এলাকায় গড়ে উঠেছে ১০ টিরও বেশি ছোট বড় ব্যবসা কেন্দ্র। স্থানীয়ভাবে বলা হয় পেয়ারার মোকাম। এ মোকাম গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আটঘর, কুড়িয়ানা, ভিমরুলী, ডুমুরিয়া, শতদশকাঠি, বাউকাঠি। প্রতিদিন সকালে এসব মোকামে চাষিরা ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় সরাসরি বাগান থেকে পেয়ারা নিয়ে আসে পাইকারদের কাছে। তা কিনে ট্রলার যোগে নৌ পথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ঢাকা চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। এ বছর ফাল্গুনে পেয়ারা গাছে ফুল ধরার পর অতিরিক্ত খড়ায় পানির অভাব দেখা দেয়ায় ফুল ঝড়ার পাশাপাশি অনেক গাছও মারা যায়। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে পেয়ারা চাষিরা গাছের গোড়ায় পর্যাপ্ত সার এবং মাটি দিতে পারেনি। কিন্তু তার পরেও এবার পেয়ারার ভাল ফলন হয়েছে। কেটে গেছে চাষিদের দু:শ্চিন্তা।ঝালকাঠির কাঁচাবালিয়া গ্রামের পেয়ারা চাষি নুরু মিয়া জানান, খড়ার কারণে ফলন ভালো না হওয়ার ভয় ছিলো। উপরওয়ালা সহায় থাকায় পেয়ারার ফলন এবার ভালই হয়েছে। প্রতিবছর পেয়ারার মৌসূমে বিভিন্ন স্থান থেকে নৌ পথে পেয়ারা বাগানে আসে পর্যটকরা। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম। করোনারি কারনে তেমন পর্যটক নাই বললে চলে। পেয়ারা বাগানে এসে দেখে মুগ্ধ হয়েছেন বরিশাল আব্দুর রব সেরনিয়াবাত প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কাজী মিরাজ হোসেনসহ কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিক।তারা এখান থেকে পেয়ারা কিনেও নিচ্ছেন পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের জন্য। বছরের পর বছর ধরে পেয়ারা উৎপাদিত এসব এলাকার চাষিদের একমাত্র সমস্যা হিমাগার ও সড়ক পথে যোগাযোগের যথোপযোগী ব্যবস্থা না থাকা।এ ব্যাপারে ঝালকাঠির জগদীশপুর গ্রামের পেয়ারা চাষি নির্মল মিস্ত্রি জানান, প্রতি বছর হিমাগারের অভাবে এসব এলাকার কয়েক কোটি টাকার পেয়ারা নষ্ট হয়ে যায়। কারণ পেয়ারা পচনশীল ফল।। মৌসুমে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার মন পেয়ারা বিক্রি হয়। তবে বাউকাঠি থেকে ভিমরুলী হয়ে কীর্তিপাশা পর্যন্ত সড়ক প্রশস্ত হলে পেয়ারা পরিবহনে সুবিধা হত। প্রায়ই পেয়ারার ট্রাক সরু রাস্তা দিয়ে চলতে গিয়ে রাস্তার কিনারে পড়ে যায়। ভিমরুলী মোকাম থেকে নৌ পথে খুলনা, ফেনী, ঢাকা, সিলেট, পটুয়াখালি, ভোলা, মাদারিপুর, নাটোর, বরিশাল হাজার হাজার মন পেয়ারা যাচ্ছে। পেয়ারা বাগান ঘুরে জানা গেছে, পিরোজপুরের স্বরুপকাঠি উপজেলার আটঘর, কুড়িয়ানা, আদমকাঠী, ধলহার, কঠুরাকাঠি, আন্দাকুল, জিন্দাকাঠি, ব্রাহ্মণকাঠি, আতা, জামুয়া, মাদ্রা, ঝালকাঠি, শশীদ, পূর্ব জলাবাড়ী,আদাবাড়ি ও জৌসার গ্রাম এবং ঝালকাঠি ও বরিশালের বানারীপাড়ার মোট ৩৬টি গ্রামের কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে পেয়ারার চাষাবাদ হয়। কয়েক হাজার পেয়ারা বাগানে হাজার হাজার চাষী এ পেয়ারা চাষাবাদ করে আসছে। আর পেয়ারার চাষাবাদ ও বিপণন ব্যবস্থার সাথে ওই সমস্ত এলাকার প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার শ্রমজীবী মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থেকে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।