গাজী এনামুল হক( লিটন)
স্টাফ রিপোর্টারঃ
পিরোজপুরের উত্তরের উপজেলা নাজিরপুরে শতবর্ষের চিতই পিঠা উৎসবে প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষের মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় শুরু হওয়া এ অনুষ্ঠান রাত পেরিয়ে মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত চলে।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের কুমারখালী বাজার সংলগ্ন দেবলাল চক্রবর্তীর বাড়ির কালি মন্দিরে এ পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ওই মন্দিরের ভক্তসহ বিভিন্ন লোকজন প্রতি বছরের মাঘের অমাবশ্যা তিথিতে সেখানে আসেন।
মন্দিরের পুরোহিতের দায়িত্বে থাকা দেবলাল চক্রবর্তী জানান, প্রায় শত বছর আগে থেকে তার পূর্ব পুরুষের হরষিত আনন্দ চক্রবতী এ মেলার আয়োজন করেন। এখানে প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভক্তরা যোগদান করেন। তারা তাদের মনোবাসনা পূরণের জন্য এখানে মানত করেন। আর তাদের মনোবাসনা পূর্ন হলে এখানে এ চিতই উৎসবে যোগ দেন। তিনি আরো জানান, সন্ধ্যা ৭টায় বিশেষ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এ অনুষ্ঠান শুরু হয়। আর রাতব্যাপী ও পরের দিন সকাল ১০টা পর্র্যন্ত এ অনুষ্ঠান চলে। পরে সকালে খিচুরি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তা শেষ হয়। ১০৮টি চুলায় চিতই পিঠা (কাঁচি খোচা পিঠা) তৈরী হয়। একটি মাঠে মাটি দিয়ে সারি করে তৈরী ওই সব চুলায় মাটির তৈরী সাজে চালের গুড়ার ওই পিঠা তৈরীতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নারী ভক্তরা। এ উৎসবকে স্থানীয়ভাবে চিতই উৎসব বল হয়।
অনুষ্ঠানে যোগদেয়া গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার স্কুল শিক্ষিরা তিথি বিশ্বাস (৫০) জানান, তিনি ছোট বেলা থেকে তার পিতা-মাতার সাথে প্রতি বছরের মাঘ মাসের এ পিঠা উৎসবে এখানে আসেন। এখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নারী-পুরুষ অংশ নেন। এদের কেউ কেউ তাদের মনোবাসনা পূরণের জন্যও এখানে যোগ দেন।
বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার সন্তোষপুর গ্রামের পংকজ কান্তি জানান, তার বিয়ের প্রায় ১৫ বছরেও স্ত্রী’র কোন সন্তান হচ্ছিলো না। এখানে মানত করলে স্রষ্টার কৃপায় পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। তাই এ সন্তান নিয়ে এখানে এসেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে স্থানীয়রাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা হাজার হাজার নারী পুরুষের উপচে পড়া ভীড়। একটি মাঠে সারি সারি করে তৈরী করা হয়েছে ১০৮টি মাটির চুলা। চুলার উপরে রাখা আছে কাঁচি খোঁচা পিঠা তৈরীর সাজ। সন্ধ্যা ৭টার দিকে অনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হয় পিঠা তৈরী। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নারীরা এ পিঠা তৈরীতে অংশ নেন। একটি বড় বট গাছের উপরেও স্থাপন করা হয়েছে পৃথক ১০টি চুলা। সেখানেও ১০ জন ভক্ত এ পিঠা তৈরীর কাজ করছেন।
নাজিরপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শেখ মো. মোস্তাফিজুর রহমান রঞ্জু জানান, এটি এখানের একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। এখানে প্রতি বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নারী-পুরুষরা অংশ নেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. জুলহাস উদ্দিন সান্টু জানান, এখানে এ উৎসব একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব হিসেবে পরিনত হয়েছে। শত বছরের এ উৎসব সম্পর্কে আমরা আমাদের পূর্ব পুরুষের কাছ থেকে জেনেছি। এ উৎসবে আমরা স্থানীয়রা সহযোগীতা করে থাকি।।