কবিতা হলো আনতভূমির অন্তরীক্ষের আলো ও অন্ধকারের অনবদ্য এক নৃত্যকলা। যেখানে তৃষিত তৃষ্ণায়, শিল্পের মহাযাত্রায় শূন্যও হয়ে ওঠে পূর্ণ। শূন্য থেকে পূর্ণতার সাধনাই মানব জীবনের এবং শিল্পের অন্যতম প্রধান আরাধ্য। জীবনের সেই আরাধনারই এক অপূর্ব মিশেল ঘটেছে কবি রেখা আক্তার এর “মেঘের কাছে চেয়েছিলাম একমুঠো জল” নামক প্রথম কাব্যে। এই কাব্যের নামের মধ্যেই কবির বিকল্প জীবনবোধ ও নন্দনের খোঁজ আমরা পাই। জল ও জীবনের বহুবিধ রূপ আমরা দেখতে পাই চর্যাপদের কবিদের থেকে শুরু করে বৈঞ্চব কবিতা, কালিদাস- রবীন্দ্রনাথ- জীবনানন্দ- শঙ্খ ঘোষ থেকে একালের কবি শ্রীজাতের কবিতায়। অপরদিকে নীরদচন্দ্র চৌধুরী নৈসর্গিক সৌন্দর্যের প্রাণরস ও বাংলার সৌন্দর্যের চরমরূপ দেখেছিলেন বাংলার জলরাশিতে। রেখা আক্তার তাঁর কবিতায় মেঘের কাছে যে একমুঠো জল প্রার্থনা করেছিল তার মধ্যে আছে নদী, জল, উন্মুক্ত নীল আকাশ, কাজল কালো মেঘ, দিগন্ত প্রসারিত ক্ষেত ও ঘনশ্যাম বনানী যা কিনা বাঙালির প্রাণের অবলম্বন। রেখা আক্তার তাঁর এই কাব্যে কেবল প্রাণ-প্রকৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি; সমসাময়িক রাজনীতি, সমাজ, ব্যক্তি মানুষের অন্তর্গত দ্ব›দ্ব, সভ্যতার সংকট, প্রেম, ধর্ম, নৈঃসঙ্গ, মৃত্যুবোধ সর্বোপরি বিবেকের দায়বোধের মৌলিক অনুষঙ্গগুলো শৈল্পিক পরোক্ষে, উপমা, রূপক ও প্রতীকের সাহায্যে বলতে চেয়েছে। সরাসরি বলার চেয়ে রেখা আক্তার আলংকারিক ব্যঞ্জনায় ভাব প্রকাশে অধিকতর ইচ্ছুক। তাঁর কবিতায় সমস্ত নেতিবাদের মধ্যেও আশার আলো আছে। মানুষ, মনুষ্যত্ব, প্রেম, প্রকৃতি সমস্ত কিছুর মধ্যে তিনি খুঁজেছেন এক অনবদ্য প্রাণশক্তি ও প্রাণপ্রাচুর্য। অনাবিল এক আশাবাদী কবি রেখা আক্তার। সে কারণে সমসাময়িক নানাবিধ ঘটনা, প্রকৃতি, দুঃখ- ব্যথা- বেদনা- বিরহ কোনটিই আর ব্যক্তিগত থাকেনি; ব্যক্তি-নির্বিশেষ, সার্বজনীন এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা নৈর্ব্যক্তিক। তাঁর কল্পনা ও ব্যঞ্জনা এতোটাই জীবন্ত, প্রাণময়, চিরচেনা যে, তা যেন প্রাত্যহিক জীবনেরই অংশ। তাই আমাদের কাছে আপন মনে হয়। আমাদের প্রাণকে স্পর্শ করে। যার কারণে তাঁর কবিতা পাঠে আমরা পাই ভিন্ন স্বাদ ও সৌন্দর্য। কবি রেখা আক্তার তাঁর “মেঘের কাছে চেয়েছিলাম একমুঠো জল” কাব্যে নিজস্ব কল্পনার শক্তিতে, তাল-লয়-মাত্রার অপূর্ব কারুকার্যে, ভাষার ব্যঞ্জনায় যে নান্দনিকতা উপস্থাপন করেছেন তা যেকোনো পাঠককে দিবে নতুন স্বাদ ও সৌন্দর্যের সন্ধানÑউন্মোচন করবে নবদিগন্ত।
সরকার সোহেল রানা
সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।