আজ ৩ নভেম্বর এবং জাতীয় চার নেতার “বঙ্গবন্ধু’র সহযোদ্ধা ” হয়ে উঠার দিন।বাংলাদেশ আজ স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশ। সেই ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির সময় বাঙালি নিজ জাতি সত্তা বজায় রেখে একটি সুন্দর মুক্ত জীবন গড়ার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু পাকিস্তানী শাসকচক্র এ পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কৌশলে এবং কূটচক্রে বাঙালির জাতিসত্তাকে বিনষ্ট করার চক্রান্ত শুরু করে। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি প্রথম এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।
ছয় দফা আন্দোলন থেকে, ঊনসত্তরের গণজোয়ার এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে ১৯৭১ এর ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ ই হলো বঙ্গবন্ধুর আসল ফলাফল।এই পথ চলার শুরু থেকে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর সহযোদ্ধা ছিলেন জাতীয় চার নেতা। বঙ্গবন্ধুর ধ্যান, ধারণা পরিকল্পনা এবং নীতিমালা সম্পর্কে তাঁরা ছিলেন সম্পূর্ণ অবগত। তাই মুক্তিযুদ্ধে তাদের পক্ষে নেতৃত্বদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কিত অধ্যায় গুলোর মধ্যে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ‘জেল হত্যা’দিবস অন্যতম, এই দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের সহযোদ্ধা, পরম বিশস্ত বন্ধু, সর্বোপরি বাংলার জাতীয় চার নেতা কে হারিয়েছি, যাদের অভাব অপূরণীয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের হাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হলে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ঘটে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর কুচক্রী মোশতাকের নেতৃত্বে গঠিত সরকার জাতীয় চার নেতাকে কাছে টানার চেষ্টা করে এবং ব্যর্থ হন। কিন্তু তারা জাতির পিতার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং মোশতাকের ক্ষমতা দখলকে অবৈধ ঘোষণা করেন।
মোশতাক তাদের প্রথমে গ্রেফতার করে কারাগারে নিক্ষেপ করে। ইতিহাসে সবচেয়ে ঘৃণিত বিশ্বাসঘাতক হিসেবে পরিচিত এবং তৎকালীন স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাকের প্ররোচনায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী অবস্থায় ৩ নভেম্বর এই চার জাতীয় নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।ইতিহাসের এই নিষ্ঠুরতম হত্যার ঘটনায় শুধু বাংলাদেশের মানুষই নয়, স্তম্ভিত হয়েছিল গোটা বিশ্ব। কারাগারে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা অবস্থায় এ ধরনের বর্বরোচিত হত্যাকান্ড পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
জাতীয় ৪ নেতার জন্মস্থান।।
তাজউদ্দিন আহমদঃ
বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ।তিনি গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া থানার দরদরিয়া গ্রামে ১৯২৫ সালে তার জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৪৪ সালে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৪৮ সালে আইএ এবং ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৪ সালে কারাবন্দি অবস্থায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে তিনি আইনশাস্ত্রে ডিগ্রি লাভ করেন।
সৈয়দ নজরুল ইসলামঃ
সৈয়দ নজরুল ইসলাম ১৯২৫ সালে কিশোরগঞ্জ জেলার যমোদল দামপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৭ সালে এমএ (ইতিহাস) এবং ১৯৫৩ সালে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন।
ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ মনসুর আলীঃ
ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ মনসুর আলী সিরাজগঞ্জ জেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের ‘কুড়িপাড়া’ গ্রামে ১৯১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি জন্মগ্রহন করেন উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ১৯৪১ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ পাস করেন।এরপর ভর্তি হন আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নাম করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ১৯৪৫ সালে এখান থেকেই অর্থনীতিতে এমএ এবং ল’ পাস করেন। এলএলবিতে প্রথম শ্রেণী লাভ করেন।
আবুল হাসনাত মোঃ কামরুজ্জামানঃ
আবুল হাসনাত মোঃ কামরুজ্জামান ১৯২৬ সালে রাজশাহীতে জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৪২ সালে তিনি মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর রাজশাহী কলেজ থেকে ১৯৪৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। তিনি এরপর উচ্চ শিক্ষার জন্য যান কলকাতা এবং বিখ্যাত প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯৪৬ সালে অর্থনীতিতে অনার্সসহ স্নাতক পাস করেন।
লেখকঃ কবির নেওয়াজ রাজ
এমএসএস”রাষ্ট্র বিজ্ঞান,সিসি”জার্নালিজম,এলএলবি।