এ,এস,এম, জাফর ইকবাল (যশোর) , ঝিকরগাছা : ফুলের রাজধানী খ্যাত উপজেলা হল যশোরের ঝিকরগাছা। আর এই উপজেলায় ক্রমাগতই নিত্যপণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বগতিতে ক্রেতা মাথায় হাত উঠে গেছে। বাজারের ওপর প্রশাসনের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলছে। একবার যে পণ্যের দাম বাড়ে, তা আর কমে না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নিম্নআয়ের মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। বাজারে চাল, ডাল, তেল, নুন, পেঁয়াজ, শাকসবজি থেকে শুরু করে এমন কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য নেই, যার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে না। উপজেলায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায় কারণে অকারণে। কোনো একটি অজুহাত পেলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়া হয়। কখনও রোজা, কখনও ঈদ বা কখনও জাতীয় বাজেট ঘোষণাকে কেন্দ্র করে অকারণেই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করা এক নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই অশুভ প্রবণতা লক্ষ করে আসছি আমাদের সেই ছোটবেলা থেকে এবং আজও সেই একই ধারা অব্যাহত আছে। মাত্রাতিরিক্ত হারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক এবং আকস্মিক মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যখন মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যেতে থাকে, তখন তাদের জীবনে ধীরে ধীরে নেমে আসে নানা ধরনের অসুবিধা ও অশান্তি। বর্তমানের নিত্যপণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বগতির কারণে অসুবিধায় দিন পার করছে উপজেলার অধিকাংশ মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। যারা লজ্জায় না পারছে কাউকে কিছু বলতে, না পারছে কারও কাছে হাত পাততে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, নিত্যপণ্যের মূল্যে মাংসের বাজারে কেজি প্রতি খাসির মাংস ১০০০-১২০০টাকা, গরুর মাংস ৭০০-৭৫০টাকা, দেশী মুরগি ৬২০-৬৫০টাকা, বয়লার মুরগি (আস্ত) ২৫০ টাকা ও কাটা মাংস ৩০০টাকা, কক মুরগি (আস্ত) ৪২০টাকা ও কাটা মাংস ৪৫০টাকা, সোনালী মুরগি ৩৫০টাকা, নিত্যপণ্যের মূল্যে মুদিখানাতে কেজি প্রতি চাউল ৫০ থেকে শুরু করে ৮৫টাকা পর্যন্ত, বিরানীর চাউল ১১০-১৪০টাকা, সরিষার তেল ২২০-২৮০টাকা, সয়াবিন বোতল লিটার প্রতি ১৮৫-১৯০ টাকা, খোলা বাজারের সয়াবিন ১৬০-১৮০টাকা, আইটি ১৪০-১৬০টাকা, পাম ১৩৫-১৫০টাকা, লবণ লুচ ২০-২৫টাকা, প্যাকেট ৩৬-৪০টাকা, মসুরের ডাল ৯০-১১০টাকা, মুগের ডাউল ১১০-১২৫টাকা, ছোলার ডাউল ৮০-৯০টাকা, বুট ডাউল ৬৫-৭০টাকা, বুট ডাউলের ব্যাসন ৭৫-৮০টাকা, জিরা ৬০০-৬৫০টাকা, এলাচ ১৪০০-১৫০০টাকা, লবঙ্গ ১৩০০-১৪০০টাকা, দারুচিনি ৬০০-৭০০টাকা, চিনি ১১০-১২০টাকা, ছোলা আস্ত ৮০-৯০টাকা, কাপড় কাচা সাবান ২৫-৩০টাকা, ডিটারজেন্ট পাউডার ১৩০-১৫০টাকা, সোপ সাবান ৪০-৮০টাকা, কাঁচা বাজারে কেজি প্রতি আলু ১৬-১৮টাকা, পিঁয়াজ দেশী ৩০-৩২টাকা, বিদেশি ২৫-২৮টাকা, কাঁচা মরিচ ১৩০-১৫০টাকা, রসুন দেশী ৮০-১০০টাকা, বিদেশি ১৯০-২০০টাকা, শুকনো মরিচ ৪০০-৪২০টাকা, সজনের ডেটা ১৫০-১৮০টাকা, উচ্ছে ১২০-১৪০টাকা, ভেন্ডি ৮০-১০০টাকা, মেটে আলু ৬০-৮০টাকা, বেগুন ৩৫-৭০টাকা, দস্তা কচু ৭০-৮০টাকা, কাচ কলা-কচু-গাজর ৪০-৫০টাকা, পটল-কচুর লতি ৫০-৬০টাকা, বরবটি- বিটকপি ৪০-৫০টাকা, বিচি কলা-পুঁইশাক-ডেটা শাক-সিম-ফুলকপি- মিষ্টি কুমড়া ২৫-৩০টাকা, পেঁপে- টমেটো ২০-২৫টাকা, গাজর ৩০, শসা ৫০-৬০টাকা, লাউ প্রতি পিছ ৪০টাকা, কাগুজে লেবু পিচ ১০টাকা, মাছ ইলিশ ৮০০-১৬০০টাকা, পাঙ্গাশ ১৮০-২২০টাকা, তেলাপিয়া ১৫০-২০০টাকা, সিলভার ১৮০-২২০টাকা, মৃগেল ১৭০-২৫০, জেল ৬০০-৮০০টাকা, টেংরা ২৮০-৪৫০টাকা, পুঁটি ৩৫০-৪০০টাকা, পাবদা ৪০০-৫০০টাকা, চেং ৪৫০-৫০০, রুই ২২০-৪৫০টাকা।
বিগত কয়েক মাসের ব্যবধানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কয়েক দফা বেড়েছে। এর ফলে সমাজের মধ্য ও নিম্নমধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত শ্রেণি খুবই খারাপ অবস্থায় আছে। তাই এ ব্যাপারে প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক। নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি যাতে কোনো ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পণ্যের দাম আরও বাড়িয়ে দিতে না পারে, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। নিম্নআয়ের মানুষের কষ্ট এবং দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনা করে প্রতিটি দ্রব্যের বাজারমূল্য নির্ধারণ করে বাজার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ভেজাল খাদ্যদ্রব্যের হাত থেকে রক্ষার জন্য সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতা ও সমন্বয়ে আরও বেশি বেশি মোবাইল কোর্ট চালু করে ভেজালকারীদের গুরুদণ্ড প্রদানে কার্যকরী ভূমিকা রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুবিধা বঞ্চিত মানুষের পক্ষে বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছে।
অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান সেবা এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাস্টার আশরাফুজ্জামান বাবু বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের হাতে বর্তমান বাজার ব্যবস্থা জিম্মি হয়ে পড়েছে। সরকারও এদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে ব্যার্থতার পরিচয় দিয়েছে। এই অবস্থা থেকে বাইরে বেরিয়ে আসতে হবে। জনগনকে স্বস্তি দিতে হলে এই অসাধু ব্যবসায়ীদের রাশ টানতে হবে, বাজার মনিটরিং জোরদার করতে হবে। নইলে দ্রব্যমুল্যের যাঁতাকলে সাধারণ জনগন পিষ্ট হতেই থাকবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) কেএম মামুনুর রশিদ বলেন, আমরা প্রতি নিয়নিয়ত বাজার মনিটারিং করার চেষ্টা করছি। নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দ্রব্য মূল্যের তালিকা থাকা বাধ্যতামূলক। দ্রব্য মূল্যের তালিকা না থাকলে ভোক্তা অধিকার আইনের আওতায় ভ্রাম্যমাম আদালতের মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও রোজার আগে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।