একদা শেখুল জাম্মাল আসিয়া সংবাদ দিলো যে, স্থানীয় জনৈক শেখ(মাতব্বর) শরীফ ছাহেবের প্রতি ঈর্ষা-পরায়ণ এবং তাঁহার জমির উপর দিয়া কাফেলাকে অগ্রসর হইতে দিবে না, অগ্রসর হইলে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হইবে এবং কাফেলাকে নিহত বা আহত করিবে। আমরা চিন্তিত হইয়া পড়িলাম। অবশেষে স্থির হইল যে, সম্মুখের মঞ্জিলে না গিয়া অন্য পথ দিয়া উক্ত শেখের অধিকার হইতে দূরে সরিয়া কাফেলা অগ্রসর হইবে।
পরদিন প্রাতে ১০ টার সময় নতুন এক স্থানে গিয়া কাফেলা থামিল। সেখানে না আছে পানি, না আছে জ্বালানী। খাদ্যদ্রব্য আরোহীদের সঙ্গেই থাকিত, মঞ্জিলে রন্ধনের আয়োজন হইত। কিন্তু এই নতুন স্থানে স্নান ও রন্ধনের কোন ব্যবস্থাই ছিল না। অপরিচিত স্থান, সূর্যের তাপ অসহ্য, পানি নাই, গোছলের কোন আয়োজন নাই, পিপাসায় প্রাণ ওষ্ঠাগত। কারবালার দৃশ্য মনে জাগিল। জাম্মালগণ পিপাসার্থ উটগুলো ছাড়িয়া দিলো –পানির অন্বেষণে। উটগুলি এক মাইল দূরে জল-কূপের সন্ধান পাইয়া উদরস্থ চারিটি প্রকোষ্ঠ পানিতে পূর্ণ করিলো। আমরা পিছন পিছন মশক, বালতি বদনা রশি লইয়া গিয়া দেখি পানি নিঃশেষিত।
পুনরায় এদিক ওদিক সন্ধান শুরু হইল। সঙ্গে ছাতা নাই, জুতা নাই, কেবলমাত্র পরিধেয় ইহরাম। প্রখর সূর্য্যলোক প্রাণ ওষ্ঠাগত, বৃক্ষতল নাই যে তাহার ছায়াতে দম লইব। একটী প্রস্তর খন্ডে বসিতে গেলাম কিন্তু তাহা অগ্নি অপেক্ষাও উত্তপ্ত। জমি বিদীর্ণ হইলে তাহারই মধ্যে আশ্রয় লইবার ইচ্ছা- তখন, মালেকুল মউত কে সাদরে আহ্বান করিতেছি। বহুকষ্টে পানি লইয়া মঞ্জিলে ফিরিলাম, সুকদুকের নিচে মাথা রাখিয়া বিশ্রামান্তে একটু সুস্থ্য হইলাম।
কিন্তু রন্ধনের ব্যবস্থা কী? আমিই তো দিবাভাগের পাচক, তাই ছুটিলাম জ্বালানী কাঠের সন্ধানে। মাঝে মধ্যে বাবলা গাছের শুস্ক গুচ্ছ আছে, তাহা উকড়াইতে থাকিলাম, কয়েকটী প্রস্তর খন্ড দিয়া উনন তৈয়ার করিলাম। বহুকষ্টে রন্ধন কার্য সমাপ্ত করিলাম, হঠাৎ ঝাপটা বাতাস আসিয়া রাঁধা ভাত বালিময় করিয়া দিলো। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়িয়া অদৃষ্টকে ধিক্কার দিলাম….
৪র্থ পর্বের লিংক;
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=5307382622683404&id=100002351575118
লেখকঃ হাসান হাফিজুর রহমান।