ছবিটা একটা গল্প মনে করিয়ে দেয়। নাম নিয়ে বিপদ হতে পারতো- সেই আশঙ্কার গল্প।
আমরা দুই ভাই এক বোন। আফজাল হোসেন, আলফাজ হোসেন আর রুমানা আফরোজ। বোনটা সর্বকনিষ্ঠ, আমার চেয়ে কুড়ি বছরের ছোট। স্বাভাবিক নিয়মেই পরিবারের সবার অতি আদরের।
সবার আদরের বলে অনেকগুলো নাম হতে পারতো তার। হয়নি। তাকে একটা নামেই ডাকে সবাই- রুমা। রুমানা থেকে রুমা। আমি কোনোদিন রুমা ডাকিনি। ডাকি মনা।
বিয়ে হলো আমার। ওরা এক ভাই, দুই বোন। বড় বোন রেবেকা মজিদ- ডাক নাম লিপি, লিপটন। একমাত্র ভাইয়ের নাম নাজমুল হালিম- সবাই নমু ডাকে । সবার ছোট তাজীন হালিম- যার অনেকগুলো ডাক নাম।
অধিকাংশ কাছের মানুষ ডাকে কোয়েল আবার অনেকের কাছে সে তাজীন। ছোটবেলায় নানি ডাকতেন এক অদ্ভূত নামে- ভুতুম।
মা তাঁর ছোট মেয়েকে সুমনা ডাকতে চেয়েছিলেন, হয়নি। মনাকে যে মানুষটা দেখে রাখতো তার নাম তিলকি। আধো আধো কথা বলতে পারা মনা তিলকি ডাকতে পারতোনা- ডাকতো অক্ক বলে। তিলকি হয়ে গেলো অক্ক। সেই অক্ক বেঁকে বসেছিল, সুমনা নাম বলতে তার অসুবিধা, আমি মনা ডাকবো। সুমনা মনা হয়ে গেলো।
আরও একটা নাম ছিল। একাত্তর সালে পাপা জীবন হারালেন, হারিয়ে গেলো তাঁর প্রিয় ডাকটাও। মনা তখন মাত্র সাড়ে তিন বছরের। বাবা বা পাপার মুখে নীতু ডাক শুনলেও মনে করতে পারেনা। বিদেশ থেকে মেয়েকে লেখা চিঠিতে নীতু টিকে আছে। চিঠিটা পড়তে বসলে শুনতে পায়, তার পাপা ডাকছে- নীতু।
মনার সঙ্গে আমার বিয়ের সম্পর্ক লেখা রয়েছে- তা তো জানা ছিলনা। বিয়ে যখন হয়েই গেলো, বুঝতে পারলাম বিপদ ঘটে গেছে। বোন মনা, বউও মনা। সমস্যা হওয়ারই কথা। কয়েকটা দিন কেটে যাওয়ার পর দেখি, না- কোনও সমস্যাই হয়না।
কেনো হয়না, বুঝতে বেশি কাঁঠ খড় পোড়াতে হয়নি। বুঝে যাই, ডাকের ধরণে সুক্ষ তফাৎ আছে, থাকে। সে তফাৎ বানিয়ে নেয়া নয়, ডাকা হলে বুঝে নেয়া সম্ভব হয়- কোন মনাকে ডাকা হচ্ছে।
ছবিতে বৌ মনা, বোন মনা আর আমি। ১৯৯০ বা ৯১ সনে এক পিকনিকে ছবিটা তোলা হয়েছিল। ছবিটা সামনে এসে হাজির না হলে এই মনা ও মনা র গল্প
বলা হতোনা। ছবিটা দেখতে দেখতে মনে হলো, জীবন এক বৃহৎ কলেবরের গল্পগ্রন্থ।
আহা, বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান…