সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৩:৪৩ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম:
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে নিয়ে দুর্ঘটনা কবলিত হেলিকপ্টারের কোনো আরোহী বেঁচে নেই দেবহাটায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে  কেন্দ্র ও আশপাশ প্রভাবমুক্ত রাখতে নিরাপত্তা জোরদারের দাবি আলুর হিমাগারে মিললো লাখো ডিম বঙ্গবন্ধু কন্যার লড়াইয়ের গল্প গোটা বিশ্বের কাছে তুলে ধরাই হোক অঙ্গীকার -তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী সরকার ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা উন্নত করতে কাজ করছে। – পরিবেশমন্ত্রী সাবের চৌধুরী দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই ‘ –মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী আগামীকাল থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত দেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ কার্ডের মাধ্যমে ওএমএস বিতরণ শুরু ওএমএস বিতরণে গাফলতি হলে জেল জরিমানার হুশিয়ারি খাদ্যমন্ত্রীর পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্টের চূড়ায় বাবর আলী দেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে”আইজিপি

বেগম রোকেয়া দিবস আজ

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৩, ৭.৩৫ এএম
  • ৩০ বার পঠিত

 

বেগম রোকেয়া ছিলেন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন একজন আধুনিক নারী। শুধু নারী শিক্ষার অগ্রদুতই না, তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী নিবেদিতপ্রাণ একজন সমাজকর্মী। আজ বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) তার জন্মদিন। ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুরের পায়রাবন্দে এক জমিদার পরিবারে রোকেয়ার জন্ম হয়। ১৯৩২ সালের এই দিনেই মারা যান তিনি। দিনটি রোকেয়া দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
বেগম রোকেয়া রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানাধীন পায়রাবন্দ গ্রামে এক রক্ষণশীল ও সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারে ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। বাবা জহির উদ্দীন মোহাম্মদ আবু আলী সাবের ও মা রাহাতুন্নেছা সাবেরা চৌধুরাণী তাঁর ছেলেদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার ব্যবস্থা করেন। তখনকার দিনে মুসলমান সমাজে মেয়েদের আধুনিক শিক্ষার সুযোগ ছিল না। তাই তাঁরাও সাহসী হয়ে মেয়েদের জন্য পারিবারিক শিক্ষার বাইরে অন্য কোনো শিক্ষার ব্যবস্থা করেননি।
ফলে বেগম রোকেয়ার জীবনে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ ঘটেনি। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই তাঁর মধ্যে চার দেয়ালের গণ্ডি পেরিয়ে মুক্ত পরিবেশে শিক্ষা লাভের অদম্য আকাঙ্ক্ষা জন্মায়। তাঁর দুই ভাই কলকাতায় সেন্ট জেভিয়ার্সে পড়তেন এবং বোন করিমুন্নেছা পিতৃহীন সন্তানদের শিক্ষার জন্য কলকাতায় অবস্থান করতেন। রোকেয়া তাঁর বড় ভাই ইব্রাহিম সাবেরের কাছে ইংরেজি শেখেন। রোকেয়াকে অনুপ্রেরণা জোগাতেন তাঁর বড় বোন করিমুন্নেছা। এভাবেই বাংলার অসংখ্য মুসলিম নারী যখন সামাজিক বঞ্চনা ও অবিচারকে মেনে নিয়ে কঠোর পর্দার আড়ালে ঘরের চার দেয়ালকেই আপন ভুবন মনে করেছে, তখন সংগোপনে জ্ঞান সাধনায় মগ্ন ছিলেন বেগম রোকেয়া। ভাইবোনের অনুপ্রেরণা ও নিজের চেষ্টায় রোকেয়া ক্রমে উর্দু, ফারসি, বাংলা ও ইংরেজি প্রভৃতি ভাষায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। ষোলো বছর বয়সে ১৮৯৬ সালে ভাগলপুরের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তিনি ছিলেন নিজের চেষ্টায় গড়ে ওঠা একজন উচ্চশিক্ষিত আদর্শবাদী মানুষ।
নারীকে শিক্ষার মাধ্যমে বিকশিত করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার মাধ্যমে নারী-পুরুষ সাম্যের এক সমাজ প্রতিষ্ঠাই ছিল বেগম রোকেয়ার লক্ষ্য। স্বামীর সামাজিক ও আর্থিক অবস্থান এবং নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি সম্পর্কে মুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি রোকেয়ার চিন্তা ও কাজের সহায় হয়েছিল। স্বল্পস্থায়ী সংসার জীবনে তিনি পড়াশোনা ও সামাজিক মেলামেশার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি দেখেছেন, সমাজে নারীরা কতটা নিগৃহীত। স্বামীর সহযোগিতায় রোকেয়া পাশ্চাত্য জীবনধারা, গণতন্ত্রের গতি-প্রকৃতি ও নারী সত্তার বিকাশের নানা স্তর ও পথ নির্দেশনা পান। স্বামীর জীবদ্দশাতেই প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম বই, যা ছিল ইংরেজিতে লেখা। সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন তাঁকে বাংলা সাহিত্য চর্চায় উদ্বুদ্ধ করেন।
১৯০১ সালে স্বামীর মৃত্যুর অব্যবহিত পর স্বামী প্রদত্ত অর্থে ভাগলপুরে মাত্র পাঁচজন ছাত্রী নিয়ে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু চক্রান্তের শিকার হয়ে এ মহীয়সী নারী মিশনারিদের চর হিসেবে সামাজিকভাবে নিন্দিত হন। হতাশা, অনিশ্চয়তা ও ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ১৯১৯ সালে তিনি কলকাতায় আসেন। ১৯১১ সালের মার্চ মাসে একটি ক্ষুদ্র ভাড়া বাড়িতে তিনি আটজন ছাত্রী নিয়ে আবার শুরু করেন সাখাওয়াত বালিকা বিদ্যালয়। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তিনি নিয়ে আসেন মেয়েদের। মেয়েদের মানবিক ও প্রকৃত যোগ্যতাসম্পন্ন করে তোলার লক্ষ্যে তিনি শিক্ষাকে মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন। অভাবনীয় আর্থিক অসুবিধা, নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে বিদ্যমান সামাজিক বাধাকে মোকাবিলা করেই তাঁর বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও কিছু কিছু মানব হিতৈষীর সহযোগিতায় তাঁর প্রতিষ্ঠিত স্কুল ক্রমে শক্তি লাভ করে।
স্বশিক্ষিত রোকেয়াকে বিদ্যালয়ের অপর্যাপ্ত আর্থিক সংস্থানের মধ্যেই ছাত্রীদের বিকাশে দিনরাত খাটতে হয়েছে। তিনি বিশ্বাস করতেন, মানব জাতি পুরুষ ও নারীর মিলিত ধারারই ফল। পুরুষ ও নারীর সম্মিলনে গঠিত বৃহত্তর মানবগোষ্ঠী একে অন্যের সহযোগী পরিপূরক। এ মানবিক দর্শনকে সামনে রেখে নিগৃহীত ও পিছিয়ে পড়া নারী সমাজের সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যই তাঁর শিক্ষা প্রচেষ্টা শুরু হয়। নারী সমাজকে উচ্চ জীবনবোধে উজ্জীবিত করাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। নারীর মানসিক বিকাশকে রুদ্ধ করে মানব সভ্যতার বিকাশে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে—এমন বিষয়গুলো ধরিয়ে দিতে তিনি লিখেছেন শিক্ষামূলক, সমাজ সংস্কারমূলক বিভিন্ন গল্প কবিতা। প্রবন্ধ ও ব্যঙ্গ রচনায় তাঁর লেখা ছিল ক্ষুরধার। শাণিত লেখনী কখনো কখনো পুরুষশাসিত সমাজকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেছে।
রোকেয়া রচিত সাহিত্যের সংখ্যা বিপুল না হলেও প্রতিটিই অত্যন্ত তাৎপর্যমণ্ডিত। তাঁর রচিত বইয়ের সংখ্যা পাঁচ। এ ছাড়া সমাজ সেবামূলক বিভিন্ন সমিতির কাজের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন তিনি। ১৯১৬ সালে তিনি ‘আঞ্জুমান-ই-খাওয়াতিনে ইসলাম’ বা ‘মুসলিম মহিলা সমিতি’ গঠন করেন। নিরক্ষর ও দরিদ্র নারীদের আত্মনির্ভর করতে বহুমুখী কর্মকাণ্ড পরিচালনাই ছিল এ সমিতির উদ্দেশ্য। সরাসরি অর্থ সাহায্য না করে এ সমিতি সুস্থ নারীর স্থায়ী পুনর্বাসনে জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিত। বেগম রোকেয়া নারীর লাঞ্ছনা অত্যন্ত কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন। তাঁর নিজ পরিবারে মেয়েদের চলাফেরা ও শিক্ষায় কোনো স্বাধীনতা ছিল না। একজন নারী-পুরুষের মতো পরিবারের সদস্য হয়েও ছিল পুরুষের অধীন এবং পুরুষ রচিত বিধিনিষেধ তাকে মানতে হতো। তিনি নারীর মর্মবেদনা ও চাহিদা গভীরভাবে উপলব্ধি করেছেন।
কাজ করতে গিয়ে বেগম রোকেয়া বাধার পাশাপাশি সহযোগিতাও পেয়েছেন। প্রবল প্রতিরোধের মুখে দাঁড়িয়ে তিনি নারীর অগ্রযাত্রার পথ নির্মাণে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর কলকাতায় মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নারীর অগ্রযাত্রায় কাজ করে গেছেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই নারী শিক্ষার চাহিদা ও প্রয়োজন সম্পর্কে সুস্পষ্ট উপলব্ধি, শিক্ষাক্রম ও শিক্ষাদান বিষয় স্পষ্ট ধারণা এবং বিদ্যালয় পরিচালনে সাংগঠনিক দক্ষতা ও জনসংযোগে কুশলী হওয়ার কারণে তিনি এগিয়ে যেতে পেরেছিলেন। তিনি এ বিশ্বাসে স্থিত ছিলেন যে, নারী শিক্ষার অগ্রযাত্রায় পরাজয়ের কোনো স্থান নেই। বেগম রোকেয়া তার স্বপ্নের নারীকে প্রথমে নারী এবং তারপর মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় সব দক্ষতার অধিকারী করে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। তাঁর নিজের গার্হস্থ্য বিজ্ঞান, পারিবারিক স্বাস্থ্যরক্ষা ও পুষ্টি বিজ্ঞানে ছিল অগাধ জ্ঞান।
গার্হস্থ্য কাজেও রোকেয়া ছিলেন দক্ষ। ‘সুগৃহিণী’ প্রবন্ধে তিনি সেসব নারীকেই রুচিশীল হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন, যারা স্বল্প শ্রম, ব্যয় ও সময়ে ঘরকন্নার কাজ নিপুণভাবে করতে পারে। তিনি মনে করতেন, সুগৃহিণী হতে হলেও সুশিক্ষা আবশ্যক। ‘মতিচুর’ বইয়ের ‘গৃহ’ প্রবন্ধে তিনি ঘরকে মানুষের শারীরিক আরাম ও মানসিক শান্তিনিকেতন হিসেবে উল্লেখ করে সেখানে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেন।
রোকেয়া কোনো কিছু মুখস্থ করাকে ঘৃণার চোখে দেখতেন। এমনকি মুসলমান মেয়েদের পবিত্র কোরআনের মর্মবাণী উপলব্ধি করে পড়তে উৎসাহিত করতেন। ধর্ম শিক্ষায় পবিত্র কোরআনের মর্মার্থ অনুশীলন ও অনুধাবনের ওপর তিনি জোর দিয়েছেন। নীতি শিক্ষা ও চরিত্র গঠনের শিক্ষায় তিনি আচরণ অনুশীলনের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে তিনি ব্যবহারিক কাজের ওপর বেশি জোর দিয়েছেন। তাঁর মতে, মিথ্যা ইতিহাস বা ইতিহাসের নিরেট ঘটনা পাঠ নয়; বরং ইতিহাসকে জীবনের ধারার সঙ্গে মিলিয়ে পাঠ করা এবং তা থেকে দেশপ্রেম শিক্ষা ও স্বাধীনতার প্রেরণা লাভ করা প্রয়োজন। বিজ্ঞানকেও তেমনি ব্যবহারিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার কথা বলেন তিনি। ‘সুলতানার স্বপ্ন’ বইয়ে তাঁর কল্পনার নারীকে বিজ্ঞানের জ্ঞান সম্প্রসারণে সব সময় পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ব্যস্ত রেখেছেন। নিজের প্রতিষ্ঠানেও বিজ্ঞান শিক্ষার ক্ষেত্রে এ ব্যবহারিক দিকের ওপরই জোর দিয়েছেন তিনি।
নারী শিক্ষাকে ফলপ্রসূ করতে প্রকৃতি ও বস্তু পাঠ এবং বৃত্তিমুলক শিক্ষাকে রোকেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করতেন। মূলত রোকেয়ার শিক্ষাদান পদ্ধতি প্রয়োগবাদী দর্শনের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল, যার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল নারীর শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতার বিকাশ।

 

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর

পুরাতন খবর

SatSunMonTueWedThuFri
    123
18192021222324
25262728293031
       
     12
24252627282930
       
2930     
       
    123
       
    123
25262728   
       
     12
31      
   1234
262728    
       
  12345
2728     
       
   1234
       
     12
31      
1234567
891011121314
15161718192021
2930     
       
    123
11121314151617
       
  12345
20212223242526
27282930   
       
      1
2345678
23242526272829
3031     
      1
       
293031    
       
     12
10111213141516
       
  12345
       
2930     
       
    123
18192021222324
25262728293031
       
28293031   
       
      1
16171819202122
30      
   1234
       
14151617181920
282930    
       
     12
31      
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
       
© All rights reserved © MKProtidin.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com