মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০১:২৬ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম:
লালমনিরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে শপথবাক্য পাঠ করালেন প্রধানমন্ত্রী অবৈধভাবে দেশি-বিদেশি টিভি চ্যানেল বন্ধে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম শুরু সরকারি বিধি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় জনবল নিয়োগ নগর পরিকল্পনায় নারী পরিকল্পনাবিদদের এগিয়ে আসতে হবে ” –মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যকে র‍্যাংক ব্যাজ পরিয়ে দিলেন পুলিশ সুপার মতিউর রহমান অভিবাসন সংক্রান্ত অপতথ্য রোধে বাংলাদেশ-ইতালি একসঙ্গে কাজ করবে -তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী বাউফলের নওমালায় ডাকাতি ঝিনাইদহ-১ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেন নায়েব আলী কৃষকবান্ধব একটি রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলতে হবে- গণপূর্তমন্ত্রী। কাপ্তাই লেকের হারানো যৌবন ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবেঃ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী

“জলছাপে লেখা”- ফয়েজ আলম

  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৬ মার্চ, ২০২৪, ৫.১৭ পিএম
  • ২৫ বার পঠিত

ফয়েজ আলমের পরিচিতি মূলত বাংলাদেশী উত্তর-উপনিবেশী তাত্ত্বিক ও অনুবাদক হিসাবে। বহু বাংলাদেশী তরুণের উত্তর-ঔপনিবেশিকতা সম্বন্ধে জানাশোনার ভিত্তিটা তৈরি হয়েছে তার লেখা ও অনুবাদ পাঠ করেই। আমার ক্ষেত্রেও একি কথা খাটে। তবে ফয়েজ আলমের তাত্ত্বিক লেখালেখির সাথে বাংলাদেশের মানুষ যতোটা পরিচিত, তার কবিতার সাথে অতোটা না। তার প্রথম কবিতার বইটা বের হয়েছে দশক দুই আগে, যদি স্মৃতি ভুল না করে থাকে। এই বছর বের হইল তার নতুন কবিতার বই “জলছাপে লেখা”।

আমার জন্যে এইটা একটা বিশেষ ঘটনা বটে। কেনোনা, এই বইয়ের বেশকিছু কবিতা আমার বিভিন্ন সময়ে পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে। কয়েকটা কবিতা পড়েছিলাম একদম গরম গরম, কবি লিখবার পরপরই। এবং এই কবিতাগুলা লেখা হইছে বহু বছর ধরে। শূন্য দশকে বাংলাদেশের অনেক কবিই উত্তর-ঔপনিবেশিক কবিতা লেখার চেষ্টা করেছেন। তবে ফয়েজ আলমের মতো পাক্কা দুই দশক ধরে উত্তর-ঔপনিবেশিক প্রকল্প আকারে কবিতা লেখার চর্চা আর কেউ করেছেন কিনা আমার সন্দেহ আছে। এই বইয়ের কবিতাগুলা তাই কবির বিউপনেবিশায়ন প্রকল্পের সাথে যুক্ত দীর্ঘ শ্রমের ফলাফল। বইটা যে অবশেষে বের হইছে, তা এক বড় ঘটনা বটে।

এই দীর্ঘ পথচলা যে কতো কঠিন ছিল তার ছাপ পাওয়া যায় কবিতাগুলার মধ্যে। বিশেষ করে সবচাইতে স্বচ্ছভাবে তা ফুটে উঠেছে “উপনিবেশের দাগ” নামক কবিতায়। কবি যখন লেখেনঃ

“সে থাকে আমার সাথেই
আমার বুঝা বা না বুঝার আড়ালে,
আমার জানার মধ্যে সে এক রংচোরা
ঘুরেঘারে, খায়দায়, গোজামিলে ইতিহাস নাটক বানায়।“

তখন আমরা জানি যে আমাদের কর্তাসত্তার বি-উপনিবেশায়ন কোন সহজ কথা না। ব্যাপারটা লেখার ভাষার মধ্যে শ্রেফ শব্দ, নন্দন আর স্টাইলের ক্ষেত্রে শুদ্ধ দেশী কোন অরিজিন খোঁজা না। একজন সচেতন উত্তর-উপনিবেশী তাত্ত্বিক এবং কবিও যে ঔপনিবেশিক জ্ঞানকান্ডের অধীনে গড়ে ওঠা আধুনিক কর্তাসত্তার বিনির্মান করতে গেলে নিজেকেই হারিয়ে ফেলার পরিস্থিতিতে পড়েন, তা ফুটে ওঠে এই কবিতার অন্য কিছু বাক্যেঃ

“আমি আমারে লেখি
নিজের ছাপচিন্ রাখি সামাজিক বয়ানে,
মাঝে মাঝে চমকে দেখি আনমনে তাহারেও লেইখ্যা ফেলি
শেষে মুছি-যেন জোর করে নিজেরেই মুছতেছি।“

“বহুজনমের দাগ তিলতিল” করে মোছার এই প্রক্রিয়া সহজ না। তাছাড়া এই দাগ আসলে কয়জনমের, সেই প্রশ্নও আমাদের মনে চলে আসে। কেবলি ঔপনিবেশিক আমলের? না আরো আগের যে দাগ আমরা বয়ে চলছি, তার কথাও কবি বলছেন? তাছাড়া কেবলি উত্তর-ঔপনিবেশিক প্রকল্পের মধ্যে এই কবিতাগুলাকে সঙ্কুচিত করার উপায় নাই। ফয়েজ আলমের কবিতা আমার পছন্দ যেইসমস্ত কারনে তার মধ্যে তার কবিতার দার্শনিক এবং রুহানি দিকগুলিও আছে। “উপনিবেশের দাগ” কবিতায় আমরা যেমন দেখি তিনি হাটার সময় ঔপনিবেশিক বড় কর্তার পায়ের আওয়াজ পান, তেমনি “মউত নিয়া গবেষণা” কবিতায় আমরা দেখি যে তিনি পেছনে মউতের পায়ের আওয়াজও পান। এই মউত আবার বর্তমান বাংলাদেশের জনগণের জীবনকে মৃত্যুর সামনে উন্মোচিত করা সার্বভৌম ক্ষমতার রূপেও হাজির। এই বইয়ের বিভিন্ন কবিতায় তাই কবির বড় অপর কখনো ঔপনিবেশিক কর্তা, কখনো মউত, কখনো রাষ্ট্রীয় সার্বভৌম ক্ষমতা, আবার কখনো এখলাস ফকির বা নাম না জানা মরফতি ফকিরের রূপে খোদ কবির মুর্শিদ। এই মুর্শিদই কবির দার্শনিক ও রূহানি বক্তব্যগুলা নিয়ে সবচাইতে পরিষ্কার ভাষায় হাজির হন। ঘোষণা করেনঃ

“এই যে দেখেন কত রংচঙা দুনিয়া,
কে বুঝলো নাই কিবা আছে?
সে ত আমার রুহু আর আমার জবান।

আমার দেলের ভিতর আপনার জন্মমৃত্যু হাঁটা চলাফেরা
জাহের আমার মধ্যে, বাতেনও আমার।“

তত্ত্বচর্চা আর কবিতা একসাথে করা সহজ কাজ না। তত্ত্বের প্রতিফলন কবিতায় ফেলতে গেলে নন্দন অনেকসময় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ফয়েজ আলমের কবিতার উপর এই দুর্বলতা আরোপ করার উপায় নাই। কেনোনা, ওনার কবিতার নান্দনিকতা আর উত্তর-ঔপনিবেশিক তৎপরতা এক দেহ ধারণ করেছে। এই দাবি করাও ভুল হবে না যে ওনার নান্দনিকতাই এই তৎপরতাকে সফল করেছে। আগেই বলেছি, সম্পূর্ণরূপে উপনিবেশের প্রভাবহীন কোন কাল্পনিক অরিজিন, ভাষা ও নান্দনিকতা তার কবিতাতে তিনি ধরার চেষ্টা করেন নাই। এই কারনেই, কখনো তার কবিতা পড়ার সময় চর্চাপদের পদকর্তাদের পদ পাঠের, কখনো আমাদের গ্রামবাঙলার বাউল ফকিরদের গানের সূর ও মেটাফরের সাক্ষাৎ পাওয়ার, আবার কখনোবা একজন আধুনিক কবির কবিতা পাঠেরও অনুভুতি জাগতে পারে। এইসবই বললাম অবশ্য পাঠকের সুবিধার্থে। সবমিলিয়ে ফয়েজ আলমের কবিতা একান্তই ফয়েজ আলমের। এরমধ্যে যে হাইব্রিডিটির দেখা আমরা পাইতে পারি, তা-ই কবির মৌলিকতা। এই হাইব্রিডিটিই তার শক্তি।

ফয়েজ আলমের কবিতা পাঠের আরেকটা বাস্তব লাভ আছে। এমন অনেক বাঙলা শব্দ আছে, যা আধুনিক সাহিত্যে ব্রাত্য ছিল, এবং বর্তমান প্রমিত বিরোধী বাঙলা ভাষার চর্চার জনপ্রিয়তার সময়েও ব্রাত্য রয়ে গেছে। এসব শব্দকে আপনি “দেশী ভাষা” বা অন্য কোন বিদেশী ভাষার বর্গে ফেলতে পারবেন না সহজে। কারন কবি অমন কোন বর্গকে তার উৎস বানান নাই। কবি বরং উন্মুক্ত থেকেছেন গ্রাম বাঙলার মানুষের প্রাত্যহিক মুখের ভাষার প্রতি। নতুন কোন কাল্পনিক ও আদর্শ ভাষার বদলে, একেবারেই মাটির যে ভাষা আমরা ব্রাত্য বানিয়ে ফেলেছি – তাকেই কবি তার কবিতায় জায়গা করে দিয়েছেন। বলা যায়, কবি তার ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা চাষ করেই এই কবিতাগুলার ভাষা তৈরি করেছেন। বাঙলা ভাষার শব্দভাণ্ডারের প্রতি যারা উন্মুক্ত থাকতে চান, তাদের জন্যে এই বইটি বিশেষভাবে উপকারী হবে।

“জলছাপে লেখা” বইটা নিঃসন্দেহে ফয়েজ আলমের জন্যে একটা দীর্ঘ সফর ছিল। আমার বিশ্বাস পাঠকরাও বইটা পড়ার সময় একটা সফরের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাবেন। এই সফর নান্দনিকতা, রাজনৈতিকতা ও রুহানিয়াতের বিভিন্ন পর্দা অতিক্রমের সফর। কখনো কখনো আপনি নিজেকে আবিষ্কার করতে পারেন এমন এক গ্লোবাল ভিলেজের বাজারি হিসাবে, যাকে “ভব বাজার” নামে আমাদের গ্রাম বাঙলার কবিরা বোঝাপড়া ও মোকাবেলার চেষ্টা করেছেন। যেই বাজারে ওয়াল্টার বেনিয়ামিন একজন ফ্লানিউরের মতো বিপ্লবের কারবারি হিসাবে হাজির হওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন। ফয়েজ আলম একবিংশ শতকের বিশ্ব বাজারে আমাদের হাজির করেছেন এমন এক সত্তা হিসাবে যার আর কোন নিশ্চিত পাড়ের কথা জানা নাই। মুর্শিদ যার একমাত্র ভরসা। আপাতত, “গ্লোবাল ভিলেজ” নামক কবিতার কয়টা চরণ দিয়ে লেখাটা শেষ করিঃ

“এ হেন ভবের বাজারে মুর্শিদ, তুমিই বুঝি একমাত্র ভরসা।
এমন বেঘোর বিশ্ব বাজারে ধরা পইড়া
এখন কোন পাড়ে ভিড়ার বাসনা আমি নিবেদন করি
তোমার চরণে?
আমার তো নিশ্চিন্তা কোনো পাড়ের কথাই জানা নাই।“

মাহবুব সেতু
সাহিত্য সম্পাদক

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর

পুরাতন খবর

SatSunMonTueWedThuFri
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
       
     12
24252627282930
       
2930     
       
    123
       
    123
25262728   
       
     12
31      
   1234
262728    
       
  12345
2728     
       
   1234
       
     12
31      
1234567
891011121314
15161718192021
2930     
       
    123
11121314151617
       
  12345
20212223242526
27282930   
       
      1
2345678
23242526272829
3031     
      1
       
293031    
       
     12
10111213141516
       
  12345
       
2930     
       
    123
18192021222324
25262728293031
       
28293031   
       
      1
16171819202122
30      
   1234
       
14151617181920
282930    
       
     12
31      
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
       
© All rights reserved © MKProtidin.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com