দার্জিলিং স্বপ্নের শহর
ড. শাহনাজ পারভীন
পাহাড়ের মৌনতায়, মেঘের দৌরাত্ম্যে,
সবুজের উচ্ছ্বাসে ভেসে বেড়ায় বাতাসের ঝনঝন গান।
তেনজিন রক এর ইতিহাস, ঘুম ইস্টিশনের উচ্চতা,
পায়ে পায়ে পাহাড়ে ওঠার বিলাস, কাঞ্চনজঙ্ঘা,
বাতাশিয়া লুপ কোথা পাবো আর?
রক গার্ডেন, টাইগার হিল, ডিম ফোটা সূর্যের উদ্দীপ্ত উদয়?
মল রোডের ব্যস্ততা, দার্জিলিং চায়ের সুঘ্রাণ,
কাশ্মীরি, পশমিনা শাল,
মল ক্যাম্পাসে টগবগে যুবকের মুগ্ধতার গান,
হাতের মুঠোয় মেঘ ছটফটে দিন!
দুষ্ট মেয়ের মতো উড়ে এসে
খোলা চুল, খোঁপায় বিলি কাটে
ঝিরিঝিরি মেঘ, উড়ন্ত জলকনা
জলকেলি খেলে সারাদিন।
পাহাড়ের পিঠ জুড়ে ঘন বন, সুদৃশ্য চা বাগান;
বুক চিড়ে স্রোতস্বিনী ঝরনার জলের মাতম
ছিটিয়ে ভিজিয়ে দেয় স্বপ্ন চেতন।
সারি সারি সুদৃশ্য পাইন, বনজোড়া বনভূমি ডাক
সিঁড়ি বেয়ে ধাপে ধাপে উঠে গেছে আকাশের দিকে
আকাশবিহীন মাটিতে তারাদের তাজিল্লী ফোটে
পক্ষীবিহীন বৃক্ষ, বাতাস প্রত্যহ জলকনা মাপে
সাত হাজার এক শত ফুট উপরে
ছাঁচে ছাঁচে মেঘের গভীরে ঘর
থরে থরে পাহাড়ে, পাথরে ফোটে পোটেনটিলা
ব্লু পপি, লিলিয়ান, হিমালয়ান,
জেরানিয়াম, প্রিমুলা
কত জানা, অজানার ফুল!
ভেসে থাকে মধ্যাকর্ষনে এগিয়ে এ পথ
নান্দনিক সৌম্য সুন্দর মননে সবার।
পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে, উপত্যকায়
হঠাৎই জেগে ওঠে ঘুমঘর খেলা- ঘর বাড়ি
ঘুম ঘুম চোখে ঘুরে ফিরে উড়ে আসে মেঘ রঙা শাড়ি, সুন্দরী, সুদৃশ্য গুর্খা নারী, মলের দোকান,
খেলনা ট্রেন আর কাঠ ঠোকরার বাতাসিয়া গান।
ভুলি নি সাঁতরাতে
শাহনাজ পারভীন
চাতকের জল চাইবার মতো উষর মরুভূমিতে
জল চেয়েছিলাম,
তুমি দিয়েছিলে বালুঝড়।
মাঘের বাঘ কাঁপা শীতে উষ্ণতা চাইলে
ঠাণ্ডা ঝড়ের গতি
আছড়ে উপড়ে দিলে আমার ওপর।
ভেসে যাওয়া সমুদ্রে খড়কুটো ভেবে যেই ধরেছিলাম তোমার হাত
তুমি এক ঝটকায় ঠেলে দিলে
আজদাহা ঢেউয়ের স্রোতের ওপার।
ভুলি নি আঁচড়াতে, ভুলি নি সাঁতরাতে
তাই বুকে হেঁটে, হামা দিয়ে,
ছুঁয়ে দিলাম স্বপ্নের আকাঙ্ক্ষিত পাড়!
কফি হাউস
শাহনাজ পারভীন
[স্নেহাস্পদ ছোট ভাই কবি সীমান্ত বসুকে]
পৃথিবীর প্রতিটি সৃষ্টিই বিশেষ, সবিশেষ বলে কিছু নেই।
এই যে কফি হাউস, এই যে আড্ডা,
গরম ধূমায়িত কফির কাপ, অনিয়ন পাকুড়া,
গুনে গুনে বিল আনা সাদা এপ্রোণ পরা ওয়েটার।
এই যে কেউ কেউ কবিতার আড্ডায় মেতে উঠেছেন
ঠোঁটে জ্বলন্ত সিগারেট নিয়ে সেই প্রান্তিক সময়ের মতো সাবলীল
মধ্য দুপুরে কেউ কেউ সোয়েটার হিপে বেঁধেছেন অবাধ্যতায়
কেউ কেউ দু’আঙুলে সেলফির নব টেপেন অনবরত।
এই যে গুনগুন হৃদয়তন্ত্রীর কল্লোল সুর, বোঝাপড়া;
এই যে সবুজ কলার পাতার মতোন শনশন আওয়াজ
তিনতলা বিল্ডিংয়ের গ্রীলের জানালা ঘেরা ঠিকরানো রোদ
এঁকেবেঁকে বয়ে চলা নদীর চরের মতো ধবধবে সাদা
যেদিকে তাকাও থরে থরে সাজানো গোছানো উত্থিত মানুষের ঢেউ
টেবিলে টেবিলে জমা হাসি, আড্ডা, নানা ব্যঞ্জনের সুগন্ধি মউ
প্রতিটি কর্ণারে ফোটা উষ্ণ রোদের মতোন উদারতা
নিরিবিলি প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের জৌলুষ ঠিক আগের মতোন।
সমুদ্রের মিহি নীল, শান্ত ঢেউ, দীর্ঘ বালুতটের মতোন সুদীর্ঘ সময় ধরে
আজও জেগে আছে কফি হাউস রাত জাগা কবিতার মতো।
তাই তো ছুটে আসি প্রাণে প্রাণে ঘ্রাণ মেখে সময় অসময়।
পৃথিবীতে সবকিছুই অসাধারণ; সবিশেষ বলে কিছু নেই।