সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪, ০২:২৬ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম:
রাজনীতির লাগামহীন পাগলা ঘোড়ার কান্ড ! শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও বিতর্ক: বঙ্গভবনের অজানা অধ্যায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের সঙ্গে স্বাস্থ্য ও তথ্য উপদেষ্টার মতবিনিময় কালিগঞ্জে প্রধান শিক্ষকসহ ৩জনকে পিটিয়ে যখমঃ উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সাতক্ষীরা সাস্থ্য উন্নয়ন কমিটির বর্ধিত সভায় ২৬ অক্টোবর খুলনা রোড মোড় মানব বন্ধনের সিদ্ধান্ত বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে কৃষকের স্বার্থে কাজ করতে হবে- স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা কালিগঞ্জে আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে পাকাঘর নির্মানের অভিযোগ ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা ছাড়ালো স্বর্ণের ভরি হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে- স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কালিগঞ্জে জাতীয় ইঁদুর দমন অভিযান অনুষ্ঠিত

রাজনীতির লাগামহীন পাগলা ঘোড়ার কান্ড !

  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৪, ২.২৫ পিএম
  • ০ বার পঠিত

 

রাজনীতির সঙ্গে কখন এবং কীভাবে জড়ালাম তা নিয়ে কোনো দিন ভাবিনি। অথবা আমার রাজনীতি করার কোনো যোগ্যতা আছে কি না তাও হাতে-কলমে কোনো দিন পরীক্ষা করিনি। অথবা আমি আসলে রাজনীতি করছি নাকি অন্য ধান্দা করছি এসব নিয়ে দার্শনিক চিন্তা আমার মাথায় আসে না। কারণ দর্শনশাস্ত্রের মতো জটিল বিষয় আমি বুঝি না। সক্রেটিস-প্লেটো-এরিস্টটলের নামগুলো শুনতে ভালো লাগে এবং তাঁদের ছোট ছোট বাণী অমৃতের মতো মনে হয়। কিন্তু রাজনীতি নিয়ে তাঁদের যেসব নাতিদীর্ঘ মতবাদ রয়েছে তা কোনোকালে আমার মাথায় ঢোকেনি। প্রাচীন গ্রিক ভারতীয় এবং আরব দার্শনিকবৃন্দ ছাড়াও সপ্তদশ শতকের দুনিয়া কাঁপানো ইউরোপীয় দার্শনিক ফ্রেডারিক নিটসে, লোপেন হাওয়ার, বার্টান্ড রাসেলসহ সিগমন্ড ফ্রয়েড ও মিশেল ফুকোকে নিয়ে অনেক সময় ব্যয় করেছি, কিন্তু কিছুই বুঝতে পারিনি। কেন বুঝতে পারিনি তার একটি আদি কাহিনি আজ আপনাদের শোনাব।

ঢাকা কলেজে একাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে আমি তমদ্দুন মজলিস নামক অতি প্রাচীন একটি ইসলামী সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর তমদ্দুন মজলিসের আড্ডায় যেতাম। দেশবরেণ্য রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, কবি সবাই আসতেন। সংগঠনের সভাপতি ছিলেন অধ্যক্ষ দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ। প্রথম দর্শনে তাঁর প্রেমে পড়ে গেলাম এবং তাঁর গরম বক্তব্য শুনে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। আমি তাঁর পরিচয় জানতে চাইলাম। পুরনোরা বললেন, উনি একজন দার্শনিক! হাছন রাজার নাতি ইত্যাদি। আমি সবকিছু বুঝলাম কিন্তু দার্শনিকতা কী এবং দার্শনিক হিসেবে তিনি কী করেন তা বুঝলাম না এবং কাউকে লজ্জায় জিজ্ঞাসাও করতে পারলাম না। আমি বহু বছর অধ্যক্ষ দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ সাহেব ছাড়াও অধ্যাপক আহমদ শরীফের মতো অনেক নামকরা দার্শনিকের সান্নিধ্যে গিয়েছি, কিন্তু দর্শনশাস্ত্র বলতে কেবল নয়ন ভরে তাঁদের দর্শন করা ছাড়া আর কিছুই অর্জন করতে পারিনি।

আমার উল্লিখিত ব্যর্থতা সত্ত্বেও আমি বহুবার পড়েছি দার্শনিকরাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম মানুষ। বিজ্ঞান-ধর্ম, বিশ্বাস-অবিশ্বাস, যুক্তি-সাহিত্য-সংস্কৃতি সভ্যতা রাজনীতি-অর্থনীতি ইত্যাদি সবকিছুর উন্নয়ন ও বিকাশের মূলে রয়েছে দার্শনিকতা। দার্শনিকরা না থাকলে পৃথিবীর উন্নয়ন থমকে যেত এবং আমরা সেই আদিমকালের প্রস্তর যুগেই বসবাস করতাম। সুতরাং মানব জাতির ইতিহাসে সব দেশে সবকালে দার্শনিকরাই শ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে স্বীকৃত। প্রাচীন ভারতে যে আর্য সভ্যতা জাতিভেদ তৈরি হয়েছিল সেখানে ব্রাহ্মণ তথা দার্শনিকরা ছিলেন সর্বোচ্চ কুলীন। দ্বিতীয় স্তরে ছিলেন ক্ষত্রিয় বা যোদ্ধা এবং সেই যোদ্ধাদের মধ্য থেকে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠতর ব্যক্তিই হতেন রাজা। কিন্তু কোনো রাজাই স্বাধীন ছিলেন না। তাঁদের সবাইকে ব্রাহ্মণ তথা দার্শনিকদের মতামত মেনে চলতে হতো। প্রাচীন ভারতের আর্য যুগের সেই প্রথা মুঘল যুগ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এমনকি শেষ মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহের দরবারে মির্জা গালিবের মতো দার্শনিকের যে প্রভাব ছিল তা পরবর্তীতে ইংরেজ আমলেও অব্যাহত ছিল। ইংরেজরা যুদ্ধ কূটনীতি দুর্বৃত্তপনা ইত্যাদির দ্বারা যখন পরিস্থিতি সামাল দিতে পারতেন না তখন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের দার্শনিকবৃন্দের সহযোগিতা নিয়ে গদি রক্ষা করেছেন।
ভারতীয় মুসলিমরা কেন ইংরেজদের ঘৃণা করে এবং বারবার বিদ্রোহ করে তা শতচেষ্টা করেও কোনো গভর্নর জেনারেল অথবা ভাইসরয় বুঝতে পারেননি। ফলে গ্রেট ব্রিটেনের মহারানির নির্দেশে তৎকালীন বড় লাট লর্ড মেয়ো স্যার উইলিয়াম উইলসন হান্টার নামক একজন ইংরেজ দার্শনিককে নিয়োগ করেন, যিনি ১৮৬৯ থেকে ১৮৭২ অবধি টানা চার বছর গবেষণা করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেন। যার শিরোনাম ‘দ্য ইন্ডিয়ান মুসলমানস’।

রাজনৈতিক দর্শনশাস্ত্রে এবং দার্শনিকতা যে কী তার একটি অনবদ্য মাস্টার পিস দ্য ইন্ডিয়ান মুসলমানস। একইভাবে বর্তমান সৌদি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ কীভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় দার্শনিকদের সাহায্য নিতেন তার একটি প্রামাণ্য দলিলের নাম আবুল আসাদ রচিত ‘দ্য রোড টু মক্কা’। রাষ্ট্র পরিচালনায় দার্শনিকদের প্রভাবের সবচেয়ে গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস তৈরি করে গেছেন মহাজ্ঞানী সোলন। ইতিহাসের জনক হেরোডোটাস তাঁর অমর গ্রন্থ দ্য হিস্টি রিয়ায় সোলন সম্পর্কে যে চমকপ্রদ কাহিনি বর্ণনা করে গেছেন তা হাল আমলের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল মহোদয়কে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য নিম্নে পেশ করছি।

মহাজ্ঞানী সোলনের সময়কাল ছিল ৬৩০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ থেকে ৫৬০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ অবধি। অর্থাৎ তিনি ৭০ বছর বেঁচে ছিলেন। তাঁর সময়ে গ্রিস ছিল জ্ঞান-বিজ্ঞান-সভ্যতা ও শ্রেষ্ঠত্বে পৃথিবীর এক নম্বর নগররাষ্ট্র এবং সেই রাষ্ট্রে তাঁকে মনে করা হতো সবচেয়ে জ্ঞানী-গুণী-চরিত্রবান, সৎ-সাহসী, বিজ্ঞ-প্রাজ্ঞ এবং সর্বজনশ্রদ্ধেয় বিশ্বস্ত ও সম্মানিত মহাজ্ঞানী। বিশ্ব গণতন্ত্রের যে সূচনা এথেন্স নগরীতে শুরু হয়েছিল সেই গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা বা পিতা হিসেবে বিশ্ব ইতিহাসে কেবল সোলনের নামটি লিখিত রয়েছে। কারণ মানবজাতির জন্য প্রথম যে সংবিধান রচিত হয়েছিল তার রচয়িতা ছিলেন সোলন। সেই সংবিধান রচনার কাহিনি-প্রেক্ষাপট এবং পরবর্তী ঘটনাবলির জন্যই সোলনকে বলা হয় বিশ্ব সংবিধানের আদিপিতা। মহামতি সোলনের কাহিনি হিরো ভোটাস যেভাবে বর্ণনা করেছেন তা থেকে কিঞ্চিৎ উদাহরণ দিলেই বিষয়টি আপনাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। সোলনের জমানায় গ্রিস শাসিত হতো একটি অভিজাত কাউন্সিল দ্বারা, যাদের সংখ্যা ছিল ৯ জন। সোলন ৫৯৪ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে গ্রিসের চিফ ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচিত হন যার তৎকালীন উপাধি বা সরকারি নাম ছিল আর্চন। তখনকার বিচারব্যবস্থা, রাষ্ট্রব্যবস্থা ইত্যাদি সবকিছুই ছিল অলিখিত। সোলনের জমানায় রাষ্ট্র পরিচালকরা এ বিষয়ে সোলনের পরামর্শ চাইলে তিনি তাদের একটি বিধিবদ্ধ ও লিখিত সংবিধানের ধারণা দেন। সবাই তখন সংবিধান রচনা করার ভার সোলনের ওপর অর্পণ করলেন। সোলন শর্ত দিলেন- আমার রচিত সংবিধান আগামী ১০ বছরের মধ্যে কোনো পরিবর্তন করা যাবে না। সোলনের শর্তে শাসকবৃন্দ রাজি হওয়ার পর তিনি সংবিধান রচনায় হাত দেন এবং তা রচিত হওয়ার পর যথাযথ নিয়মে কাউন্সিলের মাধ্যমে গৃহীত হয়। সোলনের সংবিধান মতে, পৃথিবীর প্রথম সুপ্রিম কোর্ট গঠিত হয়। তারপর সেই বিচারালয়ের বিচারকদের কাছে সংবিধান রক্ষার ভার অর্পণ করে সোলন ১০ বছরের জন্য গ্রিস ত্যাগ করেন যাতে করে সংবিধান পরিবর্তনের জন্য কেউ তাঁকে অনুরোধ জানাতে না পারে।

আজকের শিরোনাম প্রসঙ্গে লিখতে গিয়ে মহাজ্ঞানী সোলনের কাহিনি বর্ণনা করলাম এ কারণে যে, রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ যদি জ্ঞানী-গুণী, পন্ডিতদের পরিবর্তে অস্ত্রধারী যোদ্ধা অথবা বুদ্ধিহীন অভিজ্ঞতাহীন শাসকশ্রেণি একক কর্তৃত্বে পরিচালনা করার চেষ্টা করেন তখন রাজনীতি হয়ে ওঠে লাগামহীন পাগলা ঘোড়ার মতো এবং সেই পাগলা ঘোড়ার নিয়ন্ত্রণ-গন্তব্য এবং গতি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। ফলে যুদ্ধবিগ্রহ, অসন্তোষ-অরাজকতা-প্রাণহানি এমনকি রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হারানো অনিবার্য হয়ে পড়ে। এজন্য পৃথিবীর সব যুগের সব প্রকৃতির রাজনীতি তা হোক রাজতন্ত্র কিংবা গণতন্ত্র অথবা স্বৈরতন্ত্র যা কি না মানুষকে সুন্দরতম রাষ্ট্রব্যবস্থা, ন্যায়বিচার ও সুশাসন উপহার দিয়েছে। সেখানে শাসকবৃন্দ সর্বদা জ্ঞানী-গুণী, দার্শনিকদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছেন।

এখন প্রশ্ন হলো- দার্শনিক কারা, জ্ঞানবুদ্ধি থাকলেই কি দার্শনিক হওয়া যায় অথবা প্রচুর অধ্যয়ন এবং অভিজ্ঞতা থাকলে কাউকে দার্শনিক বলে আখ্যায়িত করা যায় কি না। দ্বিতীয়ত, সব দার্শনিক কি রাজনীতির জন্য প্রয়োজন নাকি কেবল রাজনৈতিক দার্শনিকবৃন্দই রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য। এ বিষয়ে ভারতীয় উপমহাদেশের মুঘল রাজদরবার, হর্ষবর্ধনের রাজদরবার, সুলতান ইলতুৎমিশ, গিয়াসউদ্দিন বলবন, আলাউদ্দিন খিলজির রাজদরবার ছাড়াও চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য, অশোক, চন্দ্রগুপ্ত বিক্রমাদিত্য, কুষাণ রাজ কনিস্কের রাজদরবারের দার্শনিকদের তালিকা, যোগ্যতা, চরিত্র দেখলেই আপনি নিম্নরূপ ধারণা পেয়ে যাবেন।

রাজনৈতিক দার্শনিকবৃন্দ মদ্যপ, নারী লোভী এবং দুর্নীতিপরায়ণ ছিলেন না। তাঁরা ছিলেন সাহসী সেনাপতি হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন যোদ্ধা এবং যুদ্ধ ও অর্থবিদ্যার পন্ডিত। ইতিহাস-সাহিত্য এবং মানব মন ও মানবের অভ্যাস সম্পর্কে সম্যক অবগত। রাজার প্রয়োজন রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্যতা এবং জনগণের সামর্থ্য এ তিনটি বিষয়ের ওপর তাদের জ্ঞান-গরিমা কতটা গভীর তাৎপর্যপূর্ণ এবং চিরন্তন ছিল তা সোলনের সংবিধান, আবুল ফজলের আকবরনামা কিংবা চাণক্যের অর্থশাস্ত্র অধ্যয়ন করলেই অনুধাবন করা সম্ভব।

বুদ্ধিবৃত্তিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিধায় আব্বাসীয়রা ৪০০ বছর, অটোমানরা ৮০০ বছর, রোমানরা ১০০০ বছর, মিসরীয় ফেরাউনরা ৩০০০ বছর, উমাইয়া ফাতেমীয়রা শত শত বছর ধরে পৃথিবী শাসন করেছিলেন। চীন-ভারত-আফ্রিকা, মধ্য এশিয়ার বহু সাম্রাজ্য শত শত বছর টিকে ছিল এবং অঞ্চলভেদে সভ্যতার অনন্য সব উদাহরণ সৃষ্টি করে বিশ্ব রাজনীতিতে অসংখ্য মাইলফলক তৈরি করে রেখেছে। ফলে আজও আমরা সামরিক বিষয়াদি শিক্ষার জন্য মাস্টার সানঝু আর্ট অব ওয়ারের সাহায্য নিই। রাষ্ট্র-সমাজ এবং পরিবার সম্পর্কে ধারণা পেতে কনফুসিয়াস, প্লেটো-সক্রেটিস, ইবনে খালদুন, ইবনে আরাবি অথবা মহাভারত-রামায়ণ নামক সাহিত্যের মধ্যে কীভাবে নিজেকে খুঁজে বেড়াই তার একটি ছোট্ট উদাহরণ মহাভারত থেকে বর্ণনা করে আজকের নিবন্ধের ইতি টানব।

পাণ্ডব বীর অর্জুনের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন কৌরব সেনাপতি কর্ণ। তিনি জানতেন প্রচলিত যুদ্ধকৌশল ও যুদ্ধাস্ত্র দ্বারা তিনি অর্জুনকে হারাতে পারবেন না। সুতরাং ব্রহ্মাস্ত্র নাম অব্যর্থ এক অস্ত্রবিদ্যা হাসিলের জন্য তিনি অস্ত্রগুরু পরশুরামের কাছে গেলেন। পরশুরাম অর্জুনের অভিপ্রায় শুনে প্রথমেই বললেন- ব্রহ্মাস্ত্র কেবল ব্রাহ্মণরাই শিখতে পারে এবং এই অস্ত্র প্রয়োগের ক্ষমতা কেবল ব্রাহ্মণদেরই রয়েছে। কোনো ক্ষত্রীয় ব্রহ্মাস্ত্র ধারণ-সংরক্ষণ ও প্রয়োগের যোগ্য নয়। কারণ ক্ষত্রীয়ের ক্ষমতা ও ক্রোধের সঙ্গে যদি ব্রহ্মাস্ত্রের শক্তি যুক্ত হয় তবে বিশ্বে প্রলয় হয়ে যাবে। পরশুরামের বক্তব্য শোনার পর কর্ণ নিজেকে ব্রাহ্মণ বলে পরিচয় দিলেন এবং পরশুরামের সেবায় নিযুক্ত হয়ে ব্রহ্মাস্ত্রের কৌশল রপ্ত করতে লাগলেন। কিন্তু একটি দৈব দুর্ঘটনা সবকিছু তছনছ করে দিল।

ঘটনার দিন কর্ণ তাঁর অস্ত্রগুরুকে নিয়ে গভীর জঙ্গলে গেলেন সর্বশেষ প্রশিক্ষণ লাভের জন্য। ফেরার পথে পরশুরাম ক্লান্ত হয়ে কর্ণের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন। ইতোমধ্যে একটি বিষধর সাপ কর্ণকে দংশন করল। গুরুর নিদ্রাভঙ্গ হবে এই ভয়ে কর্ণ নড়াচড়া করলেন না। কিন্তু সাপের বিষক্রিয়ায় তাঁর চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল এবং পরশুরামের মুখের ওপর অশ্রুপাত হওয়ায় তাঁর ঘুম ভেঙে গেল। পরশুরাম পুরো ঘটনা শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন এবং কর্ণকে অভিশাপ দিলেন। তিনি কর্ণের কাছে তাঁর কান্নার কারণ শুনে প্রথমেই বললেন, সাপের দংশনে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে চিৎকার না করে ধৈর্য অবলম্বন কেবল ক্ষত্রীয় রক্তধারীর পক্ষেই সম্ভব। কোনো ব্রাহ্মণ এই কাজ করতে পারে না। সুতরাং তুমি মিথ্যা কথা বলে ব্রহ্মাস্ত্রের জ্ঞান হাসিল করেছ। কাজেই যুদ্ধক্ষেত্রে যখন তুমি বিপদে পড়বে তখন তুমি তোমার অর্জিত জ্ঞান ভুলে যাবে। আমার সঙ্গে প্রতারণা এবং নিজেকে ব্রাহ্মণ বলে পরিচয় দেওয়ার জন্য আমি এই অভিশাপ দিলাম। পরশুরাম সেই অভিশাপ কর্ণের জীবনে কী পরিণতি ঘটিয়েছিল তা জানতে হলে আপনাদের অবশ্যই মহাভারত পড়তে হবে।

লেখক : গোলাম মাওলা রনি
সাবেক সংসদ সদস্য

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর

পুরাতন খবর

SatSunMonTueWedThuFri
   1234
19202122232425
262728293031 
       
  12345
20212223242526
2728293031  
       
15161718192021
2930     
       
     12
24252627282930
       
2930     
       
    123
       
    123
25262728   
       
     12
31      
   1234
262728    
       
  12345
2728     
       
   1234
       
     12
31      
1234567
891011121314
15161718192021
2930     
       
    123
11121314151617
       
  12345
20212223242526
27282930   
       
      1
2345678
23242526272829
3031     
      1
       
293031    
       
     12
10111213141516
       
  12345
       
2930     
       
    123
18192021222324
25262728293031
       
28293031   
       
      1
16171819202122
30      
   1234
       
14151617181920
282930    
       
     12
31      
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
       
© All rights reserved © MKProtidin.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com