ভালোবাসা শব্দটা শুনলে আজকাল বড্ড হাসি পায়! জীবনের চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আজ যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখানে এই শব্দটা চরম মূল্যহীন!
বিচ্ছেদ কখনও চাইনি আমি! ভালবাসতাম- তাকে যতটা না তার চেয়েও বেশি সংসারটাকে! সংসার যারা করেন তারা জানেন, ঘরের প্রতিটা আসবাব, পর্দা, কাঁসার বাসনটা থেকে শুরু করে কালো হয়ে যাওয়া রান্নার কড়াইটার প্রতিও তিব্র মায়া জন্মে যায় ! মেয়েরা তো দাঁত ভাংগা বিয়ের চিরুনিটাও ফেলতে চায়না, সেখানে সম্পর্ক ছুড়ে ফেলা তো বহু দূরের কথা! তাই অনেক কিছু(অনেক কিছু মানে কিন্তু অনেক কিছু) সহ্য করেও মানসিক ভাবে কিছুটা ভারসাম্যহীন মানুষটির সংসার করে গেছি! মনের মধ্যে ক্ষোভ আর গ্লানি জমেছে! জমতে জমতে যখন বিরক্তি আর ঘৃনায় পরিণত হয়েছে তখনই তালাক অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে! অথচ জানি, আল্লাহর কাছে সকল হালাল বস্তুর মধ্যে একটা জিনিসই অপ্রিয় -সেটা হলো তালাক!
তারপরও কারাগারে যেতে হয়েছে! সম্পর্ক নাই অথচ সম্পর্কের জের ধরে ! বাসি সম্পর্ক পচা গন্ধ ছড়িয়েছে!
আমার ভাই নেই, দেশে কোন আত্নীয় নেই, মাথার উপর কোন প্রভাবশালীর ছত্রছায়া নেই- যারা নামকাওয়াসতে বন্ধু ছিল তারা কেটে পরেছে নিজেদের পিঠ বাঁচাতে! আমার বাবা যিনি সারাজীবন ন্যয়নীতির বাণী দিয়ে গেছেন তিনি স্তম্ভিত! এমনিতেই কখনও কারও কাছে সুপারিশ করার মতো লোক নন, এখন তো মেয়ের কারনে মুখ দেখাতে পারছেন না! তিন বছরে একজন ভালো উকিলের সন্ধান তিনি বের করতে পারেননি!
জেলখানাতেও আমার প্রতি অনেক বৈষম্য হয়েছে! আমি ডিভিশন পাই অথচ ডিভিশন দেয়া হয় ছয় মাস পরে! তারপরও কারাবিধান অনুযায়ী যা আমার প্রাপ্য তা আমাকে দেয়া হয়নি! আমাকে মেডিকেল সেন্টারে কাজ না দিয়ে বাগানে মালীর কাজ দেয়া হয়েছে! মাটি কুপিয়ে হাতে ফোসকা পরে যেত- সুপারিশের জায়গা ছিলনা!
কারাগার থেকে বের হবার পর জীবন যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরেছি! নতুন পুরানো অনেকেই এসেছে ! কেউ সহানুভূতি, কেউ পরামর্শ , কেউ বা উপদেশ দিয়েছে! তবে বেশিরভাগই শেষ পর্যন্ত ভালোবাসা জানিয়েছে! সেই ভালোবাসা দায়িত্ব নেবার ভালোবাসা নয় – সময় কাটানো টাইপ ভালোবাসা!! গুষ্টি কিলাই- আজাইরা এত সময় কই?!
বই ছাপাতে গিয়েও বাঁধা পেয়েছি! প্রথম সারির প্রকাশনা তৎকালীন সরকারের রোষানলে পরতে চায়নি! তারপরও হার মানিনি -একটি বনেদী প্রকাশনার মাধ্যমে বই প্রকাশিত হয়েছে! পেয়েছি দারুণ মেধাবী এক সম্পাদক!
বইমেলা ২০২৪ এর মাধ্যমেই পরিচয় কায়েস আহমেদ সেলিমের সাথে! উনি একশ বই কিনেছেন! কিছুটা অবাক হয়েছিলাম ! উনি আমাকে নয়, আমার লেখাকে ভালোবেসেছিলেন – অন্তত আমি তাই ভেবেছিলাম! পরবর্তীতে আমার প্রতিটি কাজে উনি ছায়ার মতো থেকেছেন! কখনও আমার অজান্তেও সাপোর্ট দিয়ে গেছেন! ভালবাসা দেখাতে আসেননি, দেখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে দায়িত্ব নিতে হয়! গোপনে নয় -সামাজিক মর্যাদা দিয়ে বিতর্কিত সমালোচিত সাবরিনার হাত ধরেছেন! আমার অনেক পাগলামিতে হয়তো বিব্রত হয়েছেন কিন্তু বিরক্ত হননি! হাজারো মানুষের উসকানিমূলক কথাতেও অবিচল থেকেছেন!
ভালোবাসার মাস বা ১৪ই ফেব্রুয়ারি আমার কাছে বিশেষ কোন গুরুত্ব বহন করেনা! তবে ১৪ই ফেব্রুয়ারি কায়েস সাহেবের জন্মদিন! এটাই গুরুত্বপূর্ণ !
একটি কথা বলব, ভালোবাসার চেয়েও জরুরি বসবাস করার জন্য একটি ভালো বাসা! কারও ভালোবাসার পাত্র হওয়ার চেয়ে কারও আশ্রয় আর নির্ভরতার স্থল হওয়া অনেক বেশি সন্মানজনক!
লেখকঃ ডাঃ সাবরিনা হুসেন মিষ্টি।