আশাশুনি, সাতক্ষীরা: আশাশুনির অসহায় আমেনা বিবি তার স্বামীর শেষ স্মৃতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া চিঠি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করতে চান বলে জানিয়েছেন। অসহায় আমেনা বিবি বলেন, বিয়ের মাত্র কয়েক বছর পর একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান ও স্ত্রীকে রেখে আশাশুনি সদরের কোদন্ডা গ্রামের মৃত তফেল মোল্যার ছেলে আবুল কাসেম মোল্যা ১৯৭১সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন পাক হানাদার বাহির উপর। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস আর শেষ দেখা হয়নি স্ত্রী ও সন্তানের সাথে। স্বামী হারিয়ে শিশু সন্তানকে নিয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়ানো অসহায় আমেনা বিবি স্বামীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। আমেনা বিবি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তি বাহিনীতে যোগদান দেওয়ায় ১৯৭১ সালের ১১কার্তিক (তখন ছিলো রোজার মাস) সকাল বেলা কোদন্ডা সড়কের কালভার্ট এর পাশে তার স্বামী আবুল কাসেম মোল্যাকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে গুলি করে নৃশংস ভাবে হত্যা করে পাক-হানাদার বাহিনী। পরে রাতে চুরি করে স্বামীর লাশ নিজের একটি সাদা রংয়ের শাড়ি দিয়ে কাফনের কাপড় বানিয়ে দাফন করেন আমেনা বিবি। এরপর দেশ স্বাধীনের পর একই এলাকার রনজিৎ এর সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ঘটনার বিবরণ জানিয়ে একটি চিঠি লেখেন স্বামী হারা অসহায় আমেনা বিবি। চিঠির জবাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালিন খুলনা জেলা প্রশাসক এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে পরিবারের সাহায্যার্থে আমেনা বিবিকে দুই হাজার টাকার একটি চেক প্রদান করেন। যার সাথে বঙ্গবন্ধুর লেখা তার পরিবারকে সমবেদনা জানিয়ে একটি চিঠিও ছিলো। সেই চিঠির স্বারক নং প্র/ঐ/ক/৬-৪-৭২/শিউ/৪৫৩. তাং ২৪/০২ এবং চেক নং সি;এ ০৩৪০৫৩। পরে আশাশুনি সদরের তৎকালিন ইউপি চেয়ারম্যান আমজেদ আলীর মাধ্যমে স্বামীর মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহনের জন্য ২৫০টাকা পেয়েছিলেন আমেনা বিবি। তারপর থেকে এপর্যন্ত বিভিন্ন সরকারী দপ্তর ও স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের কাছে তিনি গেলেও কোন সরকারী সহযোগিতা ও তার স্বামীর মুক্তিযুদ্ধেও স্বীকৃতি এষনও তিনি পাননি। তার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্বাধীন দেশে শিশু কন্যাকে নিয়ে পথে পথে বসবাস ছিলো তার। স্বামীর বলতে কোন জায়গা ছিলো না। তার স্বামীর অন্যান্য ভাইয়েরা সরকারী জায়গায় বসবাস করতেন এবং এখনও করেন বলে জানান তিনি। বর্তমানে আশাশুনির শ্রীউলা গ্রামে তার জামাই আব্দুর রহীম সরদারের অস্থায়ী সরকারী জায়গায় নাতী নাতনীদের নিয়ে কোনরকম বসবাস করেন আমেনা বিবি। এব্যাপারে জানতে চাইলে মৃত আবুল কাসেম মোল্যার আপন সহদর ভাই দূর্গাপুর আদর্শ গ্রামের বাসিন্দা লুৎফর রহমান বলেন, কোদন্ডা গ্রামের মৃত বড় পাগলা ফকিরের ছেলে জিয়াদ আলী ফকির, মেছের সানার ছেলে মফেজউদ্দীন সানা এবং আমার ভাই সহ কয়েকজন মিলে খাজরা ইউনিয়নের হাতিরডাঙ্গা ক্যাম্পে বাবর আলী কমান্ডারের নেতৃত্বে তারা পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলো। এলাকাবাসীর অনেকে বলেন, আবুল কাসেম মোল্যা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাড়ি না থেকে হাতিরডাঙ্গা ক্যাম্পে তাদের এলাকার অনকে লোকজনকে নিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন। এদিকে, দেশপ্রেমী আবুল কাসেম মোল্যার অসহায় স্ত্রী আমেনা বিবি স্বামীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেতে জীবনের পড়ন্ত বেলায় বঙ্গবন্ধু কন্যা মানবতার জননী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে স্বাক্ষাতের শেষ আসা ব্যক্ত করেছেন। অপরদিকে অসহায় আমেনা বিবি স্বামীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়ে তাকে শেষ বয়সে তার মুখে হাসি ফুটানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।