হাফিজুর রহমান শিমুলঃসরকারি বরাদ্ধ ত্রান সামগ্রী কাদের জন্য, আর পাচ্ছে বা কারা? এমন প্রশ্ন হতদরিদ্র, অসহায় ও দিনমজুর আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসরত ৪৭টি পরিবারের। অনেকে এখনও জানেইনা করোনা ভাইরাস আসলে কি? শুধু গ্রাম পুলিশ সকালে সন্ধ্যায় এসে বলে যায় কেহ ঘরের বাইরে যেতে পারবে না। ঘরের বাহিরে গেলেই আনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু কিভাবে সংসার চালাবো, কি খাবো তা শুনলে কিছু বলেনা চৌকিদার। এমনিভাবে মনের কষ্টের কথা বিলাপ করছিরেন উপজেলার নীলকন্ঠপুর আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবারত সুবিধা বঞ্চিত হতদরিদ্ররা। শনিবার (১১ এপ্রিল) সকালে সরেজমিনে গিয়ে উঠে এসেছে অনেক নাজানা অমানবিক তথ্য।
করোনা ভাইরাসের কারণে কাজ না পেয়ে না খেয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করছে ৪৭টি পরিবারের সদস্যরা।
সরেজমিন সুত্রে জানাগেছে,
বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের নীলকন্ঠপুর গ্রামের গোয়ালঘেষীয়া নদীর ধারে গড়ে ওঠা গুচ্ছ গ্রামের ৪৭ টি হতদরিদ্র পরিবারের বসবাস। এউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে ভুমিহীনদের নিয়ে তৎকালীন জনপ্রিয় চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মিজানুর রহমানের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠে আবাসন প্রকল্প এবং গুচ্ছগ্রাম। যাদের অধিকাংশ পরিবার দিনমজুর, ভ্যানচালক, অসহায় ও হতদরিদ্র । ভিটেমাটি না থাকায় সরকারে আবাসনপ্রকল্প গুচ্ছ গ্রামে ঠাই হয় এ সকল পরিবারের।করোনাভাইরাসে আতঙ্কে কাজ না পাওয়ায় তারা না খেয়ে কষ্টে দিনযাবন করছে। আবাসনের ১০ নং ঘরে স্ত্রী ও তার ৫ সন্তানদের নিয়ে বসে আছে পরিবারের কর্তা মদন কুমার দাশ। তিনি জানান, ‘ করোনা ভাইরাসের কারণে ঘরের বাইরে যাওয়া যাচ্ছে না বাড়ি বাড়ি চোকিদাররা এসে নিষেধ করে গেছে যে ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে না কিন্তু কোন খাবারের কথা বলেনি। ঘরে কোন খাবার নেই বাইরে না গেলে, কাজ না করলে খাব কি। পরিবারের পাঁচজন মানুষ, ঘরে রান্না করার মত চাল নেই, কোন সাজ না খেয়ে আবার কোন সাজ মুড়ি ও পানি খেয়ে কষ্টে দিন চলে যাচ্ছে। ৫ নং ঘরের জাহেরা খাতুন বলেন “সরকারি কোন অনুদান এখনও পাইনি। দিনজমুর স্বামী কাজ করতে না পারায় ঘরে খাবারের মত চালও নেই। ছেলে মেয়েদের কি খেতে দিবো তা নিয়ে বড়ই চিন্তায় আছি”। তাছাড়া ঘরের ছাউনীর অবস্থা খুবই খারাপ। এই মুহূর্তে যদি ঝড় বৃষ্টি হয় তাহলে ঘরে থাকা যাবে না। আমরা যাবো কোথায় যাবার কোন জায়গা নেই। এভাবে বিগত দিনে ঝড় ঝামটা মোকাবেলা করে এসেছি কিন্তু ঘরের উন্নয়নে কেহ এগিয়ে আসেনি। করোনা ভাইরাস সম্পর্কে আমাদের তেমন ধারণা নেই। আমাদের পাশাপাশি ঘর হওয়ায় সবার মধ্যে অবাধ যাতায়াত। করোনাভাইরাস সম্পর্কে জানতে চাইলে ভ্যানচালক আবাসনে বসবাসকারী আবুল হোসেন সরদার জানান, দেশে করোনা আসছে শুনেছি কিন্তু করোনা কেমন আমরা জানিনা। ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করে গেছে তাই ভয়ে বাহির হচ্ছিনে। তবে আমার সংসারে উপার্জন করার মত আর কেউ নাই। ভ্যান না চালালে খাবকি। কোন অনুদান নিয়েও তো কেউ এগিয়ে আসেনি। খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে আমারসহ এখানের বাসিন্দাদের। নীলকন্ঠপুর গ্রামটিই ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডের সদস্য খলিলুর রহমান সরদারের নিকট জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন, আমি করোনা ভাইরাস আসা থেকে এই পর্যন্ত জনগনের দেওয়ার মত কোন অনুদান পাইনি। ইউপি চেয়ারম্যান করোনা ভাইরাস এর জন্য সকল ইউপি সদস্যের কাছ থেকে দুই মাসের বেতন কেটে নিয়েছে, ইউনিয়নের প্রত্যেক ভ্যান চালকদের অনুদান দেবে বলে। কিন্তু আমার ওয়ার্ডের আবাসন প্রকল্পের এই গুচ্ছগ্রামে কয় জন ভ্যানচালক আর্থিক সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আর কাওকে দিয়েছে কিনা আমার জানা নেই। চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজ উদ্দীনের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন কিছু কিছু অনুদান এসেছে, অধিকতর অসহায়দের তালিকা করে তাদের বাড়িতে ত্রান সামগ্রী পৌছে দিচ্ছি। তবে যারা রেশনকার্ড, ভিজিডি কার্ডসহ বিগতদিনে সরকারি ভাতাদী পাচ্ছে তারা করোনা ভাইরাস এর দান অনুদান পাবেনা।