মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩৮ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম:
ভোলায় কৃষি উন্নয়নে আওতায় কৃষক প্রশিক্ষন  ফুলপুরে ৩৩তম আন্তর্জাতিক ও ২৬তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস পালিত তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘স্মার্ট কেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ বিষয়ক চার দিনব্যাপী কর্মশালা শুরু কেমন পুলিশ চাই’ শীর্ষক জনমত জরিপের ফলাফল প্রকাশ ভূমি সংস্কার সম্পন্ন হলে পার্বত্য চুক্তি বহুলাংশে স্বার্থক হবে- পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা শোকরিয়া আদায় ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন “আবু সালেহ আকন” নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তারুণ্যের উৎসব-২০২৫ তথ্য চাইতে রেল কর্মকর্তা বলেন গেট আউট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের দেখতে অর্থোপেডিক হাসপাতালে আইজিপি এইচএসসি পাসে জনবল নিচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ, আবেদন ফি ২০০ টাকা

“দুঃখের কোনো মাতৃভূমি নেই” পাঠ পরবর্তী চিন্তা : তৌফিক জহুর

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২০, ১০.৪৭ পিএম
  • ৩৩০ বার পঠিত

প্রাককথনঃ আধুনিক অথবা অনাধুনিক যাই হোক না কেনো, কবিতাকে প্রথমত এবং শেষ পর্যন্তই কবিতাই হতে হবে,অন্যকিছু নয়। একথা মেনে নিয়েই কবিতার পথে এগুতে হয়। প্রাচীন আলংকারিকেরা বলেছেন, ” বাক্যং রসাত্মকং কাব্যম্”… কাব্য হচ্ছে সেই বাক্য, রস যার আত্মা। আর রস হলো সেই আনন্দময় উপলব্ধি, উৎকৃষ্ট কাব্যপাঠের ফলে পাঠকের পরিশীলিত হৃদয়ে যার জন্ম। কাব্যের লক্ষ্য রস। কবির মনের ভাব-ই রসে পরিণত হয়। কিন্তু ভাব নিরালম্ব নয়,তারও অবলম্বন চাই। বস্ত্ত হলো তার সেই অবলম্বন।বস্ত্তুর সংস্পর্শে এসে কবির মনে যে ভাবের উদ্রেক হয়,কবি কথা দিয়ে তার শরীর নির্মাণ করেন আর ব্যঞ্জনার সাহায্যে কাব্য শরীরে প্রাণের অনুপ্রবেশ ঘটান। যাঁরা বলেন, কবির অভিজ্ঞতাই কবিতা,তাঁরাও একথা মানেন যে, একজন মানুষের জীবনে যা-কিছু ঘটে সেটাই তাঁর অভিজ্ঞতা নয়, কবির মন যখন তাকে রূপান্তরিত করে নেয় তখন তা অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়ায়। একজন কবির ভাষা সম্পদ, কবিতার ঐতিহ্য সম্বন্ধে সচেতনতা এবং জীবন ও জগৎ সম্বন্ধে ব্যাপক ও গভীর ধারণার উপর তাঁর কবিতার শরীর গঠন হয়। প্রত্যেক কবির কাছে তাঁর জীবনই বড়ো কাঁচামাল। এই কাঁচামাল থেকে তিনি একটা ঘোরের মধ্যে দিয়ে ক্রমাগত সামনের দিকে এগিয়ে যান এবং নাজিল হয় কবিতা। ” দুঃখের কোনো মাতৃভূমি নেই “.. … কবি কুশল ভৌমিকের কাব্য গ্রন্থ নিয়ে পাঠ পরবর্তী চিন্তা নিয়ে কিছু বয়ান করার জন্য এই ভূমিকার অবতারণা।

০১.

আমাদের লেখালেখির জন্মসময় নব্বই দশক। নব্বই দশকের কবিতার পালাবদলের যে মোচড় লক্ষ্য করি, তা পূর্ববর্তী সময়ে যেভাবে পাঠ করেছি তারচেয়েও অনেক নতুন। নব্বই পরবর্তী শব্দচাষীদের কারো কারো লেখার মাঝে ইতস্তত – বিক্ষিপ্ত -বিস্রস্ত শব্দরাশির অস্বাভাবিক সব যোজনা খেয়াল করি। আর তাই সেই সকল কবিতা পাঠ করতে যেয়ে তালগোল পাকিয়ে অর্থহীনতার দেয়ালে হোঁচট খেয়ে ফিরে আসি নিজের আঙিনায়। কবি কুশল ভৌমিকের কবিতার কাছে যেয়ে আমি হতাশ হইনি। কুশলের কবিতা আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে তার অভ্যন্তরের মূল ফটক খুলে দিয়ে। আমি কবিতা পড়ার সময় শব্দের ঠাসবুনন দেখি।কবিতার স্বাদ নিতে চাই। শব্দের অভাবনীয় উল্লাস আর চাকচিক্য দেখে চমকিত হতে চাই। শব্দের মিছিল কবিতার শরীরে বয়ে যায়, আমি সেই মিছিলের একজন শেষের শ্লোগানদাতা হবার বাসনায় দৌড়াতে থাকি কবিতার শরীরের পেছন পেছন। কুশল ভৌমিক আমাকে হতাশ করেননি। দুঃখের কোনো মাতৃভূমি নেই কাব্যগ্রন্থে কবিতার শব্দ নিয়ে তিনি নিজেই মিছিল করছেন।কিন্তু শব্দের ইতস্তত – বিক্ষিপ্ত – বিস্রস্ত অস্বাভাবিক শব্দ যোজনায় নয়, বরং এমন শব্দ দিয়ে কুশল কবিতার শরীর গঠন করেছেন যা বুঝতে আমাকে অভিধানের দরোজায় কড়া নাড়তে হয়নি। সহজ সরল সাবলীলভাবে তিনি শব্দ চয়ন করেছেন। এটা কুশলের মুন্সিয়ানা। আমরা দুটি কবিতা খেয়াল করিঃ

১. নিঃশব্দে যন্ত্রণা সয় মানুষ
কখনো কান্না হয়ে কুয়াশার মতো
ভেজায় চিবুক তবুও সে ভীষণ একা
ব্যক্তিগত অরূপসাগরে।
মানুষের দুঃখের কোনো মাতৃভূমি নেই
না সে ঠাঁই পায় আসমানে না জমিনে।
(দুঃখের কোনো মাতৃভূমি নেই, পৃষ্ঠা -২২)

২.একে অপরের মুখ পান করতে করতে
আমাদের দীর্ঘশ্বাস ক্রমশ দীর্ঘ হতে থাকে
দীর্ঘশ্বাস দীর্ঘ হতে হতে একটা আশ্চর্যবোধক চিন্হের জন্ম হয়
আশ্চর্যবোধক চিন্হটি ছোট হতে হতে একটা দশমিক হয়ে যায়
তারপর দশমিক আর দীর্ঘশ্বাসের মধ্যিখানে
আমরা মৃত্যুকে জন্মাতে দেখি।
(মৃত্যুর জন্ম রহস্য, পৃষ্ঠা ৬১)

কবিতাগুলো সহজ, সরল, সাবলীল কিন্তু অর্থ গভীর। বিষয় ও ব্যাখ্যায় কবি এমন সব অন্তর্গত ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করেছেন যা আমরা পাঠ করে তৃপ্ত হই। প্রথম কবিতার উদ্বৃতিতে কবির বয়ান লক্ষ্য করার মতো। পৃথিবীতে মানুষ যখন কষ্টের সাগর সাঁতরানো শুরু করে তখন চারপাশে শুধু চাপচাপ দুঃখ বয়ে যায়। সর্ব ইন্দ্রিয় টানটান করে মানুষ খোঁজে শুধু একমুঠো সুখ কিন্তু পায়না। কবি একথা এমন চমৎকার ভাবে উপস্থাপন করেছেন যা দৃষ্টিনন্দন। কবি তাঁর কবিতার শরীরে আরোপিত নয় স্বতঃস্ফূর্ত আরবি ফারসি শব্দের ব্যবহার করেছেন। আসমান, জমিন শব্দগুলো বাংলা নয়। কবিতা নাজিল হওয়ার বিষয়। দুর্বোধ্য শব্দের ব্যবহার কবিতাকে করে জটিল ও দুরারোগ্য ব্যাধির মতো অনীহা। সমাজের কোনো মানুষই চায়না তাঁর কর্কট রোগ হোক। দুর্বোধ্য কবিতা পাঠককে অনীহার যাঁতাকলে পিস্ট করে। পাঠক তখন সেই কবিতার অর্থহীন দেয়ালে হোঁচট খায়।এবং ফিরে যায় অন্য কোনো শিল্পের আঙিনায়। কুশলের “দুঃখের কোনো মাতৃভূমি নেই “.. কাব্য গ্রন্থের কোনো কবিতা কর্কট রোগে আক্রান্ত নয়।

০২.
কবিতা পাঠ করে এর রেশ যখন আচ্ছন্ন করে রাখে কিছু সময় তখন বোঝা যায় কবিতার শক্তি। ভাষার কারুকাজ, ভাষাকে আবিষ্কার করা একজন পাঠক যখন প্রকৃত কবিতার রস ও রসায়ন আবিষ্কার করে ফেলেন তখন অদ্ভুত এক ভালোলাগায় ভরে যায় পাঠকের হৃদয়। অনেক বোদ্ধা সমালোচক, বাংলার অধ্যাপক কবিতা পাঠের আগে নাক শুঁকে শুঁকে ছন্দ খুঁজে বেড়ান। কবিতা চর্চায় ছন্দ অনিবার্য। ছন্দ জানা একান্ত জরুরি। কিন্তু কবির কবিতা কতোটা রসগ্রাহী হলো তা পাঠকের তৃপ্তির ঢেঁকুরে বোঝা যায়৷ সে কারণেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ, আল মাহমুদ পাঠে আমাদের চোখ হয়ে যায় ঢুলুঢুলু। একটা ঘোরলাগা অনুভূতির চুম্বন আমাদের কপালে কে যেন এঁকে দেন প্রতিবার। গদ্য কবিতা নিয়ে একটা উদাহরণ দিতে চাই কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “সাহিত্যের স্বরূপ” গ্রন্থ থেকে। রবীন্দ্রনাথ বলছেন,” আজ গদ্যকাব্যের উপরে প্রমাণের ভার পড়েছে যে,গদ্যেও কাব্যের সঞ্চরণ অসাধ্য নয়। অশ্বারোহী সৈন্যও সৈন্য, আবার পদাতিক সৈন্যও সৈন্য। কোনখানে তাদের মূলগত মিল?? যেখানে লড়াই করে জেতাই তাদের উভয়েরই সাধনার লক্ষ্য। কাব্যের লক্ষ্য হৃদয় জয় করা- পদ্যের ঘোড়ায় চেপেই হোক, আর গদ্যে পা চালিয়েই হোক। সেই উদ্দেশ্য সিদ্ধির সক্ষমতার দ্বারাই তাকে বিচার করতে হবে।হার হলেই হার, তা সে ঘোড়ায় চড়েই হোক আর পায়ে হেঁটেই হোক।ছন্দে লেখা কাব্য হয়নি,তার হাজার প্রমাণ আছে। গদ্যরচনাও কাব্য নাম ধরলে কাব্য হবেনা,তার ভূরি ভূরি প্রমাণ জুটবে। ছন্দের একটা সুবিধা এই যে,ছন্দের স্বতঃই একটা মাধুর্য আছে; আর কিছু না হয় তো সেটাই একটা লাভ।সস্তা সন্দেশে ছানার অংশ নগণ্য হতে পারে কিন্তু অন্তত চিনিটা পাওয়া যায়। পৃষ্ঠা ৩৫।”
আমরা কুশল ভৌমিক এর একটি কবিতা লক্ষ্য করিঃ

“না ফোটা কয়েকটি গোলাপ হাতে আমি সেদিন
অপেক্ষার উত্তেজনায় থরথর করে কাঁপছিলাম
প্রেমিক নয় নিজেকে মনে হচ্ছিল
প্রাচীন রোমের লুপ্তপ্রায় কোনো মন্দিরের পুরোহিত
অর্ঘ্য নিয়ে বসে আছি দেবী দর্শনের বাসনায়।
হুডতোলা রিকশার মগজে গেঁথে যাওয়া সুগন্ধি ছড়াতে ছড়াতে
তুমি এলে, যেন দীর্ঘ খরায় ভোগা মাটি
বৃষ্টির চুম্বনে হলো সিক্ত

সেই প্রথম হাতের ভেতর হাত রেখে
চৌরঙ্গী থেকে মুক্ত মঞ্চের দিকে হেঁটে যাওয়া
সেই প্রথম আমার জীবন্ত নদী দেখা
এখন আমি বুকের জানালা খুললেই দেখতে পারি-
আমার জন্য দাঁড়িয়ে আছে নদী
পাল তোলা নৌকা হয়ে আমি ঘুরে বেড়াই নদীটির বুকে
গলুই -এ বসে গাইতে পারি অফুরন্ত জোছনার ধ্রুপদী সঙ্গীত।
(একুশে নভেম্বর, পৃষ্ঠা ৩১)

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বললেন, কাব্যের লক্ষ্য হৃদয় জয় করা। পদ্যের ঘোড়ায় চড়েই হোক, আর গদ্যে পা চালিয়েই হোক। কুশল ভৌমিকের এই কবিতা হৃদয় জয় করতে সক্ষম। যে কবিতা হৃদয়ের গভীরে পৌঁছে সে কবিতা পাঠক আনন্দ চিত্তে গ্রহণ করে।
“দুঃখের কোনো মাতৃভূমি নেই “… কাব্য গ্রন্থে উনপঞ্চাশ টি কবিতার শরীর গ্রোথিত আছে। তাঁর কবিতার মধ্যে সমাজ মনস্ক ভাবনা, রাজনীতি,স্বদেশ, মৃত্তিকা, দেশপ্রেম বিষয়গুলো বারে বারে এসেছে। পাশাপাশি ঈশ্বর ও মৃত্যুচিন্তা নিয়ে তাঁর কবিতাগুলো নির্ভরতার সঙ্গে পাঠ করা যায়। তাঁর কবিতার শরীরে আমি ছন্দের পোশাক দেখিনি কিন্তু দেখেছি শব্দের বৈভব,মিথ, ঐতিহ্য ও ইতিহাসের অভাবনীয় উল্লাস। দুর্বোধ্যতার মায়াজাল কুশল ভৌমিক তৈরি করেননি। বরং চারপাশের বিষয় আশয়কে জেনে বুঝে কবিতার জন্য উপযুক্ত করেছেন। কবিতা যেহেতু বানিয়ে বানিয়ে লেখার বিষয় না। কবিতা নাজিল হয়। কবি একটা চিন্তার মধ্যে দিয়ে ক্রমাগত সামনের দিকে ঘুরপাক খেতে থাকেন, আর তখনই কবিতার লাইনগুলো মস্তিষ্কের নিউরন বেয়ে নাজিল হয়।

“কিছু মানুষ আছে অজস্র ছায়া নিয়ে ঘুরে বেড়ায়
কিছু মানুষ হাঁটে চলে,আসে- যায় অথচ
কোথাও তাদের ছায়া পড়েনা; কিছু মানুষের
নিজের ছায়া ছাড়া আর কেউ থাকেনা।
জীবন একটা ছায়ার খেলা
মানুষ ও ছায়ার অদ্ভুত লড়াই।
( ছায়া-গণিত, পৃষ্ঠা ৩৮)
কবি মাত্রই বিপ্লবী। বিদ্যমান কাঠামোসমূহে যেখানেই অনাচার ও অসংগতি সেখানেই কবির কলম জেগে ওঠে। পৃথিবীর ইতিহাসে যুগে যুগে এটা দেখা যায়। কবি একটা কলাকৌশলের মাধ্যমে কবিতার ছায়ার মায়ায় লেপ্টে দেন পাঠকের মন ও মস্তিষ্ক।

একজন কবি গভীর মনোযোগ সহকারে যখন একটা পথ নির্মাণের জন্য কাজ করে যান তখন একদিন সফল হোন। কুশল ভৌমিক তাঁর কবিতার রাস্তা নির্মাণে ধ্যান জ্ঞান এবাদতে শামিল হয়েছেন। মত,মন্তব্য, অনুভূতি, উপলব্ধি দিয়ে একদিন মহাসড়ক নির্মাণ করবেন। সেই সড়কের নাম হবে কুশল ভৌমিক রাজপথ। সেই পথ নির্মাণে কুশলের কবিতা ক্রমশ পরিণত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত আকর্ষণীয় ও সুচারু হচ্ছে। কবিতা একটা জীবন চায়। এক জীবন সাধনার পর কবিতা হয়ে ওঠে গণপাঠকের। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ আজকে যেমন গণপাঠকের কবি হয়েছেন। কুশল ভৌমিকের কবিতার গতি প্রকৃতি সে পথেই এগোচ্ছে, এখন শুধু লেগে থাকা। সৃষ্টিশীলতার মধ্যে দিয়ে সমকালীন ভাষার মধ্যে দিয়ে নিজের ভাষা প্রতিষ্ঠা করা। কুশল ভৌমিকের কবিতার রাজপথ সেভাবে স্পষ্ট হয়ে পাঠকের মনোজগতের আমূল পরিবর্তন করুক, শুভ কামনায়।

তৌফিক জহুর
কবি ও সম্পাদক,
উদ্যান

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর

পুরাতন খবর

SatSunMonTueWedThuFri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031   
       
  12345
20212223242526
2728293031  
       
15161718192021
2930     
       
     12
24252627282930
       
2930     
       
    123
       
    123
25262728   
       
     12
31      
   1234
262728    
       
  12345
2728     
       
   1234
       
     12
31      
1234567
891011121314
15161718192021
2930     
       
    123
11121314151617
       
  12345
20212223242526
27282930   
       
      1
2345678
23242526272829
3031     
      1
       
293031    
       
     12
10111213141516
       
  12345
       
2930     
       
    123
18192021222324
25262728293031
       
28293031   
       
      1
16171819202122
30      
   1234
       
14151617181920
282930    
       
     12
31      
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
       
© All rights reserved © MKProtidin.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com