জবি প্রতিনিধি: করোনা পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের জীবনযাত্রা ব্যহত হয়েছে! আয় রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর্থিক সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বন্ধ আছে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। তবে বন্ধ হয়নি বাড়িওয়ালাদের নিয়ম মেনে ভাড়া চাওয়ার রুটিন বাড়ি ভাড়া বা মেস ভাড়া নিয়ে সব থেকে বেশি বিপাকে পড়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কারণ অনাবাসিক এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের থাকতে হয় মেস ভাড়া করে। তাদের অধিকাংশই সেই খরচ যোগান টিউশন করিয়ে। একদিকে পরিবারের আয় রোজাগারের পথ বন্ধ হওয়া অপরদিকে টিউশনও বন্ধ থাকায় মেস ভাড়া নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন জবি শিক্ষার্থীরা!
অন্যদিকে অনেক শিক্ষার্থী আটকা পড়েছেন ঢাকায়। সাথে দেখা দিয়েছে খাবারের সংকট। তবে এই শিক্ষার্থীদের জন্যে এগিয়ে এসেছেন একদল যুবক। তারা কারো বাসায় খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন, কাউকে বিকাশে আর্থিক সহায়তা পাঠাচ্ছেন, কাউকে বা দেশের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ারও ব্যবস্থা করেছেন। ইতোমধ্যে ৪ লাখের বেশি টাকা উপহার হিসেবে পাঠানো হয়েছে। তবে এর পাশাপাশি তারা মেস ভাড়ার সমাধানের জন্য চার দফা দাবিও তুলে ধরেছেন।
ইতোমধ্যে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে ৷ জবিয়ানদের অধিকার নিয়ে কথা বলার অন্যতম অনলাইন প্লাটফর্ম “আমরা জকসু চাই” এবং “করোনা মোকাবেলায় জবিয়ানের পাশে জবিয়ান” নামক ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা। এ বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্যে দীর্ঘদিন ধরে সোচ্চার মাহমুদুল হাসান মিশু বলেন, আমরা যে চার দফা দাবি জানিয়েছি তা অত্যন্ত যৌক্তিক। সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমরা অনুরোধ করবো শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্যে। সরকার চাইলেই গ্যাসবিল, বিদ্যুৎ বিল, পানি বিল মওকুফ করে বাড়ি ভাড়া কমিয়ে আনার পথকে আরো সহজ করতে পারেন।
চার দফা দাবি গুলো হলোঃ
১. মেস ভাড়ার কমপক্ষে অর্ধেক মওকুফ করতে হবে সরকারকে।
২. সেমিস্টার ফিসহ অন্যান্য ফি মওকুফ করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে।
৩. পহেলা বৈশাখের বরাদ্দের সাথে আরো টাকা যোগ করে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের তা প্রদান করতে হবে।
৪. ক্যাম্পাস খোলার এক সপ্তাহের মধ্যেই ছাত্রীহল চালু করতে হবে এবং এবিষয়ে কোনো ছাড় নয়।
চার দফা দাবির বিষয়ে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী রাইসুল ইসলাম নয়ন বলেন, আমরা জবিয়ানরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে এগিয়ে এসেছি আমাদের দায়বদ্ধতা থেকে। আমরা চাই প্রশাসনও তাদের দায়বদ্ধতার বিষয়ে সচেতন হবেন। আমাদের যৌক্তিক ৪ দফা দাবি মেনে নিতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। যেহেতু কর্তৃপক্ষ হল সুবিধা দিতে ব্যর্থ সেহেতু মেসভাড়ার সমাধান ওনাদেরই করতে হবে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করা তৌসিব মাহমুদ সোহান বলেন, যেহেতু প্রশাসন এতবছরেও হল দিতে পারেনি সেহেতু প্রশাসনকেই দায়িত্ব নিতে হবে৷ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে রাজি নই আমরা।
করোনা পরিস্থিতিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অপর এক শিক্ষার্থী কোনিক স্বপ্নীল বলেন, দেশের এই দুঃসময়ে হলহীন জবিয়ানদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য জবি প্রশাসনকে সর্বোচ্চ আহ্বান করা হচ্ছে। জবিয়ানদের নিয়েই তো জবি। তারা যদি আজ ভালো না থাকে তাহলে প্রতিষ্ঠানের সার্থকতা রইল কোথায়? এছাড়া প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশেও দাঁড়িয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। করোনা পরিস্থিতিতে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকদেরকে আরো বেশি মানবিক হওয়ার আহবান জানিয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদের জবি শাখার সাধারণ সম্পাদক আবু বকর খান বলেন,করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটা সেমিষ্টারের ফি মওকুফ করা হোক। তিনি আরো বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেকোন যৌক্তিক দাবিতে সোচ্চার থাকবো।