রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৩ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম:
‘‘কোনো নিরীহ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না নয়’’-আইজিপি গাজীপুরের সফিপুরে সৌদি আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ওয়ামির উদ্যোগে দৃষ্টিনন্দন মসজিদ কমপ্লেক্স উদ্বোধন কালিগঞ্জে ইকরা তা’লীমুল কুরআন নূরানী মাদ্রাসায় সুধী ও অভিভাবক সমাবেশ অনুষ্ঠিত কালিগঞ্জে র‍্যাবের অভিযানে ৩৪৭বোতল ফেন্সিডিলসহ দুই মাদক ব্যবসায়ী আটক সংস্কারের আগে নির্বাচন করলে কখনোই সংস্কার হবে না: সংস্কার কমিশন সদস্য তোফায়েল আহমেদ বাংলাদেশের সকল সম্প্রদায়ের সাথে আমাদের সংযোগ বাড়াতে চাই-পার্বত্য উপদেষ্টা সকল টেলিভিশন চ্যানেল ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ‘জুলাই অনির্বাণ’-শীর্ষক ভিডিওচিত্র প্রচারের উদ্যোগ আ.লীগ নিজেরাই নিজেদের পতন ডেকে এনেছে : জামায়াত আমির ব্রেক ফেল হয়ে প্ল্যাটফর্ম থেকে ২ কিঃমিঃ দূরে গিয়ে থামলো ট্রেন গণমাধ্যমের অংশীজনের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে মতবিনিময় সভা আয়োজনসহ কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ

মাননীয় অর্থমন্ত্রী সমীপেষু: তামাক কর বাড়ান, তরুণদের বাঁচান – ইকবাল মাসুদ

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৩১ মে, ২০২০, ১.২৮ এএম
  • ৪৯৮ বার পঠিত

মাননীয় অর্থমন্ত্রী তামাক এমন একটি পণ্য, যার ব্যবহারে মানুষের রোগ আর মৃত্যু ছাড়া কোনো উপকার হয় না। তাই তামাক বিশ্বব্যাপি মৃত্যুর পণ্য হিসেবে পরিচিত এবং তামাক কোম্পানি মৃত্যু বিপনণকারী বা মৃত্যু দূত এবিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। বিশ্বে সকল গবেষণা, তথ্য উপাত্য সব কিছু সাক্ষ্য দেয়, রোগ, মৃত্যু, অর্থনৈতিক ক্ষতি, পরিবেশের ক্ষতি, তামাক চোরাচালন, অর্থ চোরাচালান, অনৈতিকতা সবকিছুতে তামাক ও তামাক কোম্পানির সম্পৃক্ততা আছে। তার পরেও এই পণ্য উৎপাদন ও বিপনণ হচ্ছে এবং রমরমা ব্যবসা করছে।

মাননীয় অর্থমন্ত্রী আপনি জানেন, তামাক কোম্পানি গুলোর মুল টার্গেট শিশু, কিশোর ছাড়াও তরুণ সমাজকে তামাক ও ধূমপানে আসক্ত করার পাশপাশি ভবিষ্যত প্রজন্মকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে থাকে। টোব্যাকো এটলাস-২০১৮ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর তামাকজনিত রোগে এক লাখ ৬০ হাজার ২০০ জন মানুষের মৃত্যু ঘটে। আর তাই এবছরের বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের প্রতিপাদ্য ‘তামাক কোম্পানীর কূটচাল রুখে দাও, তামাক ও নিকোটিন থেকে তরুণদের বাঁচাও’। এবছর বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উদযাপনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে তামাক কোম্পনির মুখোশ উন্মোচন করা এবং সব ধরনের তামাকপণ্য থেকে যুব সমাজের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। এই দিবসটি তামাক ব্যবহারের বিরুদ্ধে সরকারের সকল মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ তৈরি করে দেয়া।

মাননীয় অর্থমন্ত্রী আপনাকে অবহিত করছি যে, বাংলাদেশ বিশ্বে উচ্চ তামাক ব্যবহারকারী একটি দেশ, এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় দেশে তামাক পণ্য খুব সস্তা বলেও ‘কুখ্যাতি’ আছে। আপনি কি জানেন এর পেছনে কাদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশী? জি, আপনারই অধিনস্ত মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের। এর নাকি তামাক কোম্পানির প্রেসক্রিপশন ফলো করে বাজেট তামাক কর নির্ধারণে সুপারিশ করে। জাতীয় স্বার্থ না দেখে, জন মানুষের কথা না ভেবে কেন এরা তামাক কোম্পানির সুরে কথা বলে, এক বারও কি তা ভেবে দেখেছেন?

মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় আপনার সমীপে কয়েকটি তথ্য তুলে ধরতে চাই। দেশের এক জরিপের দেখা যায় শতকরা ৯০.৬ ভাগ স্কুল ও খেলার মাঠের ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্য প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। আবার শতকরা ৬৪.১৯ ভাগ দোকানে ক্যান্ডি, চকলেট এবং খেলনার পাশে তামাকজাত দ্রব্য রেখে বিক্রি করতে দেখা যায়। শতকরা ৮২.১৭ ভাগ দোকানে তামাকের বিজ্ঞাপন এবং শিশুদের দৃষ্টি সীমানার মধ্যে শতকরা ৮১.৮৭ ভাগ দোকানে তামাকজাত দ্রব্যের প্রদর্শন হয় বলে ঐ জরিপে উঠে আসে। তামাক কোম্পানি গুলো কুকৌশলে তামাক শিশু ও যুবকদের সামনে তুলে ধরে। এর মূল কারণ তাদের ব্যবসার প্রসার ঘটানো।

মাননীয় মন্ত্রী আপনারাতো কোন খাতে কত কর বৃদ্ধি করবেন তার কৌশল খোঁজেন। এবার বাজেটে আরো বেশী করে খুঁজবেন কারন করোনা অর্থনীতিকে করুনা করেনি। তাই শুধু আমাদের দেশ নয় বিশ্ব নগদ অর্থ খুঁজছে, জনগণের বিশ্বাস আপনিও হন্ত-দন্ত হয়ে খুঁজছেন, যাকে গ্রাম্য ভাষায় বলে ‘হারিকেন দিয়ে খোঁজা’। হারিকেনের আলোয় খুঁজে না পেলেও দেখেন না দিনে আলোয় খুঁজে কিছু পান কিনা। বিশেষজ্ঞরা বলছে বেশী খোঁজা খুঁজির দরকার নেই, তারা বলছে তামাক খাতে একটু কর বাড়ালে অতিরিক্ত দশ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় সম্ভব। এসব দেখা না দেখা আপনার ইচ্ছ। ইচ্ছা কতটুকু করবেন সেটাই জনগণ প্রশ্ন করে। আপনাদের কাছে জনদাবী কতটুকু পৌছায় সেটা তো আমরা জানিনা কারন কথায় আছে মন্ত্রীরা নাকি সব সময় ‘ইয়াজিদ ঘেরা’ হয়ে থাকেন। তাই তামাক কোম্পানির দোসর দের পেরিয়ে সেখানে জনস্বাস্থ্যের দাবী পৌছানের আশা ক্ষীন। তার পরেও জনগণ বলবে, তামাকখাত থেকে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব পায় তামাক ব্যবহারের কারণে অসুস্থ রোগীর চিকিৎসায় সরকারকে স্বাস্থ্যখাতে তার দ্বিগুণ ব্যয় করতে হয়।

আপনার সহকর্মী মাননীয় শিল্প মন্ত্রী করোনাকালে তামাকের ব্যবসা প্রসারের যথেষ্ট সুযোগ করে দিয়েছে। ওনার তৎকালীন সচিব সাহেব ব্রিটিশ আমেরিকান কোম্পানির পরিচালনা বোর্ডেও সদস্য, বর্তমান সচিবও তাই। ওনাদের দ¦ারাই তো আপনারা ঘেরাও হয়ে থাকেন। তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, তামাক নিয়ন্ত্রণ করতে হলে তামাক কোম্পানির মুখোষ উন্মোচন করা জরুরী। জনগণ আর একটু যোগ করে বলছে, তা হলো তামাক কোম্পানির সহোযোগীদেরও মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। যাতে জনগণ এই জনস্বাস্থ্যের এই অশুভ শক্তিকে চিহ্নিত করতে পারে।

আপনাদের আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতা আছে, বাংলাদেশ যেহেতু আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি এফসিটিসি স্বাক্ষর ও অনুস্বাক্ষর করেছে তাই এফসিটিসি ও এর আর্টিকেল ৫.৩ ও অন্যান্য আর্টিকেলসমূহ প্রতিপালন করা সরকারের দায়িত্ব। এফসিটিসির আর্টিকেল ৫.৩- তে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে তামাক কোম্পানির প্রভাবমুক্ত রাখার বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। সরকারের দায়িত্ব মানে কিন্তু দায়িত্ব আপনারও দায়িত্ব। আপনাকে শুধু অর্থের কথা ভাবলে হবে না জনস্বাস্থ্যর কথাও ভাবতে হবে। কারন আপনি জনগণের মন্ত্রী।

আপনি মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রীর কাছে একটু শুনে দেখুন, এদেশে তামাকের ব্যবহার ও অন্যান্য কারনে অসংক্রামক রোগের প্রকোপও দিন দিন বেড়ে চলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে হৃদরোগে কারনে মৃত্যুর ৩০ শতাংশের, ক্যান্সারে মৃত্যুর ৩৮ শতাংশের, ফুসফুসে যক্ষার কারণে মৃত্যুর ৩৫ শতাংশের এবং অন্যান্য শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগে মৃত্যুর ২০ শতাংশের জন্য ধূমপান দায়ী। স্বাস্থ্য মন্ত্রী আরো বলবেন, গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। বাংলাদেশে তামাকপণ্য খুবই সহজলভ্য হওয়ায় তামাকের ব্যবহার কাক্ষিত মাত্রায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কমছে না এবং তামাকজনিত মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতি বেড়েই চলছে।

তাই সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে অঙ্গিকার করেছেন ‘সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করা হবে’। তাই মননীয় অর্থমন্ত্রী, তামাকের দাম বেশি হলে তরুণ জনগোষ্ঠী তামাক ব্যবহার শুরু করতে নিরৎসাহিত হয় এবং বর্তমান ব্যবহারকারীরাও তামাক ছাড়তে উৎসাহিত হবে। আপনি জানেন যে, বাংলাদেশে মোট জনগোষ্ঠির ৪৯ শতাংশই তরুণ। এই বিশাল তরুণ সমাজকে তামাকমুক্ত রাখার জন্য সকল তামাকপণ্যের কর ও দাম বাড়িয়ে তরুণদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যেতে হবে। অন্যদিকে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রæত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জন করতে হলে এখন থেকেই তামাকের ব্যবহার দ্রæতহারে কমাতে হবে এবং এক্ষেত্রে উচ্চ করারোপের মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার ২৮.৪ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে।

মাননীয় অর্থমন্ত্রী পরিশেষে জনগণ বলতে চায়, তামাক জনিত ক্ষয়ক্ষতি ও মৃত্যুর হার কমানোর জন্য যে কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে তা বাস্তবায়ন করা জরুরী। এক্ষেত্রে সাধারণ ভাবে যা দেখা যায় তাহলো তামাক কোম্পানিগুলো অনেক সময় নীতিনির্ধারকদের আনুকল্য পেয়ে আসছে। যা সুস্পষ্ট ভাবে আইন বাস্তবায়নে দুর্বলতাকে প্রকট করে তুলছে। একদিকে তামাক কোম্পানির বেপরোয়া মনোভাব, তামাকপণ্যের সহজলভ্যতা, নারী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠির জন্য বিশেষ কর্মকৌশল না থাকা এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ জাতীয় নীতি প্রণয়ন না করা ইত্যাদি বিষয় গুলো তামাকের কার্যকর নিয়ন্ত্রণকে ব্যাহত করেছে। এমতাবস্থায়, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও অর্থনীতির উপর তামাকের নেতিবাচক প্রভাবের কথা বিবেচনা করে বিদ্যমান আইনের সঠিক বাস্তবায়ন এবং সকল পর্যায়ে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপে বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। মাননীয় অর্থমন্ত্রী বিষয়গুলো ভেবে দেখবেন।

লেখক: ইকবাল মাসুদ
পরিচালক, স্বাস্থ্য সেক্টর, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, ইন্টারন্যশনাল সার্টিফাইড এ্যডিকশন প্রফেশনাল, সদস্য, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্স, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, সদস্য, জাতীয় মাদক বিরোধী কমিটি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবস ২০২০ উপলক্ষে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনhttps://youtu.be/x4bfB-qxdbo

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর

পুরাতন খবর

SatSunMonTueWedThuFri
      1
23242526272829
30      
  12345
20212223242526
2728293031  
       
15161718192021
2930     
       
     12
24252627282930
       
2930     
       
    123
       
    123
25262728   
       
     12
31      
   1234
262728    
       
  12345
2728     
       
   1234
       
     12
31      
1234567
891011121314
15161718192021
2930     
       
    123
11121314151617
       
  12345
20212223242526
27282930   
       
      1
2345678
23242526272829
3031     
      1
       
293031    
       
     12
10111213141516
       
  12345
       
2930     
       
    123
18192021222324
25262728293031
       
28293031   
       
      1
16171819202122
30      
   1234
       
14151617181920
282930    
       
     12
31      
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
       
© All rights reserved © MKProtidin.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com