মো. দরবেশ আলী ছিলেন একজন কিংবদন্তি শিক্ষক। অসামান্য প্রতিভাধর এই শিক্ষক তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম, মেধা, কর্মদক্ষতা, সততা ও একনিষ্ঠতার মাধ্যমে সাতক্ষীরার নলতাকে শিক্ষার তীর্থভূমিতে পরিণত করেন। তাঁর পরশে নলতা হাই স্কুল দেশের শ্রেষ্ঠ স্কুলের খ্যাতি অর্জন করে। তিনি দীর্ঘ ৩৯ বছর ঐতিহ্যবাহী নলতা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ও রেক্টরের দায়িত্ব পালন করেন। একজন গৌরবদীপ্ত আদর্শ শিক্ষক হিসেবে তিনি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছে যুগের পর যুগ অনস্মরণীয় থাকবেন।
জেনে রাখা ভালো-
★১৯২৩ সালের ১ আগস্ট কালিগঞ্জ উপজেলার বসন্তপুর গ্রামে মো. দরবেশ আলী জন্মগ্রহণ করেন।
★১৯৪০ সালে বসন্তপুরেরর মধ্য ইংরেজি স্কুল ম্যাট্রিক পাশ করেন।
★১৯৪২ সালে বাগেরহাট পিসি কলেজ থেকে আই.এ পাশ করেন।
★১৯৪৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন পিসি কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেন।
★১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বি.এড পাশ করেন।
★১৯৫০ সালের ২৫ জুলাই ৮০ টাকা বেতনে নলতা হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
★১৯৬৮ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসে দেশের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে গ্রহণ করেন সর্বোচ্চ আসামরিক রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ‘তমঘা-ই-খিদমত’ পুরস্কার।
★১৯৮৩ সালে তিনি নলতা হাইস্কুল থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
তাঁর সময়ে প্রতিবছর ম্যাট্রিক পরীক্ষার ফলাফল মানে নলতা হাই স্কুলের জয়জয়কার। কাগজের শিরোনামে নলতা হাইস্কুল, বেতারের উচ্চারণে নলতা হাইস্কুল। প্রতিবছরই বোর্ডস্ট্যান্ড, কোন কোন বছর বিভিন্ন বিভাগে বোর্ডে প্রথম, আবার কোন বছর সারা বাংলাদেশেই প্রথম স্ট্যান্ড করতো নলতা হাই স্কুলের ছাত্র। এসব সফলতার পিছনে ছিল একজন দরবেশ স্যারের কঠোর পরিশ্রম, নিত্য সত্য-সাধনা। স্কুলই ছিল তাঁর ধ্যান-জ্ঞান-সাধনা-স্বপ্ন। শিক্ষার্থীদের মানুষ করতে তাঁর নিরন্তর পরিশ্রম। স্কুলে তিনি কঠোর প্রশাসক, ক্লাসে তিনি প্রাণবন্ত শিক্ষক, প্রাণপ্রিয় ছাত্রদের প্রয়োজনে-কষ্টে তিনি কোমলপ্রাণ পিতা, তাদের অসাধারণ ফলাফলে তিনি গর্বিত অভিভাবক।
শিক্ষা, শিক্ষাদান পদ্ধতি, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক ইত্যাদি নিয়ে তাঁর ভাবনা ছিল অভিনব। ‘একজন শিক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্য’ শীর্ষক প্রবন্ধে দরবেশ আলী লিখেছেন- ‘মানুষের মধ্যে যে সম্ভাবনা প্রথম হতেই বিদ্যমান তারই পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের নাম শিক্ষা। ছাত্রের সুপ্ত ধীশক্তি এবং প্রতিভা পরিস্ফুটনের কাজই শিক্ষকের কাজ।’ একই প্রবন্ধে আরও লিখেছেন-‘শিক্ষকতা একটি পবিত্র পেশা। সাধারণ পেশার অতিরিক্ত এখানে কিছু আছে। অন্য পেশা নিষ্প্রাণ কাগজ, ফাইল আর যন্ত্রপাতি সর্বস্ব। কিন্তু শিক্ষকতা জীবন্ত মানুষকে নিয়ে, কোমলমতি জ্ঞান-পিপাসু ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে। এখানে হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের সম্পর্ক স্থাপিত হয়। তাই শিক্ষকের দায়িত্ব যেমন মহান তেমনি গুরুত্বপূর্ণ।’
১৯৯৫ সালের ১৯ জুলাই তিনি ইন্তেকাল করেন। নলতা শরীফে তিনি আজও শিক্ষকদের শিক্ষক, হেডস্যারদের হেডস্যার। একজন গৌরবদীপ্ত আদর্শ শিক্ষক হিসেবে আনাগত কাল ধরে মানুষের মাঝে তিনি বেঁচে থাকবেন। তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।
মো. মনিরুল ইসলাম
পরিচালক
খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা ইনস্টিটিউট