সরকারকে দেশের সকল অনলাইন গণমাধ্যমগুলোকে শিল্পে পরিণত করা উচিত। তথ্য মন্ত্রণালয় এ ধরনের উদ্যোগ নিলে সম্ভাবণাময় অনলাইন গণমাধ্যম শিল্পটি বেঁচে থাকবে, নতুবা এই শিল্পে দ্রুত পচণ ধরে নিস্তেজ হয়ে যাবে।
ইতিমধ্যে কিছু প্রিন্টিং মিডিয়া এবং টিভি চ্যানেলের কেউ কেউ এই অনলাইন মিডিয়া শিল্পকে গোদের ওপর বিষফোঁড়া হিসেবে ট্টিট করছেন। ফলে শিল্পটি বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বেশিদিন টিকে থাকতে পারবে কিনা তা সন্দিহান।
ইতিমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে অনলাইন গণমাধ্যম পরিচালনায় নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছেন। কিছু অনলাইন পত্রিকা এবং আইপি টিভি পরিচালনার জন্য নিবন্ধনেরও আওতায় এনেছেন, যা এই শিল্পের জন্য যথেষ্ট ইতিবাচক।
গত সরকার আমলে তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী আলহাজ্জ আমির হোসেন আমু গণমাধ্যমকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন; কিন্তু আজো তা বাস্তবায়ন হয়নি।
দেশের জাতীয় দূর্যোগে ও সংকটময় মূহুর্তে সম্প্রতি বেড়ে ওঠা অনলাইন গণমাধ্যমই ছিলো একমাত্র ভরসা। যা বৈশ্বিক চলমান করোনাকালে জাতিকে তাৎক্ষনিক সকল সংবাদ পৌঁছে দিয়ে সংকট মোকাবেলায় সহযোগিতা করেছে। যদিও ওই সময়ে শতকরা ৯৫ ভাগ প্রিন্টিং পত্রিকা বন্ধ ছিলো। শিল্পটি সম্প্রসারিত এবং আইনী কাঠামো মজবুত হলে এই পেশার সাথে সংশ্লিষ্টরা বেঁচে থাকার নতুন স্বপ্ন দেখবে। তাই সরকারের উচিত দ্রুত অনলাইন গণমাধ্যমকে শিল্পে রুপান্তরিত করে স্থায়ী ও প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেয়ায় সহযোগিতা করা।
সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা গণমাধ্যমবান্ধব ব্যক্তিত্ব। তাঁর নির্দেশনায় সুযোগ্য তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদের পরিচালনায় গণমাধ্যমে অভূতপূর্ব সফলতা অর্জণ করে চলছে। প্রিন্টিং পত্রিকার পাশাপাশি দ্রুত অনলাইন পত্রিকা এবং আইপি টিভিগুলোকে আইন-নীতিমালার আওতায় আনা সময়ের দাবি।
বিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে ইন্টারনেট, অনলাইন তথ্যপ্রযুক্তির বিকল্প নেই। তাইতো এই সেক্টরটিতে সরকার যুক্ত করেছেন একজন প্রযুক্তিবিদ। তিনি হচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য পুত্র এবং তাঁর আইটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়। মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসান এমপি ও সচিব মিসেস কামরুন্নাহার তাঁদের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
সমগ্র দেশে প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি অনলাইন পত্রিকা ও আইপি টিভি কাজ করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এগুলোর মধ্য থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে তিন হাজারের অধিক পত্রিকা ও আইপি টিভি নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। ইতিমধ্যে অল্পকিছু মিডিয়াকে নিবন্ধনের আওতায় এনেছে সরকার। বাকিগুলো সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমুহের তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে নিবন্ধনের আওতায় আনারও প্রক্রিয়া চলমান। দায়িত্বশীল পত্রিকাগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় এনে দেশোন্নয়নে অংশীদার করা উচিত।
অনলাইন সংবাদভিত্তিক পোর্টালগুলোকে সরকার নিবন্ধনের আওতায় আনতে ২০১৭ সালে খসড়া নীতিমালা অনুমোদন করেছেন। ইন্টারনেট ভিত্তিক সংবাদমাধ্যমে শৃঙ্খলা আনতে এ নীতিমালা সহায়তা করবে। এই নীতিমালা অনুযায়ী অনলাইন মাধ্যমকে প্রস্তাবিত সম্প্রচার কমিশনের কাছ থেকে নিবন্ধন নিতে হবে। তবে কমিশন হওয়ার আগ পর্যন্ত তথ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় দেখাশোনার দায়িত্বে থাকবে।
বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম মনে করে নিবন্ধনের পর সরকারি-বেসরকারী বিজ্ঞাপন বন্টনের জন্যও আলাদা একটি নীতিমালার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। পাশাপাশি অনলাইন সংবাদমাধ্যম ও আইপি টিভি গুলোতে সাংবাদিক নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার একটি মাপকাঠি নির্ধারণেরও গুরুত্ব রয়েছে।
লেখক: আহমেদ আবু জাফর, প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম -বিএমএসএফ,কেন্দ্রিয় কমিটি ০১৭১২৩০৬৫০১, ২৭ অক্টোবর ২০২০।